Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Duttapukur Blast

‘আগে কিছু জানতাম না’

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এলাকার তৃণমূল নেতা আজিবর রহমানই বেআইনি এই কারবারের মাথা। তিনি মুর্শিদাবাদ থেকে কারিগর এনে বাজি কারখানা তৈরি করেন শামসুল আলির বাড়ি ভাড়া নিয়ে।

বারাসত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃতদের আত্মীয়রা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

বারাসত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃতদের আত্মীয়রা কান্নায় ভেঙে পড়েন। —নিজস্ব চিত্র।

ঋষি চক্রবর্তী
দত্তপুুকুর শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৩ ০৫:৪৬
Share: Save:

সাতটি প্রাণ চলে যাওয়ার পরে এ বার চলছে রাজনৈতিক তরজা। দত্তপুকুর থানার মোচপুল পশ্চিমপাড়ায় বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পরে তৃণমূলের দাবি, স্থানীয় আইএসএফ কর্মী বাজি কারখানার সঙ্গে জড়িত। আইএসএফের পাল্টা দাবি, তৃণমূল ও পুলিশের সাহায্যে বাজি কারখানা চলছিল।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এলাকার তৃণমূল নেতা আজিবর রহমানই বেআইনি এই কারবারের মাথা। তিনি মুর্শিদাবাদ থেকে কারিগর এনে বাজি কারখানা তৈরি করেন শামসুল আলির বাড়ি ভাড়া নিয়ে। আজিবরের বাড়িতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারের ফ্লেক্স দেখা গিয়েছে। বাড়ির পিছনে একটি ঘরে ১৫ বস্তা বাজিও দেখা গিয়েছে বলে দাবি স্থানীয় অনেকের। এই কারবার দেখাশোনা করত কেরামত নামে এক ব্যক্তি। আগে নিম পুকুরিয়া এলাকায় একটি বাজি কারখানা চালাত কেরামত। চলতি বছরের মে মাসে পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্ফোরণের পরে রাজ্যজুড়ে বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করতে তৎপর হয় পুলিশ। তখন গ্রেফতার হয়েছিল কেরামত। ২০২১ সালের পরে বাজির কারখানার লাইসেন্স ছিল না তার। পরে জামিন পায়। দত্তপুকুরের মোচপোল এলাকায় ফের বাজি কারখানা চালু করে সে। সেই কারখানাতেই বিস্ফোরণ ঘটেছে। বেআইনি কারখানা থেকে মোটা টাকা পুলিশ-রাজনৈতিক মহলের অনেকের কাছে পৌঁছে যেত বলে স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ উঠছে। ঘটনার পর থেকে সপরিবার পলাতক আজিবর। খোঁজ মিলছে না কেরামতেরও।

এ দিকে গোটা ঘটনা প্রসঙ্গে স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের মন্তব্যে শুরু হয়েছে বিতর্ক। মন্ত্রীর দাবি, ‘‘জানতামই না, এখানে বাজি কারখানা চলছে। বিস্ফোরণের পরে ঘটনা শুনলাম স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের কাছে। শুনেছি, আইএসএফ কর্মী রমজান আলির বাড়িতে থাকতেন বাজি তৈরির শ্রমিকেরা। ওরাই জড়িত বাজির বেআইনি কারবারে। আমি আগে জানলে পুলিশকে পদক্ষেপ করতে বলতাম।’’ সংবাদমাধ্যমে রথীন ঘোষের মন্তব্য জানাজানি হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বহু মানুষ। তাঁদের দাবি, সকলেই সব জানত। পুলিশ এলাকায় এসে বেআইনিবাজি কারবারিদের কাছ থেকে ‘মাসোহারা’ নিত। পুলিশ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।

এ দিন সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে আসেন সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার, মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বারাসত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহতদের দেখতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে ধৈর্য্য হারান কাকলি। পুলিশ-প্রশাসনের মদতে এই কারবার চলত কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে উষ্মা প্রকাশ করে তিনি বলেন, "আমি নিজে মামলা করেছি। যারা বলছে, মিথ্যা বলছে। তাদেরও ধরা হবে। যে এই কথা বলেছে, সে এলাকার মানুষ নন। আমার কাছে সব রেকর্ড আছে, কারা কী বলেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

এ দিনই এলাকায় আসেন আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী। কথা বলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। নওসাদ পরে বলেন, "আমি এনআইএ তদন্তের দাবি করছি। আইএসএফের কেউ জড়িত থাকলে আমি নিজে পুলিশকে বলব, কড়া ব্যবস্থা নিতে।’’ তৃণমূল নেতৃত্ব, পুলিশের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন তিনি। বলেন, ‘‘এনআইএ তদন্ত হলে অনেক কিছুই প্রকাশ্যে আসবে।’’

স্থানীয় বাসিন্দা রহিমা বিবি জানালেন, গ্রামের অনেকে বাজির বেআইনি কারবারের বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের বোঝাতে বাড়িতে কিছু মহিলাদের পাঠিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা আজিবর রহমান। তাঁরা নরমে-গরমে অনেক কথা বলে যান। সেই থেকে আমরা আর মুখ খুলিনি।’’ তৃণমূল বাজি কারখানার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ গ্রামের অনেকের।

এ দিন ঘটনাস্থলে আসেন, বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তরুণ ঘোষ। বিস্ফোরণস্থল ঘুরে দেখেন। তিনি বলেন, "বাম আমল থেকে এখানে বেআইনি বাজি কারখানা চলছে। তৃণমূলের জমানায় তা সংখ্যায় বেড়েছে।" সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আহমেদ আলি খান বলেন, "সব খারাপ কিছু আমাদের সময়ে তৈরি হয়েছে বলে ওঁদের মত। যদি এ কথা মেনেও নিই, তা হলেও প্রশ্ন, তৃণমূল সে সব বন্ধ করেনি কেন?"

দত্তপুকুরের বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবি তুলেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। রবিবার বিকেলে গাইঘাটার চাঁদপাড়ায় এক সভায় শান্তনু বলেন, “দত্তপুকুরের ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবি করছি। বাজি প্রকল্পের আড়ালে বোমা তৈরি হচ্ছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। এটা পশ্চিমবঙ্গের অপমান। পাশাপাশি, বহির্বিশ্বের কাছে দেশের অপমান।” দত্তপুকুরের ঘটনায় জঙ্গি যোগ থাকতে পারে বলেও অনুমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর।

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal Fireworks Duttapukur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy