Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Online Frauds

সমাজমাধ্যমে শিশু নিগ্রহের ফাঁদ, চলছে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়

এখন যে হেতু খুব কম বয়সেই সমাজমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলার ঝোঁক রয়েছে, তাই এমন শিশু বা বালক-বালিকাকে কেউ খুব সহজে গেম খেলানোর বা ‘লিঙ্কে ক্লিক’ করিয়ে ভাল কিছু পাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে যৌন বিকৃতিমূলক ভিডিয়ো দেখাতে পারে।

— প্রতীকী চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৫:৩৯
Share: Save:

অনলাইন এবং অন্যত্র শিশু-পর্নো, শিশু জোগান দেওয়ার ব্যবসা বাড়ছে রাজ্য-সহ গোটা দেশেই। ঘরছাড়া শিশুরা তো বটেই, আর কোন পথে এই চক্রের খপ্পরে পড়ছে শিশুসন্তানেরা?

সাইবার গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এই চক্রের অন্যতম ক্ষেত্র সমাজমাধ্যম। এখন যে হেতু খুব কম বয়সেই সমাজমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলার ঝোঁক রয়েছে, তাই এমন শিশু বা বালক-বালিকাকে কেউ খুব সহজে গেম খেলানোর বা ‘লিঙ্কে ক্লিক’ করিয়ে ভাল কিছু পাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে যৌন বিকৃতিমূলক ভিডিয়ো দেখাতে পারে। এই সময়ে শিশুদের এমন বহু অঙ্গভঙ্গি বা কাজ করতে বলা হয়, যার বিরাট বাজার রয়েছে শিশু যৌন নিগ্রহকারীদের মধ্যে, বিশ্ব জুড়েই। নিজস্ব গ্রুপ তৈরি করে এর পরে সেই ভিডিয়ো ও ছবি বেচা-কেনা চলে। এমনও হয়, গ্রুপের সদস্য গ্রুপে শিশুকে যৌন অত্যাচারের ভিডিয়ো দিলে তবেই নতুন ভিডিয়ো পাবে।

‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যান্টি হ্যাকিং’-এর অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘ডার্ক ওয়েবে সহজেই কেউ টর ব্রাউজ়ার ব্যবহার করে ঢুকে এমন পণ্যের নাগাল পেতে পারেন যা শিশু যৌন অত্যাচারমূলক। এমন বহু অ্যাপ রয়েছে, যেখানে ব্যবহারকারীর পরিচয় গোপন থাকে এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিজে থেকেই অ্যাপের তথ্য ডিলিট হয়ে যায়। ফলে অপরাধ সংগঠিত হলেও এ ক্ষেত্রে ধরা খুব মুশকিল। অ্যাপ সংস্থা পুলিশকেও তথ্য দেয় না। ফলে পরিবারকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। অভিভাবকেরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, এমন সফটওয়্যার ব্যবহারে জোর দিতে হবে।’’

সম্প্রতি, সামনে আসে ‘চাইল্ড সেক্সটরশন’-এর বেশ কয়েকটি অভিযোগ। যেখানে সমাজমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট থাকা শিশুদের সঙ্গে প্রথমে বন্ধুত্ব পাতানো হয়। এর পরে আস্থা অর্জন করে ফোন নম্বর জেনে তাতে ভিডিয়ো কল করা হয়। সেই ভিডিয়ো কল চলাকালীনই পর্নোগ্রাফি দেখিয়ে রেকর্ড করে নেওয়া হয় গোটা প্রক্রিয়া। এর পরে শুরু হয় পরিবারকে সরাসরি হুমকি দেওয়া। মোটা টাকা দিতে হবে দাবি করে বলা হয়, কথা মতো কাজ না হলে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হবে সব ভিডিয়ো।

কলকাতার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দাবি, গত কয়েক বছরে মারাত্মক বেড়েছে ‘চাইল্ড সেক্স ট্যুরিজ়ম’। ভ্রমণের নামে এশিয়া, আফ্রিকার মতো এমন দেশকে বেছে নেওয়া হচ্ছে, যেখানে শিশু অত্যাচার সংক্রান্ত আইন তত কড়া নয়। খোলা বাজারে শিশুর কেনাবেচা চালানো হচ্ছে ‘পিডোফিলিক’ কাজকর্মের জন্য।

মনোরোগ চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘বহু ক্ষেত্রেই অত্যাচারের শিকার শিশুদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অবাক হতে হয়। এই চক্রে পড়া শিশু বুঝতেই পারে না তার উপরে অন্যায় হচ্ছে। উল্টে দালাল এবং অত্যাচারকারীকেই আপন ভাবতে শুরু করে তারা। আদতে এমন শিশু প্রথমে এক বার হেনস্থার শিকার হয় যৌন অত্যাচারের মুখোমুখি হওয়ার সময়ে, ফের শিকার হয় ইন্টারনেটে সেই অত্যাচারের ছবি এবং ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ার সময়ে। কোনও এক বয়সে হয়তো শিশুটি বুঝতে পারে সে এক বিকৃতির শিকার। শিশুরউপরে এর প্রভাব কিন্তু সুদূরপ্রসারী।”

আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, এই প্রভাবের কথা মাথায় রেখে গত সেপ্টেম্বরে এক নির্দেশিকায় দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, এমন অত্যাচারের ভিডিয়ো-অডিয়ো বা অন্য কোনও ধরনের ‘কনটেন্ট’-কে ‘চাইল্ড সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেটিভ অ্যান্ড অ্যাবিউজ়িভ মেটিরিয়াল’ বলে উল্লেখ করতে হবে। আইনজীবী দেবকুমার চন্দ্র বললেন, ‘‘পর্নোগ্রাফি কিন্তু স্বেচ্ছায় কোনও প্রাপ্তবয়স্কের তোলানোও হতে পারে। কিন্তু শিশুর উপর সেটা হলে তা যৌন হেনস্থা এবং অত্যাচারমূলক ভিডিয়ো বলে ধরে নিতে হবে। কারণ, কোনও ভাবেই তা স্বেচ্ছায় তোলা হতে পারে না। তাই শিশুর ভবিষ্যৎ রক্ষায় ইনফরমেশন টেকনোলজি আইন এবং প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস বা পকসো-র ১৫ নম্বর ধারায় কড়া পদক্ষেপের কথা বলেছে শীর্ষ আদালত। এমন ভিডিয়ো তোলা তো বটেই, প্রকাশ করা এবং প্রচার করাও অপরাধ।’’

তবে কড়া আইনেও কি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে? পুলিশ-প্রশাসন কিন্তু এখনও দ্রুত অভিযোগ দায়ের করা এবং সার্বিক সচেতনতা বৃদ্ধির উপরেই জোর দিচ্ছে।

(শেষ)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy