রাস্তার পাশ থেকে পার্থেনিয়াম গাছ কেটে সাফ করছেন পঞ্চায়েত সদস্যেরা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
সকাল সাড়ে ১০টা। হাতে রবারের দস্তানা, মুখে কাপড়ের মাস্ক, মাথায় সাদা টুপি পড়ে কাজে নেমে পড়েছিলেন ওঁরা। কাজ বলতে, রাস্তার পাশ থেকে বিষাক্ত পার্থেনিয়াম কেটে সাফ করা। সেই সূত্রে আগাছা সাফও করছিলেন সকলে হাত মিলিয়ে।
বাগদা ব্লকের বয়রা পঞ্চায়েতের সলক এলাকায় গিয়ে দেখা গেল এই দৃশ্য। যাঁরা কাজে হাত লাগিয়েছেন, সকলেই পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। ডান-বাম সকলকেই পাওয়া গেল পাশাপাশি। এলাকা দূষণমুক্ত করার সংকল্প নিয়েছেন সকলে।
বিষাক্ত পার্থেনিয়াম গাছ সম্পর্কে গ্রামের মানুষকে সচেতন করার কাজও করছেন। জনপ্রতিনিধিদের পথে নামতে দেখে বহু গ্রামবাসীও এগিয়ে এসেছেন। স্কুল শিক্ষক, ব্যাঙ্ক কর্মী, সরকারি কর্মী বা স্কুল পড়ুয়ারাও আগাছা সাফ করার কাজে হাত লাগাচ্ছেন। সহযোগিতা মিলেছে ব্লক প্রশাসনের কাছ থেকেও। বিডিও মালবিকা খাটুয়া বলেন, ‘‘সকলে মিলে দূষণমুক্ত এলাকা গড়ে তুলতে মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে খুবই ভাল কাজ করছেন। আমরা ওঁদের সব রকমের সাহায্য করছি।’’
রাজ্যে বিধানসভা ভোটের পরে যখন বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটছে, তখন বয়রা পঞ্চায়েতের এই ঘটনা ব্যতিক্রমী নিঃসন্দেহে। যা দেখে পথচলতি এক প্রবীণ চাষিকে বলতে শোনা গেল, ‘‘গোটা রাজ্যেই যদি রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে এমন সহাবস্থান থাকত, তা হলে রাজ্যটার চেহারাই পাল্টে যেত।’’
বয়রা পঞ্চায়েতের প্রধান, সিপিএমের সবিতা বিশ্বাস ও বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধক্ষ্য তৃণমূলের প্রতিমা বিশ্বাস হাতে হাত লাগিয়ে পার্থেনিয়াম উপড়ে ফেলছিলেন রাস্তার ধার থেকে। সবিতাদেবী বললেন, ‘‘এলাকার উন্নয়নের কাজে আমরা এখানে রাজনৈতিক রঙ দেখি না। আমাদের সকলেরই উদ্দেশ্য, মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে আমাদের এলাকাকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে দূষণমুক্ত করে গড়ে তোলা।’’ পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিমাদেবীও প্রধানের কথায় সায় দিয়ে জানালেন, রাজনীতি থাক রাজনীতির জায়গায়। কিন্তু এলাকার স্বার্থে সকলেই মিলেমিশে কাজ করেন তাঁরা। উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনও দলাদলি নেই।
বয়রা পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস তিনেক আগে শুরু হয়েছিল কর্মকাণ্ড। মাঝে ভোটের জন্য কিছু দিন বন্ধ থাকলেও ফের তা চলছে। সবিতাদেবী জানালেন, পরিকল্পনাটি প্রথমে মাথায় এসেছিল পঞ্চায়েতের সচিব মলয়কুমার দত্তের। তিনি মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের অধীন এলাকা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পার্থেনিয়াম সাফ করার প্রসঙ্গটি তোলেন। পরে পঞ্চায়েতের বৈঠকে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, রাস্তায় নেমে জনপ্রতিনিধিরাই ওই কাজ শুরু করবেন। তৃণমূলের সদস্যেরাও তাতে একমত হন বলে জানান প্রধান।
গ্রামের মানুষজন জানালেন, অতীতে রাস্তার পাশে, মাঠেঘাটে মলমূত্র পড়ে থাকত। এখন সে সব দেখা যায় না। রোজই পার্থেনিয়াম ও আগাছা তোলা অভিযান চলে। হাজির থাকেন মলয়বাবুও। তাঁর কথায়, ‘‘গোটা পঞ্চায়েত এলাকা পার্থেনিয়ামে ভরে গিয়েছে। পার্থেনিয়াম শরীরে কী ধরনের কুপ্রভাব ফেলে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষ খুব বেশি সচেতন ছিলেন না। আমার বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা ছিল বলেই প্রধানকে প্রস্তাব দিই। ওঁরাও উদ্যোগী হয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছেন।’’
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই স্থানীয় রামনগর বাজার থেকে বয়রা বাজার পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার পথের দু’পাশ থেকে পার্থেনিয়াম তোলা হয়েছে এবং আগাছা কেটে ফেলা হয়েছে। মলয়বাবু জানিয়েছেন, বিএসএফ জওয়ানদেরও এই কাজে সামিল করতে পারবেন তাঁরা।
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েতের মোট সদস্য ২২ জন। ওই এলাকা থেকে পঞ্চায়েত সমিতিতে নির্বাচিত হয়েছেন তিন জন। সকলেই কাজে হাত লাগিয়েছেন। সোম-বুধ- শুক্র সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কাজ করছেন জনপ্রতিনিধিরা। এ ছাড়া, নিজের নিজের এলাকায় সভা করে মানুষকে পার্থেনিয়ামের কুফল সম্পর্কে বোঝাচ্ছেন। খোলা মাঠে বা সড়কের পাশে মলত্যাগ করা বন্ধ করতে পড়ুয়াদের নিয়ে ২২টি নজরদারি দল তৈরি করা হয়েছে। যারা ভোর থাকতে উঠে মাঠে মাঠে বাঁশি নিয়ে ঘুরছে। কাউকে খোলা জায়গায় মলত্যাগ করতে দেখলে বাঁশি বাজিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। জরিমানারও ব্যবস্থা আছে। সব মিলিয়ে এলাকার স্বাস্থ্য ফেরাতে নজির গড়ছে বাগদার এই পঞ্চায়েত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy