বিজনের মৃত্যুতে চোখে জল এলাকার অনেকের। ছবি: সুজিত দুয়ারি।
তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে অশোকনগরের গুমা এলাকায় দলকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন বিজন দাস। পরে গুমা ১ পঞ্চায়েতের প্রধান হন। এলাকায় দলের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে বিজনের ভূমিকার কথা দলের নেতা-কর্মীরা একবাক্যে মানেন। এ হেন মানুষটিকে খুনের ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে, জনপ্রিয়তাই কি তবে ডেকে আনল অকাল মৃত্যু?
শিক্ষকতা করতেন বিজন। রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশাপাশি সমাজসেবী হিসাবেও নামডাক ছিল। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সকলের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন বলে জানা গেল। দলমত না দেখে মানুষের পাশে দাঁড়াতেন বলে জানাচ্ছেন গ্রামের মানুষ। রাজু ঢালি নামে এক ব্যক্তির কথায়, ‘‘বিজনদা শুধু উপপ্রধান ছিলেন না, তিনি আমাদের প্রকৃত অভিভাবক ছিলেন। বিপদে-আপদে যখনই গিয়েছি, উনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।’’ মণি ধর নামে এক মহিলার কথায়, ‘‘সোমবার এলাকার অনেকের বাড়িতেই হাঁড়ি চড়েনি। সকলে গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত।’’ সোমবার এলাকায় গিয়ে দেখে গেল, অনেকেরই চোখে জল।
সোমবার সকাল থেকে মানুষ অপেক্ষা করছিলেন৷ বারাসত জেলা হাসপাতালে ময়না তদন্তের পরে বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ দেহ গ্রামে আসে। কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় করেন। চোখের জলে বিজনকে শ্রদ্ধা জানান অনেকে। মূল অভিযুক্ত গৌতম দাসকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তোলেন তাঁরা।
বছর পঞ্চাশের বিজন ছিলেন গুমা ১ পঞ্চায়েতের দু’বারের প্রধান এবং দু’বারের উপপ্রধান। অশোকনগরের প্রাক্তন বিধায়ক, তৃণমূলের ধীমান রায় বলেন, ‘‘প্রধান থাকাকালীন বিজন সফল ভাবে পঞ্চায়েত পরিচালনা করার জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছিলেন। পরে আমরাও ওঁকে সংবর্ধনা দিয়েছিলাম। মানুষের কাছে জনপ্রিয় হওয়াটাই মনে হয় কাল হল।’’
দীর্ঘ দিন পঞ্চায়েতের দায়িত্বে সামলালেও কখনও কোনও দুর্নীতির অভিযোগে নাম জড়ায়নি। তবে ২০১৮ সালে গুমা ১ পঞ্চায়েতের তৎকালীন বিজেপির বিরোধী দলনেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল বিজনের বিরুদ্ধে। তাঁর মৃত্যুতে অশোকনগরের এক সিপিএম নেতা বলেন, ‘‘প্রধান থাকাকালীন কয়েক বার দেখা হয়েছিল ওঁর সঙ্গে। কথাবার্তা খুবই ভাল ছিল।’’ বিশ্বজিৎ রায় নামে এক ব্যক্তি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘বিজনদার মতো মানুষ হয় না। বিপদে পড়লে পাশে দাঁড়াতেন। ওঁর মতো মানুষ খুন হতে পারেন, ভাবতেই পারছি না!’’
বিজনকে খুনে মূল অভিযুক্ত গৌতম দাসের বিরুদ্ধে লোকজনের অভিযোগ ভুরি ভুরি। লোকজনের থেকে ভয় দেখিয়ে জমি দখল, তোলাবাজি, চিটিংবাজির ঘটনায় বহু বার তার নাম জড়িয়েছে। ধর্ষণের মামলায় জেলও খাটে। অনেকেরই মতে, বিজন এ সবের প্রতিবাদ করায় গৌতম তাঁকে খুন করেছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দু'বছর আগেও রেলকলোনির বস্তিতে থাকত গৌতম। পরে জমির দালালি করে পাকা দোতলা বাড়ি করে। নীচে দোকানঘর ভাড়া দিয়েছিল।
গুমা ১ পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান জেসমিন সাহাজির সঙ্গে বিজনের মতপার্থক্য বা দূরত্বের কথা এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায়। দলের কিছু কর্মী জানাচ্ছেন, জেসমিনের সঙ্গে আবার দেখা যেত গৌতমকে। সোমবার নিবেদিতা পল্লিতে এসেছিলেন জেসমিন। তিনি বিজনের সঙ্গে বিরোধের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। জেসমিনের কথায়, ‘‘আমি সংসার করতাম। বিজনদাই আমাকে ২০১৩ সালে রাজনীতিতে হাতেখড়ি দিয়েছিলেন। তাঁর খুনের ঘটনায় আমার বলার কোনও ভাষা নেই।’’ গৌতম প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘কোনও কাজের সূত্রে প্রধানের কাছে লোকজন যেমন আসতেন, গৌতমও তেমনই আসত।’’
সহ শিক্ষক বিজনের খুনের ঘটনায় শোকস্তব্ধ তাজপুর মুসলিমপাড়া এফপি স্কুলের প্রধান শিক্ষক কালী বিশ্বাস। দু’জনে একই সঙ্গে ২০১৪ সালে ওই স্কুলে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। সোমবার সকালে কালী বারাসত জেলা হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এ দিন সরকারি ভাবে এমনিতেই স্কুল ছুটি ছিল। প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘খুবই ভাল মানুষ ছিলেন। দলমত নির্বিশেষে যে কোনও মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। কেউ বিপদে পড়ে তাঁর কাছে গেলে কখনও ফেরাতেন না। এমন পরোপকারী মানুষ এখনকার সময়ে খুবই কম দেখা যায়।’’ আজ, মঙ্গলবার স্কুলে বিজনকে স্মরণ করা হবে বলে জানান তিনি।
রবিবার রাতে বারাসত জেলা হাসপাতালে গিয়েছিলেন বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তিনি বলেন, ‘‘বিজনের যে কোনও শত্রু থাকতে পারে, সেটাই ও নিজে বিশ্বাস করতে পারত না। ওই এলাকায় আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হল।’’ অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীও বলেন, ‘‘তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে বিজন গুমা এলাকায় দলের সঙ্গে ছিলেন। এখানে দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy