Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
শব্দ শুনে কাঁপুনি ধরল বুকে

ডিজের দাপটে ঘর ছেড়ে চলে গেলেন বৃদ্ধ

কালী প্রতিমার বিসর্জনের শোভাযাত্রা বেরিয়েছে। কিন্তু তার জেরে বুধবার রাতে প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার জোগাড় শ্যামনগরের বাসিন্দাদের। সন্ধে থেকে প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত চলেছে ডিজের দাপট। 

তাণ্ডব: কান-ফাটানো শব্দের সঙ্গে চলল উদ্দাম নৃত্য। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

তাণ্ডব: কান-ফাটানো শব্দের সঙ্গে চলল উদ্দাম নৃত্য। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

সুপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০৬
Share: Save:

বাহারি আলো রঙ বদলাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। সঙ্গে ঢাউস ঢাউস বক্স। কান ফাটানো গান-বাজনার সঙ্গে চলছে উদ্দাম নৃত্য।

কালী প্রতিমার বিসর্জনের শোভাযাত্রা বেরিয়েছে। কিন্তু তার জেরে বুধবার রাতে প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার জোগাড় শ্যামনগরের বাসিন্দাদের। সন্ধে থেকে প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত চলেছে ডিজের দাপট।

জানা গেল, রাস্তার আশপাশের বাসিন্দাদের কেউ কেউ শব্দ বন্ধ করার অনুরোধ করেছিলেন পুজো কমিটির কর্তাদের। কিন্তু তাতে কান দেওয়া তো দূরের কথা, উল্টে হেনস্থা হতে হয়েছে বলেও অভিযোগ। গোটা রাস্তায় পুলিশ কার্যত দেখা যায়নি বলেই অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের। একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল কাঁকিনাড়াতেও। এলাকার অনেকেই জানালেন, ভাসানে নাচানাচি হবে, বক্স বাজবে— এটা সকলে ধরেই নিয়েছেন। প্রতি বছরই এমনটা হয়। কিন্তু এ বার ডিজে অনেক বেশি বেজেছে। ফলে শব্দের অত্যাচার ছিল মাত্রাছাড়া।

পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, তাদের কাছে ডিজে নিয়ে কোনও অভিযোগ আসেনি। কিন্তু অভিযোগ না জানালে কি নড়ে বসবে না থানা? শব্দ কি কানে যায়নি পুলিশের? উত্তর মেলেনি। তবে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘পুজোর সময়ে এ ভাবে শব্দের তাণ্ডব থাকলে আমরা অনেক সময়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নিই। কিন্তু বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ব্যবস্থা নিতে গেলে গোলমালের বেশি আশঙ্কা থাকে।’’

গত কয়েক দিন ধরেই প্রতিমা বিসর্জন চলছে। তবে শব্দের তাণ্ডব সব থেকে বেশি ছিল বুধবার রাতে। মঙ্গলবার রাতেও বেশ কিছু ক্লাবের ঠাকুর ভাসানে ডিজে বক্স ব্যবহার করা হয়েছিল। এলাকার বাসিন্দা স্বপন বিশ্বাস বলেন, ‘‘এমন তীব্র আওয়াজ কোনও দিন শুনিনি। ধুপধাপ আওয়াজে বুক কাঁপছিল। বাড়ির পাশ দিয়ে একের পর এক ভাসানের শোভাযাত্রা যখন পার হচ্ছিল, দরজা-জানালা এঁটেও শব্দের থেকে পরিত্রাণ পাইনি।’’

শ্যামনগর স্টেশন রোডের বাসিন্দা অমর সরকারে বৃদ্ধ বাবা হৃদরোগী। শব্দের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন বৃদ্ধ। অমর রাস্তায় নেমে কথা বলতে গিয়েছিলেন উদ্যোক্তাদের সঙ্গে। কিন্তু কথা বলবেন কার সঙ্গে। কেউই তো কার্যত কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। কথা বললেও তা শোনা মুশকিল। অমর বলেন, ‘‘আমি এসে ওদের একজনকে বারবার আওয়াজ কমানোর অনুরোধ করি। তিনিই ওই বক্সগুলি ভাড়া দিয়েছিলেন। তিনি ইশারায় আমাকে জানান, তাঁর কিছু করার নেই। উদ্যোক্তাদের কাউকে বলতে হবে। আমি ওঁদের নেতা গোছের এক জনের কাছে গিয়ে হাত জোড় করে আওয়াজ কমানোর আবেদন জানাই।’’ তিনি জানান, কিছু শুনতে পাচ্ছেন না। বাস্তবিকই কিছু শোনার মতো পরিস্থিতিও ছিল না। এরই মধ্যে শোভাযাত্রা থেকে কিছু ছেলে এসে আমাকেই হাত ধরে জোর করে নাচানোর চেষ্টা করে।’’ অমর জানান, বাবা যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়েন, সে কথা ভেবে এক সময়ে গাড়িতে বাবাকে নিয়ে নৈহাটিতে দিদির বাড়িতে চলে যান।

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বুধবার রাতে অন্তত ১২টি ক্লাবের প্রতিমা ভাসানে ডিজে বক্স ব্যবহার করা হয়েছে। এর আগে এমন ডিজে বক্সও এলাকায় দেখা যায়নি। বিশাল উচ্চতার ডিজে বক্সে লাগানো উজ্জ্বল এলইডি আলো। তাতেই চোখ ধাঁধিয়ে যায়।

ডিজে নিয়ে বারবার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবারই উদ্যোক্তাদের পুলিশ ক্লাবগুলিকে সাবধান করে। কিন্তু তারপরেও ডিজে বক্সের ব্যবহার বন্ধ হয় না। এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত, শনি-রবিবার ছট পুজোতেও ফের তাঁদের শব্দতাণ্ডব সহ্য করতে হবে।

ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জোন ১) অজয় ঠাকুর বলেন, ‘‘ডিজে বক্সের ব্যবহার নিয়ে আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। নির্দিষ্ট অভিযোগ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Shyamnagar Sound Pollution Environment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy