মাস্কহীন যাতায়াত। বনগাঁর রাস্তায়।
সংক্রমণের মাত্রা বাড়ছে। সচেতনতা বাড়ছে না সে তুলনায়। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে বিধিনিষেধ কড়া করার কথা ভাবছে স্থানীয় প্রশাসন। ব্যবসায়ী সমিতিগুলিরও সায় মিলছে অনেক জায়গায়।
করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় সেঞ্চুরি করেছে বনগাঁ মহকুমা। পরিযায়ী শ্রমিকেরা এলাকায় ফিরতে শুরু করার পর থেকেই মহকুমা জুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছিল। এখন পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরছেন খুবই কম। তারপরেও প্রায় রোজই কেউ না কেউ করোনা পজ়িটিভ হচ্ছেন। সম্প্রতি যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ আছে বলে প্রশাসনের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন।
তবে এখনও সচেতনতার অভাব আছে। অনেকেই মাস্ক ছাড়া বাজারহাটে যাতায়াত করছেন। মাস্ক ছাড়াই ক্রেতা-বিক্রেতারা আনাজ, মাছ, মাংস বেচাকেনা করছেন। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। চায়ের দোকান, বাজার এলাকায়, সড়কের পাশে গুলতানি চলছে। ভ্যান, টোটো, অটো-সহ যানবাহনে বেশি যাত্রী তোলা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। মহকুমার সচেতন মানুষের অভিযোগ, মাস্ক না পরার বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসন কড়া ভাবে নজরদারি করছে না। আরও বেশি করে লালারস পরীক্ষাও দাবি আছে।
প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত মহকুমা মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১১৫ জন। সব থেকে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন গাইঘাটা ব্লকে। এখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৬ জন। সোমবারই ব্লকে এক বিএসএফ জওয়ান সহ-দু’জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুজন গায়েন। বনগাঁ ব্লকে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮ জন। সোমবার দমকল বিভাগের এক অফিসার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বনগাঁ ব্লকের কালুপুর পঞ্চায়েত এলাকায় মঙ্গলবার থেকে ৭ দিনের জন্য বাজারহাট বন্ধ রাখা হয়েছে।
মহকুমা জুড়ে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া নিয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘‘মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, তা প্রশাসনকে কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি মানুষের মধ্যে বেশি করে করোনা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে প্রশাসনকে। যথেষ্ট পরিমাণে লালারস পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করতে হবে।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, এখন লালারস পরীক্ষা বাড়ানো হয়েছে। সপ্তাহে ৩০০-৩৫০ জনের লালারস সংগ্রহ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন বা জেলাস্বাস্থ্য দফতর থেকে লকডাউনের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে মহকুমার কোনও জায়গার নাম নেই। কিন্তু স্থানীয় ভাবে মানুষ বাজারহাট বন্ধ করে দিচ্ছেন। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে গাইঘাটা ব্লকে করোনার প্রকোপ কমাতে শনিবার থেকে ৭ দিনের জন্য সমস্ত বাজারহাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় ও জরুরি পরিষেবামূলক দোকানপাট খোলা রয়েছে। সেখানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মানুষ কেনাকাটা করতে পারছেন। মুদিখানা, চালের দোকান, গম ভাঙানোর দোকান রবি, মঙ্গল এবং বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। অটো, টোটো, ভ্যান জরুরি প্রয়োজন ছাড়া চলাচল বন্ধ থাকছে। কোনও জমায়েত করা যাবে না। ব্লকে কয়েকটি হাট হয়। সেখানে আনাজ নিয়ে চাষিরা জমায়েত করেন। সে সবও বন্ধ করা হয়েছে। তবে গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিজেপির আপত্তি রয়েছে। দলের বারাসত সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রকান্ত দাস বলেন, ‘‘আমপান দুর্নীতি নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এবং আমাদের আন্দোলন বন্ধ করতে বাজারহাট বন্ধ হয়েছে। বিডিওর কাছে স্মারকলিপি দিয়ে দাবি করেছি, সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার। লকডাউন করতে হলে নির্দিষ্ট সংক্রমিত এলাকায় করা হোক।’’
বনগাঁ পুরসভা, পুলিশ-প্রশাসন ও ব্যবসায়ীরা বৈঠক করে সোমবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পুরসভা এলাকায় বাজারহাট, যানবাহন সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা হবে। পুরপ্রশাসক শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘বনগাঁ শহরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ খুব বেশি এখনও ছড়ায়নি। আমরা করোনা সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য বুধবার থেকে ১৪ দিনের জন্য বাজারহাট, দোকানপাট, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ বনগাঁর আইসি মানস চৌধুরী বলেন, ‘‘মাস্ক ছাড়া পথে বেরোলেই কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’
অশোকনগর-কল্যাণগড় পুর এলাকায় সমস্ত দোকান, বাজারহাট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল পুরসভা। মঙ্গলবার ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে পুর প্রশাসক প্রবোধ সরকার বৈঠক করেন। ২১টি ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রবোধ বলেন, ‘‘বুধবার সকাল ১১টা থেকে বাজার-দোকান বন্ধ থাকছে ২২ জুলাই পর্যন্ত। সম্পূর্ণ লকডাউন হচ্ছে।’’ হাবড়াতেও চালু হচ্ছে নতুন বিধিনিষেধ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy