Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
অভিযোগ, জড়িত চিকিৎসকদের একাংশ

হাসপাতাল এড়িয়ে সোজা নার্সিংহোমে

জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা মিলবে না—এই কথা বুঝিয়ে রোগীকে পাঠানো হচ্ছে নার্সিংহোমে। রোগীর পরিবারকে বোঝানোর দায়িত্বে কাজ করছে কয়েকটি চক্র। অভিযোগ, সেই চক্রে রয়েছেন হাসপাতালেরই কয়েকজন চিকিৎসক। এমনই অভিযোগ উঠেছে ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে।

দিলীপ নস্কর
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৭ ০১:৩০
Share: Save:

জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা মিলবে না—এই কথা বুঝিয়ে রোগীকে পাঠানো হচ্ছে নার্সিংহোমে। রোগীর পরিবারকে বোঝানোর দায়িত্বে কাজ করছে কয়েকটি চক্র। অভিযোগ, সেই চক্রে রয়েছেন হাসপাতালেরই কয়েকজন চিকিৎসক। এমনই অভিযোগ উঠেছে ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে।

মোটরবাইক দুর্ঘটনায় ডান পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন রায়দিঘির প্রৌঢ় বিমল ময়রা। পরিবারের লোকজন তাঁকে ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। অভিযোগ, জেলা হাসপাতালের এক চিকিৎসক এসে তাঁদের জানান, এখানে থাকলে পা সারবে না। নার্সিংহোমে ভর্তি হলে তিনি কম খরচে ব্যবস্থা করে দেবেন। এর পরে ওই পরিবারের সদস্যেরা রোগীকে নার্সিংহোমে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন। বিমলবাবুর এক আত্মীয়ের দাবি, ‘‘খোদ চিকিৎসক এসে বলছেন, জেলা হাসপাতালে রাখলে পা বাদ যেতে পারে। এর পর কোন সাহসে রোগীকে এখানে ফেলে রাখি বলুন?’’

পেটের ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ফলতার বাসিন্দা এক প্রৌঢ়। অভিযোগ, ওই প্রৌঢ়কে নার্সিংহোমের ভর্তির কথা বলেন জেলা হাসপাতালের অন্য এক চিকিৎসক। চিকিৎসকের হয়ে অন্য এক জনকে বোঝানোর দায়িত্ব দেন। রোগীকে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।

ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতাল থেকে স্থানীয় নার্সিংহোমে রোগী নিয়ে চলে যাওয়ার উদাহরণ রয়েছে ভুরি ভুরি। অভিযোগ, হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ জড়িত থাকায় রোগীর পরিবার নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে বাধ্য হন। যদিও হাসপাতালের সুপার আনোয়ার হোসেনের দাবি, ‘‘হাসপাতাল থেকে নার্সিংহোমে রোগী নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমার কাছে কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

এক দিকে জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অন্য দিকে, নার্সিংহোমগুলির অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো— দুইয়ে জেরবার ডায়মন্ড হারবার মহকুমার মানুষ। অভিযোগ, বেশির ভাগ নার্সিংহোমের প্রয়োজনীয় নথি নেই। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী একজন আরএমও (রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসার), প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স, অপারেশন থিয়েটারের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও উপযুক্ত জায়গা, চিকিৎসার উপযুক্ত পরিবেশ, দমকল এবং পুরসভা বা পঞ্চায়েতের ছাড়পত্র— এগুলি ছাড়া, কোনও ভাবেই নার্সিংহোম তৈরি হতে পারে না। কিন্তু সেই নিয়ম মানছে কে?

পারুলিয়া মোড়ের কাছে একটি নার্সিংহোমের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল মন্দিরবাজারের মতিলাল গ্রামের বাসিন্দা এক মহিলা রোগীর বাবা-মায়ের সঙ্গে। তাঁদের অভিযোগ, মাস দু’য়েক আগে মেয়ের পেটে দু’টি অস্ত্রোপচারের জন্য ১০ হাজার টাকা ‘প্যাকেজ’ ঠিক হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দু’টির বদলে একটি অস্ত্রোপচার হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক জানান, অন্য অস্ত্রোপচারটি পরে করা হবে। এখন তাঁরা মেয়েকে বাকি অস্ত্রোপচারটির জন্য ফের ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করেছেন। কিন্তু চুক্তিমতো ১০ হাজার টাকা দিয়ে দেওয়ার পরেও এখন অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। অন্য এক রোগীর আত্মীয়ের ক্ষোভ, ভিতরে চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। মশা-মাছি ভনভন করছে। ন্যূনতম পরিষেবাটুকুও মেলে না। ডায়মন্ড হারবারের অন্য কয়েকটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে। আরও অভিযোগ হল, ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালের ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান থেকে কম দামে ওষুধ কিনে সেগুলি নার্সিংহোম থেকে চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

বিধায়ক দীপক হালদারের দাবি, ‘‘দ্রুত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও মহকুমাশাসকের সঙ্গে বৈঠক করে বেআইনি নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।’’

দক্ষিন ২৪ পরগনা জেলা মূখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম দাস মালাকার জানান, কয়েক মাস আগে জেলার নার্সিংহোমগুলিতে তল্লাশির সময়ে কয়েকটি ‘সিল’ করা হয়েছিল। তখন কিছু নার্সিংহোম নথি তৈরির জন্য সময় চেয়েছিল। সেগুলির উপরে নজর রাখা হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Diamond Harbour Hospital Nursing Home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE