শহরের পাশেই ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি। ততটা হেলদোল নেই প্রশাসনের। রোগ নির্ণয়, টিকাকরণ, প্রাথমিক চিকিৎসার ক্ষেত্রেও বড়সড় ফাঁক নজরে এল ডায়মন্ড হারবারে। পুরসভার স্বাস্থ্য পরিষেবা শিকেয় উঠতে বসেছে। দু’মাস ধরে ডাক্তার নেই। তার সঙ্গে প্রাথমিক ভাবে রোগ প্রতিরোধে যে সমস্ত ওষুদের দরকার, তার সরবরাহও তলানিতে। যাঁদের দিয়ে পুর এলাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রায় সিংহভাগ চলে, তাঁদের পেটেই টান। প্রায় ৫ মাস ধরে মাইনে পাচ্ছেন না চুক্তিভিত্তিক স্বাস্থ্যকর্মীরা।
প্রায় দু’মাস ধরে ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না ডায়মন্ড হারবার পুরসভায়। কয়েক মাস হল ২০ হাজার টাকা মাইনেয় একজন ডাক্তার নিয়োগ করা হয়। কিন্তু কিছু দিন পর থেকেই তিনি আসা বন্ধ করে দেন। অন্যান্য জায়গা থেকেও খোঁজ করেও ডাক্তার মিলছে না কম বেতনে। এ প্রসঙ্গে পুরপ্রধান মীরা হালদার বলেন, ‘‘আমরা শীঘ্রই বোর্ড মিটিং করে ওই ডাক্তার বদলে নতুন ডাক্তার নিয়োগ করব।’’
প্রায় এক দেড় মাস ধরে বন্ধ পুরসভার আউটডোর পরিষেবাও। ডাক্তার না এলে পুরসভার অধীনে কাজ করেন এ রকম চুক্তিভিত্তিক স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে কিছু স্বাভাবিক পরিষেবা চালু রাখা যায়। কিন্তু তা করতে গিয়েও সমস্যা হচ্ছে। পুরসভা এলাকায় ৫টি উপকেন্দ্রে এঁরা বিভিন্ন পরিষেবা দিয়ে থাকেন। রক্তের নমুনা সংগ্রহ থেকে শুরু করে ইঞ্জেকশন দেওয়া, ওষুধ বিলি করা, পোলিও টিকাকরণ, স্বাস্থ্যসমীক্ষা— হাজার রকমের কাজ। ১৬টি ওয়ার্ডের জন্য রয়েছেন ২১ জন কর্মী, অফিসের স্টাফ। এ দিন একটি উপকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, পর্যাপ্ত কর্মী নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, ‘‘পুজো সামনে। পাঁচ মাসের মাইনে বাকি। এর আগেও এক দু’বার এমন হয়েছিল। কী ভাবে কাজে উৎসাহ পাব?’’ মন দিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে অনেকেই দমে গিয়েছেন। বাকি দফতরগুলির ক্ষেত্রে মাইনের সমস্যা না হলেও এঁদের ক্ষেত্রে তা কেন হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন পুরকর্মী এবং কয়েকজন কাউন্সিলর।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১০ লক্ষ টাকার একটি তহবিল রাখা হয়েছিল অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মীদের মাইনের জন্য। পুরসভার কর্তারা দাবি করছেন, তা মাইনের কাজেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন তহবিল শূন্য। তার জেরেই বেতনে কোপ পড়েছে ওই কর্মীদের উপরে। মাত্র আড়াই হাজার থেকে ছ’হাজার টাকার মধ্যে মাইনে পান এঁরা। যদিও রাজ্য নগরোন্নয়ন দফতরের হিসাবরক্ষক বিভাগের কর্তাদের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠকে সমাধানসূত্র মিলেছে বলে দাবি করেছেন পুরকর্তারা। পুরপ্রধানের দাবি, ‘‘সমস্যা এক দিনে তৈরি হয়নি। এঁদের বিষয়টি আগের বোর্ড থেকেই চলছে। তবে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, মিটে যাবে।’’
২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কৃষ্ণা বৈদ্য বিরোধী দলের। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পরিষেবা ঠিকমতো পাচ্ছেন না মানুষ। নিয়মিত ভাবে স্বাস্থ্যকর্মীরা আসছেন না উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে। ওষুধ পাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে এলাকায়। যে ভাবে অজানা জ্বর ছড়াচ্ছে, তাতে অবিলম্বে স্বাস্থ্যশিবির করে রক্ত পরীক্ষা করা উচিত।’’ কিন্তু পুরসভার স্বাস্থ্য পরিষেবায় কোনওরকম টেস্ট করার পরিকাঠামোই নেই বলে জানাচ্ছেন কর্তারা। ওষুধের সরবরাহ নিয়ে পুরসভার অবশ্য দাবি, কেবলমাত্র পুরসভা নয়, স্বাস্থ্য দফতর এবং রাজ্য নগরোন্নয়ন কর্তৃপক্ষও ওষুধ সরবরাহ করে। পুরসভার ওষুধে টান নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy