বসিরহাটে ছাত্রছাত্রীদের ভিড়ে রিভলবার উঁচিয়ে সাদা পোশাকের পুলিশ।
টেট পরীক্ষার ফর্ম নেওয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের সংঘর্ষ বাধল বসিরহাটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত পুলিশকে রিভলবার বার করতে হয়। লাঠিও চালানো হয় বলে অভিযোগ। যদিও দু’টি ঘটনাই মানতে চায়নি পুলিশ। বসিরহাটের আইসি গৌতম মিত্র জানান, হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক আর ফর্ম দেওয়ার কাউন্টার মাত্র একটি। তাই গণ্ডগোলের আশঙ্কায় সকাল থেকে পুলিশি ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। বিকেলে ফর্ম দেওয়া বন্ধের পরেও কয়েক হাজার ছেলেমেয়ে ফর্মের দাবিতে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তখন বাধ্য হয়ে তাদের কাউন্টারের সামনে থেকে সরিয়ে দিতে হয়। গৌতমবাবু জানান, শুক্রবার থেকে যাতে আরও কয়েকটি কাউন্টার থেকে ফর্ম বিলির ব্যবসা করা যায়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে।’’
বুধবার থেকে বসিরহাট শহরের জামরুলতলার কাছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা থেকে টেট পরীক্ষার ফর্ম দেওয়া হচ্ছে। লাইনে দাঁড়ানো ছেলেমেয়েদের সংখ্যাটা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। পুলিশ এবং ব্যাঙ্ক কর্মীদের সঙ্গে ছেলেমেয়েদের এক দফা হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি হয়। সে সময়ে ব্যাঙ্কের গেটে তালা ঝুলিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। দিনভর লাইন সামলানো নিয়ে মাঝে মধ্যেই বচসা বাধে। ১০-১৫ জন পুলিশ কর্মী পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছিলেন।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে নাগাদ ফর্ম দেওয়া বন্ধ হলে উত্তেজনা ছড়ায়। তখনও অনেকে ফর্ম না পেয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে। অনেকেই ভোর থাকতে লাইন দিয়েছেন। অনেকে ব্যাঙ্কের গেট ধরে টানাটানি করছে দেখে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে বচসা। সে সময়ে কাউন্টারের গেটের কাছে সাদা পোশাকে থাকা এক পুলিশকর্মীকে ছেলেমেয়েরা ঘিরে ধরে টানাটানি, ধাক্কাধাক্কি করতে শুরু করে বলে অভিযোগ। ওই পুলিশ কর্মী পকেট থেকে রিভলবার বের করে হুমকি দেন। এতে পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে পড়ে। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে বেপরোয়া ভাবে লাঠি চালায় বলে অভিযোগ।
পার হাসনাবাদ থেকে আসা স্বপন মাইতি, কাকলি মণ্ডলরা বলেন, ‘‘ভোর ৪টের সময়ে উঠে ৬টায় এখানে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। তা-ও ফর্ম পেলাম না। উল্টে পুলিশের লাঠির ঘায়ে আমাদের একজনের কপাল ফেটেছে। অন্য জনের ঠোঁট কেটেছে।’’
শহরের মধ্যে এমনিতেই যানজট লেগে থাকে। তার উপরে বৃহস্পতিবার হাটের দিন হওয়ায় বাড়তি ভিড় ছিল। এ দিন ছেলেমেয়েদের লাইনের জন্য যানজট বাড়ে। একটি মাত্র কাউন্টার থেকে ফর্ম দেওয়া হচ্ছে কেন, সে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
বনগাঁ মহকুমার বাগদার বিশ্বজিৎ মণ্ডল এবং তসলিমা মণ্ডল ভোর ৪টের সময়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন টেটের ফর্ম তুলবেন বলে। গাড়ি ভাড়া করে ২৪ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সকাল ৬টার মধ্যে বনগাঁ শহরের বাটার মোড়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের সামনে এসে ফর্ম তোলার লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। বেলা ২টোর সময়েও দেখা গেল লাইনেই দাঁড়িয়েই।
বৃহস্পতিবার বনগাঁ মহকুমার বাগদা, গাইঘাটা, নহাটা, গোপালনগর, এমনকী হাবরার মছলন্দপুরের মতো দূর-দূরান্ত এলাকা থেকেও ছেলেমেয়েরা ভোররাত থেকে বনগাঁ শহরের ওই ব্যাঙ্কের সামনে লাইন দিয়েছিলেন।
গোটা বনগাঁ মহকুমার ওই একটি মাত্র ব্যাঙ্কেই টেটের ফর্ম বিলি করা হচ্ছে। ব্যাঙ্ক থেকে লাইন নীচে যশোর রোডের প্রায় আধ কিলোমিটার পর্যন্ত চলে আসে। যার জেরে শহরের বাটারমোড় এলাকায় যশোর রোডে যানজট তৈরি হয়। তারই মধ্যে দুপুরে শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। যাঁরা ছাতা নিয়ে এসেছিলেন, তারা লাইনে দাঁড়িয়ে কোনও রকমে মাথাটা বাঁচিয়েছেন। আর যাঁরা সঙ্গে ছাতা রাখার দূরদর্শীতা দেখাননি, তাঁরা লাইন ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার সাহস পাননি। একবার লাইন ছেড়ে বেরোলে আদৌ আর ফর্ম তোলা যাবে কিনা, সেই সংশয় ছিল। ফলে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়েছেন অসংখ্য মানুষ।
লাইনে বিশৃঙ্খলাও দেখা দিয়েছে। ধাক্কাধাক্কি, বচসা সবই চলেছে। শহরের বাসিন্দাদের কেউ কেউ কার্যত ‘দাগাগিরি’ দেখিয়ে লাইনে ইচ্ছে মতো জায়গা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। পিছন থেকে প্রতিবাদ এলেই বেধে যাচ্ছে গোলমাল।
ঝিলিক বিশ্বাস নামে এক তরুণী ভোর ৫টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। বেলা আড়াইটে নাগাদ ফর্ম পেলেন। গঙ্গানন্দপুর থেকে আসা সঞ্জিৎ দাস সকাল ৭টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে। বলছিলেন, ‘‘ধাক্কাধাক্কি খেয়ে রীতিমতো লড়াই করে দাঁড়িয়ে রয়েছি।’’ গাঁড়াপোতা থেকে এসে সকাল ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও দুপুর আড়াই পর্যন্ত ফর্ম হাতে পাননি শম্পা বিশ্বাস। তিনি বললেন, ‘‘বাগদা, হেলেঞ্চা বা আমাদের বাড়ির কাছাকাছি যদি ওই ব্যাঙ্কের শাখা অফিসে ফর্ম দেওয়ার ব্যবস্থা করা হতো, তা হলে আমাদের এমন দুর্ভোগে পড়তে হতো না।’’
লাইনে দাঁড়ানো ছেলেমেয়েদের অনেকে আবার অভিযোগ করলেন, ‘‘পার্টির ছেলের সঙ্গে যাঁদের সুসম্পর্ক আছে, তাঁরা অনেকে ভিতর থেকে ফর্ম পেয়ে যাচ্ছেন।’’ এমনও অভিযোগ, স্থানীয় কোনও কোনও যুবককে হাতে বেশি কিছু টাকা ধরিয়ে দিলে তারা ভিতর থেকে দ্রুত ফর্ম নিয়ে আসছে।
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁদের দাবি, নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই ফর্ম বিলি এবং জমা নেওয়া হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে ফর্ম তোলার সুবিধা পাচ্ছে কেউ, এমন অভিযোগ মানতে চায়নি পুলিশও।
কাকদ্বীপেও টেটের ফর্ম তুলতে ব্যাঙ্কের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখা গেল। বিকেল ৫টা পর্যন্ত লাইন শেষ না হওয়ায় বেশ কিছু কুপন দেওয়া হয়েছে। কুপন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফর্ম দেওয়া চলবে বলে জানা গিয়েছে।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy