বেআইনি: নৌকায় করে চর থেকে সাদা বালি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ।
দুই জেলার বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ বালি খাদান থেকে বালি তোলার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। পুলিশি অভিযানে খাদানের কাজকর্ম কমলেও, অনেক জায়গাতেই চোরাগোপ্তা পাচার চলছে বলে অভিযোগ। খোঁজ নিল আনন্দবাজার
বসিরহাট মহকুমার অনেক জায়গায় প্রকাশ্যেই চলছে অবৈধভাবে বালি তোলার কাজ। অভিযোগ, সম্প্রতি পুলিশি অভিযান ও ধরপাকড়ে বহু অবৈধ বালি খাদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে তারপরেও চোরাগোপ্তা বালি কাটার কাজ চলছেই। রাতের অন্ধকারে সেই বালি পাচারও হয়ে যাচ্ছে অন্যত্র।
বসরিহাট মহকুমা জুড়ে বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম বহুদিনের। স্থানীয় বাসিন্দাদের তরফে মুখ্যমন্ত্রী-সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক মহলে এই নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ জানানো হয়েছে। দফায় দফায় অভিযোগের জেরে সম্প্রতি নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। গত এক বছরে বাদুড়িয়া, মিনাখাঁ, সন্দেশখালি, হাসনাবাদ, স্বরূপনগর, দেগঙ্গা-সহ বসিরহাটের বিভিন্ন এলাকায় নদীর পাড়ে পরপর অভিযান চালিয়ে বহু খাদান বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ধরাও পড়েছে বেশ কয়েকজন।
তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, নৌকাতে করে রাতের অন্ধকারে বালি পাচারের কাজ চলছেই। গ্রামবাসীদের দাবি, রাতের অন্ধকারে বাদুড়িয়া এবং বসিরহাটে ইছামতী নদীর উপর সেতুর কাছাকাছি বালি তোলা চলছে। প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না। তাঁদের আশঙ্কা, বালি তোলার ফলে ভবিষ্যতে সেতুর বড় ক্ষতি হতে পারে। বাঁধে ধস নামতে পারে বলেও আশঙ্কা নদী পাড়ের বাসিন্দাদের।
স্থানীয় সূত্রের খবর, অমাবস্যা ও পূর্ণিমার ভরা কটালের সময় ভাঁটার জলের স্তর অনেকটাই নীচে নেমে যায়। নদীর চর জেগে ওঠে। তখনই অসাধু ব্যবসায়ীরা নৌকায় করে সেই চর থেকে সাদা বালি কেটে তা অন্যত্র চড়া দামে বিক্রি করে। এই বালি ইট ভাটায় কাজে লাগে। তাছাড়া নিচু জমি বা জলাশয় ভরাট করতেও ব্যবহার হয় এই বালি। বর্ষায় সাদা বালি এখন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। শহর ও শহরতলির বিভিন্ন জলাশয় রাতারাতি সাদা বালি দিয়ে ভরাট করে তৈরি হচ্ছে আবাসন। বালি তোলার সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের অবশ্য দাবি, ইছামতীর গভীরতা অনেক কমে গিয়েছে। তাই নদীর মাঝে জমা বালি কেটে উপরে তুললে তেমন কোনও ক্ষতি হবে না। তা ছাড়া এই পেশায় কয়েকশো শ্রমিক, গাড়িচালক, বেকার যুবক জড়িত। তাই আইনি জটিলতা কাটিয়ে রাজ্যের অন্য প্রান্তের মত এখানেও অতিরিক্ত বালি তোলার অনুমতি দেওয়ার দাবি জানায় তারা।
সন্দেশখালি, ন্যাজাট, মিনাখাঁর বিভিন্ন জায়গা থেকে নৌকায় করে সাদা বালি ভরে মিনাখাঁর মালঞ্চ ঘাট ও ঘুষিঘাটা ঘাটে এসে দাঁড়ায়। তারপর সেখান থেকে ছোট ছোট ট্রাকে বালি ভরাট করে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়। স্থানীয় বাসিন্দা সুজয় রায়, রতিকান্ত মণ্ডলরা জানান, ঘুষিঘাটা ফেরিঘাটে বেশ কয়েকবার পুলিশি অভিযান হয়েছে। পুলিশ এসে বলে যাওয়ার পর কয়েকদিন বন্ধ থাকে। তারপরে আবার যে কে সেই হয়ে যায়। তবে বর্ষার জন্য এখন কিছুদিন নৌকা কম আসছে। বর্ষা শেষ হয়ে গেলে আবার নৌকা বাড়বে।”
বাদুড়িয়ার বিএলআরও কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত বলেন, “অবৈধ বালি খাদানগুলির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই মুহুর্তে নতুন কোনও বালিখাদান চলছে বলে আমাদের কাছে খবর নেই। কেউ নদী থেকে বালি তুললে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” রাতের অন্ধাকের অবৈধ বালি তোলা যে চলছে তা মেনে নেন বসিরহাটের আইসি সুরিন্দর সিংহ। তিনি বলেন, “এক সময়ে ইছামতী থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলা হত। বর্তমানে সব ক’টি বালি খাদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে রাতের অন্ধকারে দু’চারটে নৌকায় বালি পাচার হচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর এসেছে। তাদের ধরতে বিশেষ বাহিনী তৈরি করে অভিযান চালানো হচ্ছে।” বাদুড়িয়ার বাসিন্দা ইছামতী বাঁচাও কমিটির সদস্য অরবিন্দ বাছাড় বলেন, “আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে উন্নত মানের যন্ত্র দিয়ে নদী থেকে বালি তোলা হচ্ছে। এর ফলে নদী ভাঙন দেখা দিচ্ছে। বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢুকছে। এই অবৈধ ব্যবসায়ীদের জন্য শুধু ইছামতীই নয়, বিভিন্ন নদীর পাড় ভেঙে ক্ষতি হচ্ছে। এর ফলে গ্রাম গঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিচ্ছে। অবৈধ খাদান বন্ধ করা প্রয়োজন। অবিলম্বে নদীর এই বেহাল অবস্থার উন্নতি প্রয়োজন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy