কাজ চলছে জোরকদমে। —নিজস্ব চিত্র।
সুন্দরবনের দ্বীপভূমিতে তৎকালীন লেফটেন্যান্ট গভর্নর অ্যান্ড্রু ফ্রেজার আসার পরে জমিদারদের খাজনা সংগ্রহের স্বত্ত দেওয়া হয়। মেদিনীপুর, হাওড়া থেকে কয়েকজন জমিদার আসেন প্রজাদের নিয়ে। লোকলস্কর নিয়ে জঙ্গল কেটে জমি চাষ করা শুরু করেন তাঁরা। তৈরি হয় বসতি। জেলার সাহিত্যিক ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায়ের ‘স্বজনভূমি’তে তেভাগার প্রেক্ষিতে এ সবের উল্লেখ পাওয়া যায়। আজকের শহর হয়ে ওঠা নামখানাতেও গড়ে উঠতে শুরু করল ব্যবসা। ইতিহাসের সেই উত্তরাধিকারীদের বেশ কিছু মানুষই এখানকার ব্যবসায়ীদের বড় অংশ। যাঁরা এখন তাকিয়ে আছেন হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর উপরে কবে সেতু তৈরি হবে।
বছর খানেক ধরে শুরু হয়েছে কাজ। সেতু তৈরি হলে এলাকার উন্নয়ন গতি পাবে, এমনটা মনে করেন সব পক্ষই। প্রায় চার দশক ধরে দাবি ছিল এই সেতুর। তা হয়ে গেলে ব্যবসার দিক থেকে আরও গুরুত্ব বাড়তে পারে নামখানার। সেই সম্ভাবনাকেই সঙ্গী করে এলাকায় গড়ে উঠতে শুরু করেছে বেশ কিছু হোটেল। সাধারণ মানুষ জানালেন, সেতু তৈরি হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা মসৃণ হবে। আখেরে তাতে বাণিজ্য বাড়বে। কৃষিজাত পণ্যই হোক বা মাছ— বাজারজাত করা অনেক সহজ হবে। উপকৃত হবেন পড়ুয়া বা অফিসযাত্রীরাও।
তবে সেতু তৈরির জন্য হাতানিয়া দোয়ানিয়া নদীর দু’পাশে নামখানা এবং নারায়ণপুরে মোট ৯১৮টি দোকান এবং পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। বেশ কিছু ব্যবসায়ী ইতিমধ্যেই ক্ষতিপূরণের চেক নিয়েছেন। অনেকে নেননি। ক্ষতিপূরণের অঙ্ক নিয়েও অভিযোগ আছে অনেকের।
বছর খানেক আগে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের আগুন চাপা দিতে প্রথম চেক বিলি করতে এসেছিলেন এলাকার মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা। সেখানে তিনি নদীর দু’পাশেই দু’টি সুপার মার্কেট তৈরি করে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। এক বছরেও কেন তৈরি হল না সেই বাজার?
মন্টুরামবাবুর কথায়, ‘‘আমরা ইতিমধ্যেই নামখানার জন্য ৪ কোটি এবং নারায়ণপুরের জন্য ৫ কোটি টাকা জেলাশাসকের অ্যাকাউন্টে দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু সরকার প্রস্তাবিত ওই সুপার মার্কেটের জন্য জমি কিনবে না। তা কিনতে হবে ব্যবসায়ী সমিতিকেই। তারা এই দায়িত্ব নিতে দেরি করছে।’’
‘নামখানা-নারায়ণপুর যৌথ ব্যবসায়ী সুরক্ষা কমিটি’র তরফে জমি চিহ্নিত করার কথা ছিল। জমির অভাব থাকায় নদীর দু’পাশে চারটি প্লট দেখা হয় প্রস্তাবিত বাজার তৈরির জন্য। নারায়ণপুরে গাঁধী মূর্তির (এখন নেই) পিছনে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক-লাগোয়া কয়েকজনের রায়ত জমি কিনে তৈরি হওয়ার কথা ছিল এ পাড়ের বাজার। কিন্তু কাজ কিছুই এগোয়নি। কমিটির সদস্য সুবোধ দাস বলেন, ‘‘নারায়ণপুরে রায়ত জমি নেই। প্রস্তাবিত বাজারের জন্য দু’টি সরকারি প্লটের ছবি-সহ তথ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে অনেক দিন। কিন্তু সরকারি তরফে কিছু জানানো হয়নি।’’
নদীর ও পাড়ে নামখানার অবস্থা আরও খারাপ। ব্যবসায়ীরা যে টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, তার থেকেও কিছু করে টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে বাজার তৈরির জন্য— এ রকমই দাবি করছেন তাঁরা। কিন্তু বাজার তৈরি হচ্ছে কোথায়?
এই প্রশ্নই মুখে মুখে ফিরছে এখন ব্যবসায়ীদের। দু’টি প্লটের জমি দেখা হয়। তারপরে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাজার তৈরির জন্য ৭৬ লক্ষ টাকা তোলা হয়। কিন্তু যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত নন, এমন অনেক ব্যবসায়ীও টাকা দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে জটিলতার জেরে কাজ এগোয়নি। কমিটির আর এক সদস্য প্রফুল্ল মণ্ডল বলেন, ‘‘এখন একটা অচলাবস্থা চলছে। কোন জমিতে বাজার হবে, তা নিয়ে দু’পক্ষের দু’রকম মত। থানার পাশে তারাপদ বসুদের জমি দেখা হয়েছিল, কিন্তু দাম বেশি। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে বলেছি এই সমস্যার কথা। তিনি এখনও কোনও ব্যবস্থা নেননি। মিলের মাঠের জমি নিয়েও চিন্তা-ভাবনা চলছে।’’ ব্যবসায়ীদের অন্য একটি অংশ নামখানায় বাজার তৈরির জন্য থানার পাশের জমি বেছে নেওয়ার কথা বলছেন। এই জটিলতায় আদপে কাজ থমকে আছে।
ক্ষতিপূরণের জন্য তৈরি হয়েছিল ব্যবসায়ী এবং সরকারি আধিকারিকদের নিয়ে একটি যৌথ কমিটি গড়া হয়েছে ইতিমধ্যেই। ব্যবসায়ীরা জমি চিহ্নিত করলে সেখানে বাজার তৈরির প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা কমিটির। কমিটির মাথায় রয়েছেন কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক অমিত নাথ। তাঁর কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতি বা বিডিওর তরফে বাজার তৈরির কোনও প্রস্তাব এলে আমরা তা খতিয়ে দেখতে পারি।’’ নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রীমন্ত মালি জানান, ব্যবসায়ী সমিতি জমি চিহ্নিত করলে তারপরেই আমরা কাজ এগোব।’’
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy