Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

স্বাস্থ্যের হাল ফিরবে কবে, প্রশ্ন

বাগদার সাগরপুর গ্রামের বাসিন্দা কালীপদ দাসের স্ত্রী অঞ্জলির কিছু দিন আগে পেটে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, অঞ্জলির আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে হবে। কিন্তু গ্রামীণ হাসপাতালে ওই ব্যবস্থা নেই। অগত্যা গাড়ি ভাড়া করে কালীপদবাবুরা ছোটেন রানাঘাটে। পেশায় রাজমিস্ত্রি কালীপদবাবুর পক্ষে গাড়ি ভাড়া করে যাওয়াটা খুব সহজ কথা ছিল না বলাইবাহুল্য। কিন্তু না গিয়ে উপায়ই বা কী!

সীমান্ত মৈত্র
বাগদা শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৫ ০০:৪৬
Share: Save:

বাগদার সাগরপুর গ্রামের বাসিন্দা কালীপদ দাসের স্ত্রী অঞ্জলির কিছু দিন আগে পেটে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, অঞ্জলির আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে হবে। কিন্তু গ্রামীণ হাসপাতালে ওই ব্যবস্থা নেই। অগত্যা গাড়ি ভাড়া করে কালীপদবাবুরা ছোটেন রানাঘাটে। পেশায় রাজমিস্ত্রি কালীপদবাবুর পক্ষে গাড়ি ভাড়া করে যাওয়াটা খুব সহজ কথা ছিল না বলাইবাহুল্য। কিন্তু না গিয়ে উপায়ই বা কী!

সঙ্গে অন্য এক রোগীকে পেয়েছিলেন দাস পরিবার। দুই পরিবার গাড়ি ভাড়া ভাগাভাগি করে পৌঁছন রানাঘাটে আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে। তা-ও নয় নয় করে ভাড়া বাবদই সাতশো টাকা খরচ হয়েছিল কালীপদবাবুর। রানাঘাটে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে খরচ পড়ে আরও আটশো টাকা।

রিপোর্ট নিয়ে স্ত্রীকে বাগদা গ্রামীণ হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকেরা অঞ্জলীদেবীকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে রেফার করে দেন। ফের গাড়ি ভাড়া করে ২৪ কিলোমিটার দূরে ওই হাসপাতালে পৌঁছতে হয় কালীপদবাবুদের। এমনিতে ভাড়া ৬০০ টাকা হলেও সে যাত্রা চালক চেনাশোনা থাকায় কিছু কম পড়েছিল কালীপদবাবুর। তাঁর আপেক্ষ, ‘‘বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে যদি আলট্রাসনোগ্রাফির ব্যবস্থা থাকত, তা হলে এ ভাবে হয়রান হতে হতো না। এখানে নার্সিংহোম নেই। ফলে কিছু হলেই বনগাঁয় যেতে হয়।’’

নার্সিংহোম তো দূরের কথা, বাগদায় উন্নতমানের কোনও প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিও নেই। কেন আজও বাগদায় নার্সিংহোম তৈরি হল না? কেনই বা নূন্যতম পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা কার যায় না স্থানীয় সরকারি হাসপাতালগুলিতে

বাগদা জনসংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ৪৩ হাজার। যার মধ্যে সরকারি ভাবে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করেন ৭৬ হাজার মানুষ। বেসরকারি পরিসংখ্যানে সংখ্যাটা আরও বেশিই হবে। বেশির ভাগ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। খেতমজুরি বা দিনমজুরি করেন অনেকে। তাঁদের কাছে সরকারি হাসপাতালই ভরসা। গাঁটের কড়ি খরচ করে নার্সিংহোমে চিকিৎসা করানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য অনেকেরই নেই। ফলে নার্সিংহোম তৈরি হলেও তার ভবিষ্যত অনিশ্চিত। সে কারণে কেউ বিস্তর টাকা ঢেলে নার্সিংহোম করতে উদ্যোগ করেনি বলে মনে করেন স্থানীয় মানুষজন। তা ছাড়া, ভাল মানের চিকিৎসকেরা তো বাগদায় কলকাতা থেকে একশো কিলোমিটারেরও বেশি দূরে উত্তর ২৪ পরগনার এই প্রত্যন্ত এলাকায় আসতে চান না বলে স্বাস্থ্য দফতরের কয়েক জন কর্তার সঙ্গেও কথা বলে জানা গেল। আর নামজাদা চিকিৎসকের রোগী দেখার যা খরচ, তা-ই বা কী করে জোগাবেন এলাকার গরিব মানুষ, সে প্রশ্নও আছে।

স্থানীয় মানুষের একটা বড় অংশই পারতপক্ষে হাসপাতাল চত্বর মাড়াতে চান না। অনেকেই হাতুড়ে বা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের উপরে নির্ভরশীল। ঝাড়ফুঁক, তুকতাকের উপরেও অগাধ আস্থা অনেকের। সাপে ছোবল দিলে ওঝার কাছেও নিয়ে যাওয়া হয়। জ্বর হলেও ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে রোগীকে ঝাঝাড়ফুঁক করানো হয়। এ সব যে নেহাতই অবৈজ্ঞাননিক, তা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো যায়নি এখনও এই প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায়। কয়েক বছর আগে জ্বর হওয়ার পরে ওঝার কাছে ঝাড়াতে নিয়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল এক শিশুর।

তবে ব্লকের মানুষ ক্রমশ আধুনিক জীবনের সঙ্গে সড়গড় হয়ে উঠছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য ইদানীং কলকাতায় যাচ্ছেন অনেকে। নতুন প্রজন্মের অনেকেরই দাবি, এলাকায় নার্সিংহোম, বেসরকারি উন্নতমানের ল্যাবরেটরি তৈরি হোক। আর কিছু না হোক, বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে অন্তত চালু হোক উন্নতমানের ওটি।

দিন কয়েক আগে সিন্দ্রানী এলাকার গৃহবধূ শুক্লা বিশ্বাস ভর্তি হয়েছিলেন বাগদা হাসপাতালে। সন্তানসম্ভবা শুক্লাদেবীর সিজার করানো দরকার হতে পারে। কিন্তু তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি স্থানীয় চিকিৎসকেরা। বাধ্য হয়ে ৯০০ টাকা খরচ করে বনগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানে তাঁর সিজার হয়। কন্যাসন্তান প্রসব করেছেন ওই বধূ। তাঁর পরিবারের লোকজনের বক্তব্য, বাগদা হাসপাতালে সিজারের ব্যবস্থা থাকলে এত টাকা খরচ করে বনগাঁয় যেতে হতো না।

বৃদ্ধ হরিপদ বালা শ্বাসকষ্ট নিয়ে বাগদা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে বনগাঁ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে জানা যায়, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। গাড়ি ভাড়ায় তাঁদের খরচ হয় ৪০০ টাকা। ছেলে সুশীল বলেন, ‘‘চাষবাস করে খাই। বনগাঁ হাসপাতালে বাবাকে নিয়ে আসতে যেমন টাকা খরচ হয়েছে, তেমনি বনগাঁ হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে বলে চাষের কাজও করতে পারছি না। বাগদা হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলে আমাদের এত দুর্ভোগে পড়তে হতো না।’’

(শেষ)

অন্য বিষয়গুলি:

Question Health Department Bagda Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy