বস্তির এই ঘুপচি ঘরেই থাকতেন সালমা বিবি। রবিবার, ভাটপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র।
ছেলের হাতে ওয়ান শটার দেখে প্রশ্ন তুলেছিলেন মা। আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বাইরে যেতে বাধা দিতে ছেলের পথ আটকান তিনি। তখনই মায়ের মাথা লক্ষ্য করে ট্রিগারে চাপ দেয় মত্ত ছেলে। গুলি মায়ের বাঁ কানের পাশ দিয়ে ঢুকে মাথা এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। রবিবার সকালে, ভাটপাড়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচ নম্বর সাইডিংয়ে এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম সালমা বিবি। ঘটনায় সালমার ছেলে মহম্মদ নিসারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
অভিযুক্ত নিশারের স্ত্রী মাসুমা বিবির সামনেই এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ওই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। তিনিই পুলিশকে ঘটনার বিবরণ দেন। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় ঠাকুর বলেন, ‘‘মাকে খুনের অভিযোগে নিসারকে ধরা হয়েছে। খুবই গরিব পরিবার। কী করে ছেলের হাতে বন্দুক এল, তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে।’’
পুলিশ জানায়, ভাটপাড়ার ওই এলাকায় বেশ কিছু বস্তি আছে। তারই একটি ঘরে ছেলে-পুত্রবধূ, নাতি-নাতনিকে নিয়ে থাকতেন ষাটোর্ধ্ব সালমা। ভাঙা টিন, লোহার গুদামে কাজ করত নিসার। সারা দিনই সে মদ্যপান করত বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, আকবর নামে স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে ইদানীং নিসারকে দেখা যেত। তদন্তকারীরা জানান, জেল থেকে সদ্য ছাড়া পাওয়া স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতীর সঙ্গে আকবরের ওঠা-বসা রয়েছে।
মাসুমা বলেন, ‘‘এ দিন সকালে কাজে যেতে ছেলেকে ডেকে তোলেন শাশুড়ি। উনিই এত দিন সংসার চালিয়েছেন। আমার স্বামী তো প্রায়ই নেশা করত। টাকার দরকার হলে মায়ের কাছে চাইত। বিশ্বাস করতে পারছি না, নেশার ঘোরে নিজের মাকেও মেরে ফেলা যায়!’’
পুলিশকে মাসুমা জানিয়েছেন, সকালে শৌচাগার থেকে বেরিয়ে তিনি দেখেন, ছেলেকে বেরোতে বাধা দিচ্ছেন মা। তাতে মায়ের মাথায় সটান ওয়ান শটার ঠেকিয়ে নিসার প্রশ্ন করে, ‘‘এটা হাতে থাকলে সবাই ভয় পায়, তুমি পাও না?’’ বিরক্ত সালমা বলেন, ‘‘এটা দিয়ে আমাকে তুই ভয় দেখাচ্ছিস! এ সবে আমি ভয় পাই না।’’ মুহূর্তে ট্রিগারে চাপ দেয় ছেলে।
এই দৃশ্য দেখে প্রথমে জ্ঞান হারান মাসুমা। গুলির আওয়াজে ছুটে আসেন পড়শিরাও। স্থানীয় বাসিন্দা জামালউদ্দিন বলেন, ‘‘গুলি চলেছে বলে প্রথমে বুঝিনি। কিছু ফেটেছে বলে মনে হয়েছিল। এসে দেখি, ছেলে মাকে গুলি করে মেঝেয় বসে আছে।’’ এর কিছু পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ দেহ ময়না-তদন্তের জন্য পাঠায়।
তদন্তকারীরা জানান, পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করায় সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হয়েছে প্রৌঢ়ার। মাসুমা বলেন, ‘‘চোখের সামনে দেখলাম, ছেলে মায়ের কানের কাছে বন্দুক ঠেকিয়ে ভয় দেখাচ্ছে, তার পরেই দুম করে আওয়াজ। আকবরই ওকে বন্দুকটা আগের রাতে দিয়েছিল।’’
বেআইনি অস্ত্র যে এখনও ভাটপাড়ার অলিগলিতে ছড়িয়ে রয়েছে, তা মানছেন প্রশাসনের আধিকারিকেরাও। ছ’মাসে ওই এলাকা থেকে দুশোরও বেশি বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র ধরা পড়ার পরেও এমন ঘটনা কপালে ভাঁজ ফেলছে প্রশাসনিক কর্তাদের। নেশা করতে টাকা আদায়ের চেষ্টা, না কি ভয় দেখাতে গিয়েই খুন, সেই প্রশ্নের থেকেও সহজে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে পেয়ে যাওয়ার বিষয়টি আরও বেশি চিন্তার— বলছেন স্থানীয় বাসিন্দারাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy