সাহসিনী: নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন সুদেষ্ণা। নিজস্ব চিত্র
অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়া কিংবা প্রেমের ফাঁদে পড়ে পাচার হয়ে যাওয়া— এ সবই চেনা চিত্র হিঙ্গলগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামে। বাড়ির মেয়েরা স্বনির্ভর হবে, সংসারের হাল ধরবে— এই ভাবনা এখনও তুলনায় অপরিচিত। কিন্তু সুদেষ্ণা বাউলিয়ার মতো হিঙ্গলগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে যখন চেনা স্রোতের বিপরীতে হেঁটে নিজে রোজগেরে হয়ে সংসারের হাল ধরার লড়াইয়ে নামেন, তখন তা আশা জাগায় প্রত্যন্ত গ্রামের আরও অনেক মেয়েদের মনে।
সুদেষ্ণা হিঙ্গলগঞ্জ থানার ৮ নম্বর গ্রামের বাসিন্দা। হিঙ্গলগঞ্জ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। বাবা রবি বাউলিয়া ইটভাটা শ্রমিক। মা সুচিত্রা দিনমজুরের কাজ করেন। অভাবের সংসারে বছর একুশের সুদেষ্ণাই বাড়ির বড় মেয়ে।
কনকনগর এসডি ইনস্টিটিউশনে পড়াশোনা করেছেন সুদেষ্ণা। জানালেন, স্কুলজীবন থেকেই প্রধান শিক্ষক পুলক রায়চৌধুরী পড়ুয়াদের বোঝাতেন, বিয়ে সকলেই করতে পারে। কিন্তু স্বনির্ভর হতে সকলে পারে না। আগে স্বনির্ভর হও, তারপরে বিয়ে। সুদেষ্ণা জানায় প্রধান শিক্ষকের এই কথা গভীর প্রভাব ফেলেছিল মনে। ২০১৭ সালে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পরে কন্যাশ্রীর যে ২৫ হাজার টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকেছিল, তা দিয়ে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। একাদশ শ্রেণিতে পড়তে পড়তে পাশের গ্রাম সান্ডেলেরবিল রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমে গিয়ে জানতে চান, স্বনির্ভর হওয়ার জন্য কোন ধরনের প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। তাঁদের পরামর্শে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়তে পড়তে সুদেষ্ণা মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। প্রশিক্ষণ শেষে চাষ করে লাভের মুখও দেখেন। কিন্তু সারা বছরের রোজগারের জন্য তা যথেষ্ট ছিল না। তাই আরও কিছু শেখার পরিকল্পনা।
সে সময়ে সুদেষ্ণার ঠাকুমার ব্রেন স্ট্রোক হয়েছিল। শরীরের একটা অংশে পক্ষাঘাত হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো বাড়িতে ফিজিওথেরাপি শুরু হয়। ফিজিওথেরাপি শেখার জন্য উৎসাহ তৈরি হয় কিশোরী-মনে। ওই ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শেই বই কিনে শেখার চেষ্টা শুরু করেন সুদেষ্ণা। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন রোগীকে ফিজিওথেরাপি করে অনেকটা সুস্থও করেছেন বলে জানালেন। সে জন্য মিলেছে পারিশ্রমিক। কাজটা ভালবেসে ফেলেছেন তরুণী। সে কথা জেনে পুলক তাঁকে সরকারি ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে উদ্যোগ করেছেন। সুদেষ্ণা বলেন, ‘‘স্যার বার বার মেয়েদের স্বনির্ভর হওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলতেন। আমিও বুঝতে পারছি, মেয়েদের জন্য সেটা কতটা জরুরি। চেষ্টা করছি, স্বনির্ভর হয়ে সংসারের হাল ধরতে।’’ সুদেষ্ণার কথায়, ‘‘কন্যাশ্রীর ২৫ হাজার টাকা বিয়ের গয়না তৈরির জন্য নয়। বরং নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য সেটা খরচ করতে চাই।’’ মেয়ের কথা বলতে গিয়ে উচ্ছ্বসিত বাবা। বললেন, ‘‘ওর জন্য আমি গর্বিত।’’
পুলকের কথায়, ‘‘সুদেষ্ণার মতো কিছু ছাত্রীর মনে আমরা স্বনির্ভর হওয়ার বীজ বপন করে দিতে পেরে খুশি। হিঙ্গলগঞ্জের মতো প্রত্যন্ত গ্রামের সব ছাত্রীকে স্বনির্ভর হতে উৎসাহিত করাটা খুব জরুরি। সুদেষ্ণার মানসিকতাকে আমরা আরও ছাত্রীদের সামনে তুলে ধরব। হিঙ্গলগঞ্জে ওর মতো এমন মেয়ে আরও দরকার।’’ প্রধান শিক্ষক মনে করেন, মেয়েদের স্বনির্ভর হয়ে ওঠার স্বপ্নের মধ্যেই কন্যাশ্রী প্রকল্পের যথার্থ রূপায়ণ লুকিয়ে আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy