দিন গড়াচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বাস দিলেও শীর্ষ আদালতের নির্দেশে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অধিকাংশেরই ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এর মধ্যে অবশ্য দক্ষিণ ২৪ পরগনার কয়েক জন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রাথমিক স্কুলের পুরনো চাকরিতে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে। তবে, কেউ কেউ সেই ইচ্ছা প্রকাশ করলেও কী ভাবে তা করতে হবে, সে ব্যাপারে অন্ধকারে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
চাকরি বাতিলের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, যাঁরা অন্য সরকারি চাকরি ছেড়ে ২০১৬ সালের এসএসসি-র মাধ্যমে স্কুলের চাকরিতে যোগদান করেছিলেন, তাঁরা চাইলে পুরনো কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের ‘সার্ভিস ব্রেক’ হবে না। ওই সব শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে তিন মাসের মধ্যে।
তবে, জেলার মোট কত প্রাথমিক শিক্ষক ২০১৬-র এসএসসি-র প্যানেলে সুযোগ পেয়ে হাই স্কুলের চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন, সে তথ্য জানাতে পারেনি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। তারা জানিয়েছে, পুরনো প্রাথমিক স্কুলের চাকরি ফেরত চেয়ে ইতিমধ্যে ২-৩ জনের আবেদন জমা পড়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান অজিত নায়েক বলেন, “পুরনো চাকরি ফেরতের ব্যাপারে কোনও সরকারি নির্দেশিকা আসেনি। আবেদন করতে হবে কি না, সে ব্যাপারেও কিছু জানানো হয়নি। পুরোটাই শিক্ষা দফতর দেখছে। অনেকেই বিষয়টি জিজ্ঞেস করছেন। দু’এক জন হাতে লিখে আবেদনও করেছেন। আমরা বলেছি, রাজ্য দফতরে যোগাযোগ করতে। আমাদের কাছে কোনও নির্দেশিকা এলেই জানিয়ে দেব।”
কিছু চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা অবশ্য পরিস্থিতি দেখে নিতে চাইছেন। তাঁদের একাংশ আবার সুপ্রিম কোর্টে করা রাজ্য সরকারের ‘রিভিউ পিটিশনে’র দিকেও তাকিয়ে রয়েছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের এক যুবক দক্ষিণ ২৪ পরগনায় একটি প্রাথমিক স্কুলে চাকরি করতেন। ২০১৬ সালের প্যানেলে হাই স্কুলে চাকরি পেয়ে তিনি প্রাথমিক স্কুলের চাকরিটি ছাড়েন। পশ্চিম মেদিনীপুরেই নিয়োগ হয় তাঁর। কিন্তু বর্তমানে সেই চাকরি গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে তিনি চাইছেন, হাই স্কুলের চাকরিটি বিনা শর্তে ফিরে পেতে। সেটা যদি না-ও হয়, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রাথমিকের চাকরিটি ফিরে পেতে চান তিনি।
চাকরিহারা ওই শিক্ষক বলেন, “নিজের যোগ্যতায় হাই স্কুলে চাকরি পেয়েছিলাম। অনেকে অনেক আশ্বাস দিচ্ছেন। জানি না শেষ পর্যন্ত কী হবে! আদালত বলেছে পুরনো চাকরিতে ফেরা যাবে। কিন্তু জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দফতর এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারছে না। এমনিতেই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। জানি না ভবিষ্যৎ কী!”
পুরনো প্রাথমিকের চাকরি ফিরে পেতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে আবেদন করা নিয়ে বিভ্রান্তির কথা জানিয়েছেন আরও কয়েক জন চাকরিহারা। তাঁরা জানান, হাতে লিখে আবেদন করতে হবে, নাকি কোনও ফর্ম দেওয়া হবে, তা বলা হচ্ছে না। এমনকি, কত দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে, সে ব্যাপারেও কোনও দিশা মিলছে না।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)