Advertisement
E-Paper

মতুয়া ধর্ম মহামেলায় ভিড়, সিএএ নিয়ে চর্চাও

দীর্ঘদিন আগেই ঠাকুরবাড়িতে রাজনৈতিক বিভাজন হয়ে গিয়েছে। এক পক্ষ তৃণমূলের। অন্য পক্ষ বিজেপির।

কামনা সাগরে পুণ্যস্নানে ভক্তদের ভিড়। ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে।

কামনা সাগরে পুণ্যস্নানে ভক্তদের ভিড়। ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৩৪
Share
Save

মতুয়া ধর্ম মহামেলার শুরুতেই গাইঘাটার ঠাকুরনগরে ঠাকুরবাড়িতে উপচে পড়ল ভিড়। শনিবার, প্রথম দিনই ছিল কামনা সাগরে (বড় একটি পুকুর) ‘পুণ্যস্নান’। তবে, উৎসবের মধ্যেও বহাল রইল সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে চর্চা, প্রশ্নও।

মতুয়াদের আরাধ্য দেবতা হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী উপলক্ষে প্রতিবার এই মেলার আয়োজন করা হয়। সিএএ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়া এবং ভোটের আবহে এ বার যেন বাড়তি ভিড় ঠাকুরবাড়িতে!

বনগাঁ জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত মেলায় প্রায় ৬ লক্ষ মানুষ এসেছেন। এর পরেও মতুয়া ভক্তদের ঠাকুরবাড়িতে আসার ঢল ক্রমশ বেড়েছে।

সকাল থেকেই ঠাকুরবাড়িতে নিজের কার্যালয়ে ছিলেন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুর। সকালে এক দল মতুয়াভক্ত সেখানে গিয়ে তাঁরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন কি না, সে ব্যাপারে মমতার কাছে জানতে চান। মমতা জানান, তাঁরা ভারতের নাগরিকই। নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন কেন? আবেদন করলে বে-নাগরিক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কোনও পরিস্থিতিতেই তাঁরা যাতে আবেদন না করেন, সে ব্যাপারে মমতা তাঁদের সতর্ক করেন। সকলেই মমতার কথায় আশ্বস্ত হন।

পুণ্যস্নান করতে এসেছিলেন মতুয়াভক্ত মন্টু বালা। তিনি বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম নিঃশর্ত নাগরিকত্ব। কিন্তু এখন বাংলাদেশের নথি চাওয়া হচ্ছে। প্রাণ বাঁচাতে আমরা পালিয়ে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে এসেছিলাম। নথিপত্র আনব কী ভাবে? আমরা চাই নাগরিকত্বের জন্য আমাদের মতুয়া পরিচয়ই যথেষ্ট বলে বিবেচিত হোক।’’

নদিয়ার দত্তপুলিয়া থেকে এসেছিলেন সুধাংশু গোসাঁই। তিনি বলেন, ‘‘২০০৩ সালে আমরা নাগরিকত্বের জন্য আমরণ অনশন করেছিলাম। সিএএ চেয়েছিলাম। কিন্তু আবেদনের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব চাইনি।’’

তবে, অন্য মতও আছে। হারাধন হালদার নামে এক ভক্ত বলেন, ‘‘এত ভিড় আগে হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দিচ্ছেন। আমরা এসেছিলাম শান্তনু ঠাকুরকে আশীর্বাদ করতে।’’ নিমাই বিশ্বাস নামে এক ভক্ত বলেন, ‘‘ঠাকুরমশাই (শান্তনু ঠাকুর) আমাদের বলেছেন, আবেদন করতে বাংলাদেশের কোনও নথিপত্র লাগাবে না। আমরা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্গে ৫ বছর যুক্ত আছি। এটাই আমাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য যথেষ্ট।’’

দীর্ঘদিন আগেই ঠাকুরবাড়িতে রাজনৈতিক বিভাজন হয়ে গিয়েছে। এক পক্ষ তৃণমূলের। অন্য পক্ষ বিজেপির। মমতা শান্তনুর জেঠিমা। শান্তনু বনগাঁর বিদায়ী বিজেপি সাংসদ তথা এ বারের প্রার্থীও। তিনি আর একটি ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’-এর সঙ্ঘাধিপতিও। তিনিও এ দিন ‘পুণ্যস্নান’ সারেন। তবে, কোনও রাজনৈতিক কথা বলেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আজ কোনও বিতর্কিত মন্তব্য করব না। আজকের দিনটা আমাদের কাছে বিশেষ দিন।’’

‘পুণ্যস্নান’ করেছেন বনগাঁর তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাসও। তিনি বলেন, ‘‘আমি মতুয়া পরিবারের সদস্য। ওপার বাংলায় ওড়াকান্দির কাছে আমাদের বাড়ি ছিল। ছোটবেলা থেকেই ঠাকুরবাড়িতে আসছি। আগেও স্নান করেছি। এর সঙ্গে ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই। শান্তনু মতুয়াদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’’

বিশ্বজিতের স্নান করাকে কটাক্ষ করে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, ‘‘এ দিকে তৃণমূল মতুয়াদের নাগরিকত্ব পাওয়ার বিরোধিতা করছে। অন্য দিকে, ভোটের জন্য স্নান করছেন প্রার্থী। এই দ্বিচারিতায় কোনও লাভ হবে না। মতুয়ারা বিজেপির সঙ্গেই আছেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 CAA

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}