Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Saifuddin Laskar

সন্ত্রাসের দিন কি ফিরছে, প্রশ্ন

প্রাথমিক ভাবে রাজনৈতিক কারণ সামনে এসেছে। তৃণমূলের দাবি, এটা সিপিএমের কাজ। স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকার এক সিপিএম নেতার সঙ্গে বিবাদ ছিল সইফুদ্দিনের।

এখানেই গুলি করা হয় সইফুদ্দিনকে (ইনসেটে)। পড়ে রয়েছে রক্ত ও রক্তমাখা টুপি।

এখানেই গুলি করা হয় সইফুদ্দিনকে (ইনসেটে)। পড়ে রয়েছে রক্ত ও রক্তমাখা টুপি। নিজস্ব চিত্র।

সমীরণ দাস 
জয়নগর শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৮
Share: Save:

রাজনৈতিক সন্ত্রাস-সহ অপরাধমূলক কাজকর্মে একসময়ে রাজ্যে প্রথম সারিতে ছিল জয়নগর, কুলতলি ও আশপাশের এলাকা। তবে, গত কয়েক বছরে এলাকায় সে ভাবে বড় ঘটনা ঘটেনি। বামনগাছির তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর খুন ও পরবর্তী উত্তেজনা ঘিরে সেই সন্ত্রাসের পরিবেশ ফিরছে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়দের একাংশ।

সোমবার যে ভাবে কাছ থেকে গুলি করে সইফুদ্দিনকে খুন করা হয়েছে এবাং পরে যে কায়দায় প্রায় পনেরোটি বাড়ি পোড়ানো হয়েছে, তা নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন এলাকার লোকজন।

প্রাথমিক ভাবে রাজনৈতিক কারণ সামনে এসেছে। তৃণমূলের দাবি, এটা সিপিএমের কাজ। স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকার এক সিপিএম নেতার সঙ্গে বিবাদ ছিল সইফুদ্দিনের। তা ছাড়া, বামনগাছি পঞ্চায়েতের দুর্নীতি নিয়ে আদালতে গিয়েছিলেন সিপিএমের কিছু স্থানীয় নেতা। তার জেরে সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে জেলাশাসক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে প্রতিনিধি দল পাঠান। তা নিয়ে দু’পক্ষের চাপান-উতোর চলে। তা ছাড়া, সইফুদ্দিনের হাত ধরে বহু সিপিএম কর্মী-সমর্থক তৃণমূলে এসেছিলেন। তৃণমূলের দাবি, তাঁর জনপ্রিয়তায় কার্যত মুছে যাচ্ছিল সিপিএম। সেই কারণেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা হয়।

এ দিন স্থানীয় তৃণমূলের লোকজনই দলুয়াখাকিতে ভাঙচুর চালায় ও আগুন লাগায় বলে অভিযোগ। এলাকার লোকজনের দাবি, পরে আবার এসে আগুন লাগানোর হুমকিও দিয়ে গিয়েছে তারা। ফলে, গোলমাল এখনই মিটছে না বলেই আশঙ্কা গ্রামবাসীদের একাংশের। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।

পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব রকম পদক্ষেপ করা হচ্ছে। দলুয়াখাকি-সহ বিভিন্ন এলাকায় নজর রাখা হচ্ছে।

বাম আমলে জয়নগর-কুলতলিতে টানা দাপট ছিল এসইউসি-র। সেই সময় বামেদের সঙ্গে এসইউসি-র সংঘর্ষে নিয়মিত উত্তেজনা ছড়াত এলাকায়। দু’দলের গোলমালে বহু খুন-জখমের ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তী সময়ে আসে তৃণমূল। প্রাথমিক ভাবে তৃণমূলের সঙ্গে জোট হয়েছিল এসইউসি-র। কিন্তু পরে সেই জোট ভাঙে। ক্রমশ ‘শত্রু’ হয়ে ওঠে দু’দলের কর্মী-সমর্থকেরা। দু’দলের একাধিক গোলমাল হয় বিভিন্ন এলাকায়। তৃণমূলের বাড়বাড়ন্তের সঙ্গে সঙ্গে দলে গোষ্ঠীকোন্দলও বাড়ে। সেই কোন্দলেও বহু রক্ত ঝরেছে।

বছর পাঁচেক আগে জয়নগরের দুর্গাপুর এলাকায় একটি পেট্রল পাম্পে স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বনাথ দাসের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা-গুলি ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। বিধায়ক সেই সময় গাড়িতে ছিলেন না। ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু হয়। তদন্তে দলের কোন্দলই সামনে এসেছিল সেই সময়। বছর তিনেক আগে তৃণমূল-এসইউসির বড় গোলমাল হয় কুলতলির মৈপিঠে। এক তৃণমূল নেতাকে খুনের অভিযোগ ওঠে। পাল্টা এক এসইউসি নেতাকে খুন করে গলায় দড়ি দিয়ে দেহটি ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। তেতে ওঠে এলাকা। বহু বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বোমাবাজি চলে।

এরপরে বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি পায়। বিজেপি-তৃণমূল গোলমাল হয়েছে কয়েক জায়গায়। তবে, বেশ কিছুদিন সেই অর্থে ‘বড়’ ঘটনা ঘটেনি। স্থানীয় সূত্রের খবর, বিরোধীদের শক্তি কমেছে। তৃণমূলের কোন্দলও কম। তার জেরেই এতদিন শান্ত ছিল এলাকা। কিন্তু সইফুদ্দিনের খুনে নতুন করে তেতে উঠেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC joynagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy