প্রতীকী ছবি।
স্কুল খোলার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে রাজ্যে। পরিকাঠামোর হাল নিয়ে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে সরকার। সেই খতিয়ান পাঠিয়েছে স্কুলগুলি। সংস্কারের জন্য টাকাও চাওয়া হয়েছে। এ দিকে, শিক্ষকের অভাব বহু জায়গায়। কবে পূরণ হবে সেই চাহিদা, স্পষ্ট উত্তর নেই কারও কাছে। পরিস্থিতির খোঁজ নিল আনন্দবাজার।
প্রায় ২০০০ পড়ুয়া সন্দেশখালি ২ ব্লকের আতাপুর কেনারাম হাইস্কুলে। কিন্তু জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নের কোনও শিক্ষকই নেই।
২০১৯ সালের পর থেকে বিজ্ঞান শাখায় নতুন করে ভর্তি নেওয়া হয়নি। ওই সালে ভর্তি হওয়া বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়ারা এ বছর পাশ করার পরে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেল স্কুলের বিজ্ঞান শাখা।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৌমেন রায় বলেন, ‘‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে স্থায়ী শিক্ষক ক্রমশ কমতে কমতে এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। স্কুল চালু হলে শিক্ষার মান ধরে রাখতে খুবই সমস্যা হবে। বাধ্য হয়ে স্কুলের ফান্ড থেকে ৫-৬ জন আংশিক সময়ের শিক্ষক নিয়োগ করেছি। কবে পূর্ণ সময়ের শিক্ষক আসবেন, সেই অপেক্ষায় আছি।’’
সন্দেশখালির খুলনা পিসি ল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গত দু’বছরে ৮ জন শিক্ষক বদলি নিয়েছেন। ৪ জন অবসর নিয়েছেন। নতুন নিয়োগ হয়নি। ফলে শিক্ষকের সংখ্যা উদ্বেগজনক ভাবে কমে গিয়েছে। এখন স্কুলে ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইংরেজি, জীবনবিজ্ঞান ও অঙ্কের কোনও শিক্ষক নেই। শিক্ষাবিজ্ঞানের এক জন শিক্ষক রয়েছেন, তিনিও ডিসেম্বরে অবসর নেবেন। বাংলা, ভূগোল, শারীরশিক্ষায় মাত্র এক জন করে শিক্ষক। পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৯৫০।
শিক্ষক সুকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সঙ্কট বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্কুল খুললে কী ভাবে প্রত্যেকটা সেকশনে শিক্ষক পাঠানো যাবে, সেটাই ভাবাচ্ছে আমাদের।’’ তিনি জানালেন, ২০১৬ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক নেই স্কুলে। ২ জন করণিক থাকার কথা, আছেন এক জন। তিনিও কিছুদিনের মধ্যেই অবসর নেবেন।’’
সন্দেশখালি রাধারানি হাইস্কুল (উচ্চ মাধ্যমিক) স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিকাশচন্দ্র পাল বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ১৩০০। অথচ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষক নেই। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনা চালানোর জন্য এলাকার স্নাতক ছেলেদের আংশিক সময়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করেছি। কিন্তু এ ভাবে পড়াশোনার মান বজায় রাখা মুশকিল।’’
দাউদপুর এসএল শিক্ষানিকেতনে শিক্ষক সংখ্যা এমনিতেই কম ছিল। গত দু’বছরে প্রত্যন্ত গ্রামের এই স্কুল থেকে ৪ জন শিক্ষক চলে গিয়েছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ সাহা বলেন, ‘‘১২৫০ জন পড়ুয়া। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল ফল করে এখানকার পড়ুয়ারা। কিন্তু শিক্ষক না থাকলে স্কুলের মান বজায় রাখা সম্ভব হবে না।’’
সন্দেশখালি ১ ব্লকের ছোট সেহেরা হাইস্কুল (উচ্চ মাধ্যমিক) স্কুলের দুই পড়ুয়া এ বার রাজ্যের মধ্যে ভাল ফল করেছে মাধ্যমিকে। গত দু’বছরে এই স্কুল থেকে ১১ জন শিক্ষক চলে গিয়েছেন। শিক্ষকের অভাবে তিন বছর আগেই বিজ্ঞান শাখা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্কুলে এখন শিক্ষাবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কোনও শিক্ষক নেই।
আংশিক সময়ের শিক্ষক দিয়ে শিক্ষাবিজ্ঞানের ক্লাস চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিষ্ণুপদ প্রামাণিক বলেন, ‘‘প্রত্যন্ত গ্রামের এই স্কুলে শিক্ষকেরা কেউ আসতে চান না। এলেও বদলি নিয়ে চলে যান। আংশিক সময়ের শিক্ষক রাখার ক্ষমতা আমাদের কম। স্কুল চালু হলে ক্লাস নেওয়া সমস্যা হবে।’’
হিঙ্গলগঞ্জের পঞ্চপল্লি দিগম্বর সিনহা বিদ্যায়তনের শিক্ষক বর্তমানে ৩ জন। প্রধান শিক্ষক ভোলানাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘দু’জন শিক্ষক সম্প্রতি চলে গিয়েছেন। টাকা দিয়ে পার্শ্বশিক্ষক রাখার ক্ষমতা আমাদের নেই। স্কুল খুললে কী ভাবে ক্লাস চলবে জানি না।’’
শিক্ষকের সঙ্কটে ভুগছে হাসনাবাদ ব্লকের রামেশরপুর ইউনিয়ন আদর্শ বিদ্যালয়, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের গোবিন্দকাটি শিক্ষানিকেতন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল, দুলদুলি মঠবাড়ি ডিএন হাইস্কুল-সহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ও।
শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে কবে সুরাহা হবে, তা জানে না স্কুলগুলি। এ বিষয়ে ডিআই বারাসত এবং এডিআই বসিরহাটকে বার বার ফোন করা হলেও উত্তর মেলেনি। মেসেজেরও জবাব আসেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy