বারুদ ও বাহুবলই বরাবর আমডাঙা ব্লকে ক্ষমতা দখলের মূলশক্তি বলে জানালেন স্থানীয় অনেকেই। প্রতীকী চিত্র।
ভোট এলেই বোমা-গুলির শব্দ আর মৃতদের পরিবারের কান্নায় কেঁপে ওঠে আমডাঙা ব্লক।
বিশ বছর ধরে এখানে ভোট মানেই রক্তারক্তি। গত দু’মাসে দুই তৃণমূল নেতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে। হিংসার রাজনীতিতে শাসক-বিরোধী সকলেরই নাম জড়িয়েছে নানা সময়ে। এই পরিস্থিতিতে গত দু’বছরে তলে তলে শক্তিবৃদ্ধি করেছে আইএসএফ। পিছিয়ে নেই বিজেপিও। শাসক তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেও বিরক্ত নাগরিক সমাজ। তাঁদের বক্তব্য, যে-ই জিতুক, বোমা-বন্দুকের সংস্কৃতি কী বন্ধ হবে আমডাঙায়?
বারুদ ও বাহুবলই বরাবর এই এলাকায় ক্ষমতা দখলের মূলশক্তি বলে জানালেন স্থানীয় অনেকেই। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে আটটি পঞ্চায়েতের মধ্যে তিনটিতে হেরেছিল তৃণমূল। বোর্ড গঠন ঘিরে রণক্ষেত্র হয় এলাকা। পাঁচ বছরেও বোর্ড গঠন হয়নি দু’টি পঞ্চায়েতে।
২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আমডাঙা। লড়াই শুরু হয়েছিল মনোনয়নপর্ব থেকেই। খুন হন এক সিপিএম সমর্থক। ভোটের দিন প্রাণ গিয়েছিল এক সিপিএম সমর্থকের। ভোটের ফলে তারাবেড়িয়া, বোদাই, মরিচা পঞ্চায়েত হাত ছাড়া হয় তৃণমূলের।সিপিএম ও বিজেপি জেতে তিনটি পঞ্চায়েতে। অগস্টের শেষ সপ্তাহে বোর্ড গঠনের আগের রাতে সিপিএম-তৃণমূলের মধ্যে বোমাবাজি শুরু হয়। খুন হন তৃণমূলের নাসির হালদার, কুদ্দুস গনি এবং সিপিএমের মুজফ্ফর আহমেদ।
তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের গোষ্ঠীকোন্দলের জেরেই ওই সময় সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি হাত মিলিয়ে জিতে যায় তিনটি পঞ্চায়েতে। ঘাসফুল শিবিরের বিক্ষুব্ধেরাও দলের প্রার্থীকে হারাতে আড়ালে সাহায্য করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।
গত কয়েক বছরে আইএসএফ এই ব্লকে শক্তিবৃদ্ধি করেছে। আইএসএফ সূত্রের খবর, সিপিএম, কংগ্রেস থেকে তাদের সংগঠনে যোগ দিয়েছেন অনেকে। তৃণমূলের বিক্ষুব্ধদের একটা অংশও আইএসএফের সঙ্গে আছেন বলে দাবি তাদের। এলাকার তরুণ প্রজন্মই তাঁদের মূল শক্তি বলে জানাচ্ছেন আইএসএফ নেতৃত্ব। তারাবেড়িয়ার বাসিন্দা আনারুল মণ্ডল বলেন, ‘‘সাধারণ ভোটারেরা সিপিএমের দিক থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন। তৃণমূলের বিকল্প সিপিএম হবে না, এটা বুঝে আইএসএফ করছেন অনেকে। মানুষকে নিরাপত্তাও দিতে পারছে আইএসএফ।’’ গত বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে আইএসএফ জোটের হয়ে প্রার্থী দিয়েছিল।
ব্লক এলাকার বেশ কিছু বুথে তৃণমূল পিছিয়ে ছিল জোট ও বিজেপি প্রার্থীর কাছে। যদিও আইএসএফ প্রার্থী তৃতীয় হন। দ্বিতীয় হলেও চমকপ্রদ ফল করে বিজেপি। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০২১ সালে চারগুণ বেশি ভোট পায় বিজেপি। ২০১৬ সালে বিজেপি পেয়েছিল ১৫,৬৯১ ভোট। ২০২১ সালে পায় ৬৩,৪৫৫ ভোট। তৃণমূল প্রার্থী জিতলেও ভোট কমেছিল। বিধায়ক রফিকার রহমান ২০১৬ সালে পেয়েছিলেন ৯৬,১৯৩ ভোট। ২০২১ সালে পান ৮৮,৯৩৫ ভোট।
আমডাঙা ব্লকের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, রাস্তার পাশে বিদ্যুতের খুঁটি, দোকানে তৃণমূলের পতাকার পাশে ঝুলছে আইএসএফের পতাকাও। সিপিএম, কংগ্রেসের পতাকা না থাকলেও অল্প কিছু এলাকায় বিজেপির পতাকা চোখে পড়ল। বিজেপির ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি অরিন্দম দে বলেন, ‘‘সিপিএম ও তৃণমূল আমডাঙায় বরাবর হিংসার রাজনীতি করেছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি মরিচায় তৃণমূল ও সিপিএমের থেকে বেশি আসন পেয়েছিল। তবু বোর্ড গঠন করতে দেয়নি। পরে বিজেপির সদস্যকে ভয় দেখিয়ে দলে টেনে বোর্ড গঠন করে। শেষ বিধানসভা নির্বাচনের ফল বুঝিয়ে দিয়েছে, সিপিএম এখানে অপ্রাসঙ্গিক। তৃণমূলও দূর্বল হতে চলেছে। সিপিএম নিজেদের বাঁচাতে আইএসএফকে সমর্থন করছে। ওদের ঝান্ডা নিয়ে মিছিল করছে। তৃণমূলের একটা অংশও আইএসএফ করছে। আমরা সংগঠন শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি।"
সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আহমেদ আলি খান বলেন, ‘‘সিপিএমের কর্মীদের উপরে অকথ্য অত্যাচার করছে তৃণমূল। গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকেই তো আমরা মার খাচ্ছি। আমাদের কর্মী খুন হয়েছেন। আইএসএফ কী করছে জানি না। শান্তিপূর্ণ ভোট হলে আমডাঙা ব্লক থেকে তৃণমূল-বিজেপি মুছে যাবে।"
আমডাঙা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতির্ময় দত্ত বলেন, ‘‘সিপিএম ৩৪ বছরে এখানে বিরোধীদের উপরে কী অত্যাচার করেছে, মানুষ তার সাক্ষী। সিপিএমের লোকেরাই আইএসএফ ও বিজেপি করে। ওরাই দুষ্কৃতী পোষে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচন ও বোর্ড গঠনের দিন বোমা-বন্দুক নিয়ে হামলা শুরু করে সিপিএম। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমডাঙা ব্লকের ত্রিস্তর ক্ষেত্রেই তৃণমূলই জিতবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy