উদ্যোগ: ছাড়া হচ্ছে মাছ। নিজস্ব চিত্র
পুঁটি, মায়া, বেলা, খলসে, ল্যাঠা, ফলুই, চ্যাঙের মতো বহু খাল-বিল-পুকুরে খেলে বেড়ানো বহু মাছের প্রজাতির ইদানীং প্রায় দেখাই মেলে না। মাছে-ভাতে বাঙালি তাই সেই স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ অনেকেরই এখনও জিভে সেই স্বাদ লেগে। বাজারে গিয়ে তাঁরা এখনও খোঁজেন এই সব মাছ। যে দিন মিলে যায়, গিন্নির হেঁসেলে পৌঁছে ক্রিকেট ম্যাচ জয়ের হাসি লেগে থাকে কর্তার মুখে। আঁচানোর পরেও সে গল্প করেন পাড়ার রোয়াকে বসে।
নানা কারণে দেশি প্রজাতির বহু মাছের উৎপাদন কমেছে। মৎস্য বিশেষজ্ঞেরা জানালেন, ওই সব দেশিয় মাছ কৃত্রিম ভাবে প্রজনন চাষ করা যায় না। মূলত বর্ষা কালে প্রাকৃতিক উপায়েই উৎপাদন হয়। কিন্তু মৎসজীবীদের সচেতনতার অভাবে ওই সব মাছ ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে।
এ বার ওই সব দেশিয় লুপ্তপ্রায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে এবং ওই সব মাছ চাষের প্রসার বাড়াতে পদক্ষেপ করল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা মৎস্য দফতর। জেলার বিভিন্ন এলাকায় থেকে প্রায় আড়াই হাজার মৎস্যজীবীকে এনে শুক্রবার মেলার আয়োজন করা হল বাগদার সিন্দ্রাণী এলাকায়। মেলার নাম, ‘খাল বিল চুনোপুঁটি মেলা।’
মৎস্য দফতরের কর্তারা মৎস্যজীবীদের ওই সব মাছ ধরা ও সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতন করেন। মেলায় এসেছিলেন মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক দুলার বর। মন্ত্রীর হাতে দিয়ে এ দিন প্রায় এক কুইন্ট্যাল পুঁটি, ল্যাঠা, খলসে, মায়া, চ্যাঙ, মাগুর, চাঁদা মাছ ছাড়া হয় সিন্দ্রাণী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির বাওরে।
কেন ওই সব দেশিয় মাছ লুপ্তপ্রায় হতে চলেছে?
জেলার সহ মৎস্য অধিকর্তা দিলাপকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘মৎস্যজীবীরা চট জাল ব্যবহার করেন। ফলে ওই সব দেশিয় মাছের বাচ্চা সেখানে উঠে আসে।’ দেশিয় মাছ সংরক্ষণ করতে তিনি মৎস্যজীবীদের পরামর্শ দেন, মূলত আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ওই সব দেশিয় মাছ ডিম পাড়ে। সে সময়ে ওই সব মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হবে। তা ছাড়া, মৎস্যজীবীরা যখন জাল দিয়ে মাছ ধরেন, তাঁদের জালে প্রচুর দেশিয় মাছের বাচ্চা ওঠে। তাঁরা তা খাল-বিল-বাওর-নদীর পাড়ে ফেলে দেন। ওই মাছ মারা যায়। তাঁরা যদি ওই সব মাছ ফের জলে ছেড়ে দেন, তা হলে তারা প্রাণে বাঁচে।
মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশিয় মাছ সাধারণ খাল-বিল-বাওরের মধ্যে যেখানে জল একটু কম, লতাগুল্ম আছে, সেখানে ডিম পাড়ে। মৎস্যজীবীদের উচিত, ওই সব এলাকাগুলি এড়িয়ে চলা। মৎস্যজীবীরাও কথা দিয়েছেন, তাঁরা দেশিয় মাছ বাঁচাতে মৎস্য দফতরের পরামর্শ মেনে চলবেন।
দিলীপবাবু জানান, জেলায় প্রায় ৩০টি বাওর-খাল-বিল-বড় জলাশয়ে পর্যায় ক্রমে দেশিয় মাছ ছাড়া হচ্ছে।
এই উদ্যোগে বহু প্রবীণ মানুষ উচ্ছ্বসিত। বিশেষত, যাঁরা ও পার বাংলা থেকে এসেছেন, তাঁরা। এক বৃদ্ধের কথায়, ‘‘এ সব মাছ একেবারে পাওয়া যায় না, তা নয়। কিন্তু দাম আকাশছোঁয়া। ফের জোগান বাড়লে পুরনো দিনের স্বাদ ফিরে পাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy