ধ্বংস: কেটে ফেলা হয়েছে গাছ। নিজস্ব চিত্র।
সুন্দরবনকে বাঁচাতে জরুরি ম্যানগ্রোভের সংরক্ষণ। দীর্ঘ দিন ধরেই এ কথা বলে আসছেন পরিবেশবিদেরা। সুন্দরবনে হোটেল, রিসর্ট বা মাছের ভেড়ি তৈরির জন্য যে ভাবে ম্যানগ্রোভ কাটা হচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা তাঁদের।পরিবেশবিদদের দাবি, আয়লা, বুলবুল, আমপান, ইয়াসের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রতিহত করে সুন্দরবনকে রক্ষা করেছে গরান, গেঁওয়া, বাইন, কেওড়া, সুন্দরী গাছের অরণ্য।
সুন্দরবনে স্থলভাগে আছড়ে পড়ার পরে ঝড়গুলি গতিপথ পরিবর্তন করে এই ম্যানগ্রোভের জন্যই। বুলবুলের সময়ে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল, সাগরদ্বীপে আছড়ে পড়ার পরে বুলবুল উত্তরপূর্ব দিকে এগিয়ে যাবে। সেই নির্ধারিত পথ অনুসরণ করলে কলকাতার পুরোপুরি পূর্ব দিকে চলে আসত বুলবুল। পরিবেশবিদদের অনেকেরই মত, সে সময়ে ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে ধাক্কা খেয়ে গতিপথ পরিবর্তন করে ঝড়। সে কারণে কলকাতায় ঝড়ের তেমন প্রভাব পড়েনি।কিন্তু সেই ম্যানগ্রোভকেই দিনের পর দিন ধ্বংস করে কোথাও মাছের ভেড়ি গড়ে তোলা হচ্ছে, কোথাও নদী তীরবর্তী এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে বড় বড় হোটেল, রিসর্ট। লাগাতার ম্যানগ্রোভ ধ্বংস চলছে গোটা সুন্দরবন জুড়ে। সুন্দরবনের ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা, কুলতলি ব্লকের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে এই ধ্বংসলীলা। প্রশাসন সব কিছু জেনেও কার্যত দর্শক হয়ে আছে বলে অভিযোগ।
পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, “পর্যটনের নাম করে সুন্দরবনকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হচ্ছে। বিঘের পর বিঘে জমির ম্যানগ্রোভের জঙ্গল কেটে তৈরি হচ্ছে হোটেল, রিসর্ট, মেছোভেড়ি। এগুলি কার স্বার্থে হচ্ছে? এমন হতে থাকলে অচিরেই শেষ হয়ে যাবে সুন্দরবন। সুন্দরবনে উন্নয়ন নয়, প্রয়োজন সংরক্ষণ। আর সে জন্য সকলকেই উদ্যোগী হতে হবে। আরও বেশি বেশি করে ম্যানগ্রোভ লাগাতে হবে।”
ম্যানগ্রোভ লাগালেই শুধু হল না, তার রক্ষণাবেক্ষণও জরুরি বলে মত পরিবেশ সচেতন মানুষজনের।গত কয়েক বছরে পর পর ঝড়ের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সুন্দরবনের বেশ কিছু জায়গায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ম্যানগ্রোভ রোপণের কাজ শুরু হয়েছে। আমপান, ইয়াসের পর সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ রোপণের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বছরে পাঁচ কোটি করে ম্যানগ্রোভ রোপণ করার কথা বলা হয়।
সেই মতো কাজও শুরু হয়েছিল। বিভিন্ন প্রান্তে ম্যানগ্রোভের নার্সারি তৈরি হয়েছিল সরকারি উদ্যোগে। প্রথম দু’বছর সেই কাজ জোরকদমে চলে। তবে বর্তমানে সরকারি উদ্যোগে সেই ম্যানগ্রোভ রোপণের কর্মসূচি চোখে পড়ছে না। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রের খবর, একশো দিনের কাজের টাকা থমকে যাওয়ায় ম্যানগ্রোভ রোপণের কাজও ব্যাহত হয়েছে। তবে বেসরকারি কিছু সংস্থা মাঝে মধ্যে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে ম্যানগ্রোভ রোপণের কাজ করছে।এ বছর বাজেটেও ম্যানগ্রোভ লাগানোয় জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পরিবেশবিদদের অনেকের মতে, ম্যানগ্রোভ লাগানোর পাশাপাশি সেগুলির সঠিক পরিচর্যা জরুরি। তবে সব থেকে জরুরি ম্যানগ্রোভ নিধন সম্পূর্ণ বন্ধ করা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy