Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

৫ বছর পার, বিচারের আশায় তরুণীর পরিবার 

১০ জানুয়ারি ২০১৪ সালে ওই তরুণীকে গণধর্ষণ করা হয়। এরপরে তিন অভিযুক্ত যুবক গ্রেফতার হয়। বনগাঁ মহকুমা আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। যা আজও চলছে। এর মধ্যে অবশ্য হাইকোর্ট থেকে অভিযুক্তরা জামিন পেয়ে গিয়েছে।

এই মোড় থেকেই তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তরুণীকে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

এই মোড় থেকেই তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তরুণীকে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৫৩
Share: Save:

ওই দিনটির ভয়াবহ স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি তরুণী।

ওই দিন সন্ধ্যায় গণধর্ষণ করা হয়েছিল গাইঘাটার বাসিন্দা ওই তরুণীকে। ঘটনার পর বাড়িতে মন্ত্রী সাংসদ, নেতা—এসেছেন সবাই। দোষীদের শাস্তি সুনিশ্চিত করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতিও মিলেছিল। কিন্তু আজও মেলেনি বিচার। হতাশ তরুণীর পরিবার।

১০ জানুয়ারি ২০১৪ সালে ওই তরুণীকে গণধর্ষণ করা হয়। এরপরে তিন অভিযুক্ত যুবক গ্রেফতার হয়। বনগাঁ মহকুমা আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। যা আজও চলছে। এর মধ্যে অবশ্য হাইকোর্ট থেকে অভিযুক্তরা জামিন পেয়ে গিয়েছে।

তেলঙ্গানার ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা তাঁদের মনে করিয়ে দিয়েছে মেয়ের উপর হওয়া অত্যাচারের কথা। তরুণীর বাবা বলেন, ‘‘চোখের সামনে অভিযুক্তদের দেখা বড় যন্ত্রণার। তেলঙ্গানার ঘটনায় অভিযুক্তদের গুলি করে মেরে ফেলাটাই ঠিক কাজ হয়েছে। আমার মেয়ের ক্ষেত্রেও যদি তেমনটা হত, তা হলে এত যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটাতে হত না।’’ তাঁর ক্ষোভ, এতদিন হয়ে গেল আজও মেয়েকে যারা ধর্ষণ করল তাদের সাজা হল না। উল্টে অভিযুক্তরা হুমকি দিচ্ছে। বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার কথাও বলা হচ্ছে বলে দাবি ওই তরুণীর পরিবারের।

কী ঘটেছিল?

ওই দিন সন্ধ্যায় তরুণীর বাবা মেয়েকে বই কিনে দেবেন বলে বাজারে ডাকেন। অভিযোগ, বই কিনে বাড়ি ফেরার পথে দুই যুবক তরুণীর মুখ চেপে বাইকে তুলে নিয়ে যায় একটি নির্জন জায়গায়। সেখানে আরও এক যুবক আগে থেকে ছিল। তিন জন মিলে তরুণীকে ধর্ষণ করে। মোবাইলে তরুণীর নগ্ন ছবি তুলে রাখা হয়।

ওই ঘটনার পরেও তরুণীটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেছিল। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল। গাইঘাটা থানার প্রাক্তন ওসি অরিন্দম মুখোপাধ্যায় তরুণীকে স্বামীজির জীবনী ও নীতি কথার বই কিনে দিয়েছিলেন তাঁর মনের জোর বাড়াতে। তরুণী জানান, সে সব পড়েই মানসিক জোর ফিরে পেয়েছিলেন তিনি।

ঘটনার পর থেকে এখনও আতঙ্কে একা বাড়ি থেকে বেরোতে পারেন না তরুণী। তাঁর কথায়, ‘‘যখন একা থাকি তখন ওই দিনটির কথা মনে পড়ে যায়। বিচার পেতে চাই। তবে এতদিনেও দোষীরা সাজা না পাওয়ায় আমি হতাশ।’’ পরিবারটির নিরাপত্তার কথা ভেবে বাড়িতে সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশের তরফে। অভিযোগ, এখন তাঁরাও নিয়মিত আসেন না।

কেন মামলার নিষ্পত্তি আজও হল না?

বনগাঁ মহকুমা আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী সমীর দাস বলেন, ‘‘মামলাটি এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শীঘ্রই রায় ঘোষণা হবে। শুধু আইও এবং সাক্ষ্য গ্রহণ বাকি আছে। অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়ে গিয়েছে।’’ সমীর জানান, তিন অভিযুক্তকে জেলের মধ্যে রেখে শুনানি শুরু করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তাঁরা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছে। ধর্ষণ বা গণধর্ষণের মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সমস্যা কোথায়? সমীর জানান, মূলত মেডিক্যাল অফিসার ও আইও সাক্ষ্য দিতে আসতে দেরি করেন। তাঁরা অন্যত্র বদলি হয়ে যান। এমনও হয়েছে সম্প্রতি এক পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ‘ওয়ারেন্ট’ জারি করে তাঁকে সাক্ষ্য দিতে আসতে বাধ্য করা হয়েছে। ফরেন্সিক রিপোর্ট আসতে সময় লেগে যায়। সাক্ষীরা অনেকে বিরূপ হয়ে গিয়েছেন।

বনগাঁ আদালতে এখন ৫০০টির মতো ধর্ষণের মামলা জমে আছে। তার মধ্যে অর্ধেক মামলা পকসো আইনে। সমীর বলেন, ‘‘পকসো মামলাগুলো আমরা দ্রুত নিষ্পত্তি করছি। দু’বছরে ১২টি মামলায় সাজা ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। ধর্ষণ বা গণধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে পুলিশ কর্তাদের বলা হয়েছে ১৫ দিনে চার্জশিট দিতে। তা হলে আমরা ৬ মাসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করতে পারব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Rape Justuce Gaighata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy