দেহ ভাসানোর তোড়জোড়। নিজস্ব চিত্র।
সাপের কামড়ে শিশুর মৃত্যুতে ফের উঠল অসচেতনতার অভিযোগ। ওঝার কাছে দীর্ঘক্ষণ সময় নষ্ট করে ঝাড়ফুঁক করানো হয়। পরে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বছর আটেকের সঞ্চিতা নস্করকে, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। মারা গিয়েছে মেয়েটি।
শুক্রবার, বিশ্ব সাপ দিবসের রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বাসন্তীর দক্ষিণ মোকামবেরিয়া গ্রামে। বিছানায় ঘুমন্ত অবস্থায় সাপে কামড়ায় ছোট্ট মেয়েটিকে। ঘণ্টা তিনেক ধরে ঝাড়ফুঁক চলে। পরে বেগতিক বুঝে বাসন্তী ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন সঞ্চিতাকে।
সে কথা শুনে মেয়েটিকে ফের তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ওঝার কাছে। আবারও দীর্ঘক্ষণ চলে ঝাড়ফুঁক। এরপরে ওঝার নির্দেশে শনিবার সকালে সঞ্চিতার দেহ কলার ভেলায় নদীতে ভাসানোর তোড়জোড় করা হয়। খবর পেয়ে বাসন্তী থানার পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য থানায় আনে। রবিবার কলকাতায় সঞ্চিতার দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হবে বলে থানা সূত্রে জানানো হয়েছে।
সঞ্চিতার বাবা রণজিৎ কর্মসূত্রে অন্ধ্রপ্রদেশে থাকেন। মা ঝুম্পা অসুস্থ। ওই বালিকা শুক্রবার রাতে দিদিমার সঙ্গে শুয়েছিল। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ডান হাতের আঙুলে যন্ত্রণা অনুভব করে। দিদিমাকে ঘুম থেকে ডাকে। বিছানায় একটি কালাচ সাপ দেখা যায়। এরপরেই খোঁজ পড়ে ওঝার। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও কাজ হয়নি।
ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সৈকত বেরা বলেন, ‘‘ওঝা-গুনিনের কাছে নিয়ে যাওয়ার কারণেই মৃত্যু হয়েছে শিশুটির। চিকিৎসার জন্য কিছুটা সময় পেলে হয় তো বাঁচানো সম্ভব হত। মারা যাওয়ার পরেও পরিবারটি কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে দেহ কলার ভেলায় ভাসানোর পরিকল্পনা করছিল।”
মৃত শিশুর দাদু যতন দলুই পরে অবশ্য বলেন, ‘‘ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া ভুল হয়েছিল আমাদের। সঙ্গে সঙ্গে যদি হাসপাতালে যেতাম, তা হলে হয় তো নাতনিটা বেঁচে যেত।”
গত ২৫ জুনও গোসাবার ছোট মোল্লাখালি পঞ্চায়েতের ৫ নম্বর কালিদাসপুরের দশ বছরের নাবালিকা পূজা মৃধার মৃত্যু হয় সাপের কামড়ে। সাপে কামড়ানোর পরে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে তাকেও পরিবারের লোকেরা ওঝার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। মৃত্যু হলে পূজার দেহ কলার ভেলায় ভাসানো হয়েছিল। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় সুন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশ দেহ উদ্ধার করে। সেই ঘটনায় দুই ওঝাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
সাপে কাটা রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সমরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘‘সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে এলে প্রায় সমস্ত সাপে কাটা রোগীকেই বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু এখনও অনেকেই কুসংস্কারের ফলে হয়ে ওঝা-গুনিনের উপরে ভরসা করায় এ ভাবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।” ক্যানিং যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার সদস্য দেবাশিস দত্ত বলেন, ‘‘আমরা লাগাতার এ বিষয়ে প্রচার করছি। কিন্তু তবুও কিছু মানুষ কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে পড়ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy