Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
Police

কোলের ছেলেকে হাতবদলের চেষ্টা অভাবী দম্পতির, আটকাল প্রশাসন

ঘরে অভাব। নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায় দম্পতির। তাঁদের ঘরে এসেছে ষষ্ঠ সন্তান।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

রাজীব চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২০ ০৩:০৭
Share: Save:

সাত দিনের সন্তানকে কোলে নিয়ে সোজা থানায় হাজির মা। তারপর পুলিশকে বললেন, ‘‘লালন-পালন করার সামর্থ নেই। সরকার বাচ্চাটির দায়িত্ব নিলে কেউ ওকে দত্তক নিতে পারে।’’

ঘরে অভাব। নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায় দম্পতির। তাঁদের ঘরে এসেছে ষষ্ঠ সন্তান। সদ্যোজাত সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ভাঙড় ২ ব্লকের ওই অভাবী দম্পতি। যদিও পুলিশের কাছে খবর এসেছিল, সন্তানকে বিক্রি করতে চাইছেন তাঁরা। চাইল্ডলাইন ও পুলিশের হস্তক্ষেপে ওই সদ্যোজাতের হস্তান্তর ঠেকানো গিয়েছে। ওই দম্পতি পুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে অঙ্গীকার করেছেন, তাঁরা তাঁদের সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দেবেন না।

চাইল্ডলাইন (বারুইপুর মহকুমা) সূত্রে খবর, দিন দশেক আগে ভাঙড়-২ ব্লকের পোলেরহাট অঞ্চলের ওই দম্পতির একটি পুত্রসন্তান হয়। এটি তাঁদের ষষ্ঠ সন্তান। অভাবের কারণে সদ্যোজাতকে নিজেদের কাছে রাখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দম্পতি। ঠিক করেছিলেন, সন্তানকে তাঁরা দিয়ে দেবেন গ্রামেরই এক বাসিন্দাকে। একটি সূত্র থেকে সেই খবর আসে চাইল্ডলাইনের (বারুইপুর মহকুমা) কাছে।

চাইল্ডলাইনের কো-অর্ডিনেটর অভিজিৎ বসু বলেন, ‘‘আমরা দ্রুত হস্তক্ষেপ করি। নজরদারি চলে ওই পরিবারের উপরে। জানানো হয় পুলিশকে। ওই দম্পতি খুবই দরিদ্র। মহিলা পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁর স্বামীর তেমন কোনও আয় নেই।’’ পুলিশ সূত্রে জানানো হয়, গত শুক্রবার কাশীপুর থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল ওই সদ্যোজাতের বাবাকে। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি থানায় আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই সদ্যোজাত সন্তানকে কোলে নিয়ে থানায় হাজির হন তাঁর স্ত্রী। ওই মহিলা বলেন, তাঁদের যা আর্থিক পরিস্থিতি, তাতে ওই সন্তানকে বড় করে তোলা খুব কঠিন। তবে সন্তান বিক্রির কোনও পরিকল্পনা তাঁদের ছিল না। শুধু লালন-পালনের জন্য সন্তানকে এক আত্মীয়ের হাতে দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসন তাঁদের ডেকে পাঠানোয় তাঁরা আর ওই পথে যাবেন না। সন্তানকে নিজেদের কাছেই রাখবেন। ওই মহিলা আরও অনুরোধ করেন, সরকার তাঁদের সন্তানের দেখভালের দায়িত্ব নিক। তাহলে কেউ দত্তক নিতে পারবে তাঁদের সন্তানকে। আমরা তাঁদের সংশ্লিষ্ট জায়গায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। আশা করি চাইল্ডলাইন-ও বিষয়টি সরকারের নজরে আনবে।’’

পুলিশ সূত্রে দাবি, পরে বাচ্চাটির বাবা থানায় মুচলেকা দেন। অঙ্গীকার করেন, তাঁরা সন্তানকে অন্যের হাতে দেবেন না। জেলা চাইল্ডলাইনের এক সদস্য বলেন, ‘‘মুচলেকায় বাচ্চাটির বাবা লিখেছেন, ‘ঠিক মতো লালন-পালন করতে পারব না বলে সন্তানকে দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়কে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসন বাধা দেওয়ায় (সন্তানকে) নিজেদের কাছে সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় রাখব।’’ অভিজিৎ বলেন, ‘‘ওই পরিবারটি সাহায্য চায়। সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত সকলের। গোটা ঘটনা ব্লক প্রশাসনকে জানানো হবে। পাশাপাশি, ওই দম্পতি তাঁদের সন্তানকে হস্তান্তরের চেষ্টা ফের করছেন কিনা, তা দেখতে নজরদারিও চলবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Police Baruipur Child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy