•যানজট: নিত্যযন্ত্রণা এখানকার মানুষের। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
যানজটে জেরবার কাঁচরাপাড়া শহর। স্টেশন রোড বরাবর গাঁধী মোড় পার করে লক্ষ্মী সিনেমা পর্যন্ত পৌঁছানোটাই দুষ্কর সকাল হোক বা সন্ধ্যা। চৈত্র সেলের সময় গোটা রাস্তাই এখন বাজার!
শহর কাঁচরাপাড়ার প্রাণকেন্দ্র গাঁধী মোড়। আনন্দবাজার, হকার্স কর্নার, মণ্ডল বাজার সবই এই গাঁধী মোড়কে কেন্দ্র করে। মোড়ের আইল্যান্ডে মহাত্মা গাঁধীর মূর্তি। তাঁকে ঘিরেও হোল সেলের বাজার। এক দিকে বীজপুর থানার রাস্তা। অন্য রাস্তাটি সোজা বাগমোড় পর্যন্ত চলে গিয়েছে। দুই রাস্তাতেই ভিড় এমন যে পায়ে হেঁটে চলাই কঠিন। তার মধ্যেই অটো আর টোটোর দৌরাত্ম্য। রিকশার সংখ্যার অন্য জায়গার মতো কাঁচরাপাড়াতেও কমেছে। তবু চৈত্র সেলের বাজারের ভিড়ে বলীয়ান তারাও। গোটা পথ জুড়ে কাতারে কাতারে দোকান। হাওয়াই চটি, রেডিমেড কাপড়, শয্যা সামগ্রী, প্রসাধনের জিনিসপত্র কী নেই! শুধু গরহাজির দু’টি মাত্র জিনিস। এক, তো এত বড় পাইকারি বাজার হওয়া সত্ত্বেও পার্কিংয়ের জায়গা নেই। আর হাজার হাজার ক্রেতার জন্য নেই কোনও শৌচাগার।
কাঁচরাপাড়ার বাজার এতটাই বড় যে আশেপাশের জেলাগুলি থেকেও খুচরো ব্যবসায়ীরাও এখানে ভিড় করেন। বহুজাতিক সংস্থাগুলির একাধিক আউটলেট আছে কাঁচরাপাড়ার বাজারে। সারা বছরই যা ভিড় থাকে, তা গোটা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বাজার পায় না। কিন্তু সমস্যা হল, অপরিকল্পিত শহর হওয়ায় এখানে পরিষেবার পরিকাঠামোটাই গড়ে ওঠেনি। গত পাঁচ-সাত বছরে এই এলাকায় রাস্তা-ঘাট, আলোর ব্যবস্থায় প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে। বিধায়ক, সাংসদদের উদ্যোগে বাস স্ট্যান্ড, পানীয় জলের ব্যবস্থা, রাস্তাগুলি চেনার জন্য বোর্ড এবং সার্বিক ভাবে এলাকাবাসীর নিরাপত্তার ব্যাপারেও প্রশাসনিক পদক্ষেপ অনেকটাই শক্তপোক্ত। কিন্তু এই বাজারের যানজট আর পার্কিং সমস্যা এবং শৌচাগারে এসেই হোঁচট খেয়েছে।
কল্যাণীর বাসিন্দা সুব্রত সরকার, পলাশ মাজিরা পেশায় ব্যবসায়ী। নিয়মিত জিনিসপত্র কিনতে কাঁচরাপাড়ায় যান। এক সঙ্গে অনেক জিনিস কিনলে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়ই। নিদেন পক্ষে মোটর বাইক। কিন্তু মোটক বাইক রাখার জায়গাও সেই রাস্তাই। ক’দিন আগেই সুব্রতবাবুর মোটর বাইকটি রাস্তার ধারে রাখা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসা বাধে। ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ‘‘গাঁধী মোড়ে প্রবল যানজট হয় সরু রাস্তার জন্য। আর সেখানে পুলিশের একটি গাড়ি সারা সন্ধ্যা দাঁড়িয়ে থেকে আরও যানজট বাড়ায়। কিন্তু সাধারণ মানুষ কোথায় মোটরবাইক বা গাড়ি রাখবে, তা পুলিশকে জিজ্ঞাসা করলে উল্টে ভর্ৎসনা শুনতে হয়।’’
বীজপুর থানার দাবি, পার্কিং ঠিক করার দায়িত্ব পুলিশের নয়। তা ছাড়া, মাত্রাতিরিক্ত কিছু ঘটে গেলে সামাল দিতেই ওই ভিড়ের মধ্যেই পুলিশের গাড়ি রাখতে হয়। কাঁচরাপাড়ার এই সমস্যায় পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ীরাও। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ‘‘ক্ষমতায় যখন যাঁরা থেকেছেন, তাঁরাই কিছু মানুষকে টাকার বিনিময়ে বসিয়ে দিয়েছেন ব্যবসা করতে। আর তাতেই ভবিষ্যতের কথা না ভেবে নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে অসংখ্য দোকান গজিয়ে উঠেছে।
কাঁচরাপাড়ার উপ পুরপ্রধান মাখনলাল সিংহ বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীদেরই উচিত তাঁদের ব্যবসার স্বার্থে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা এবং শৌচাগার করা। পুরসভা কী করবে? তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে পুরসভার পক্ষ থেকে আমরা স্থানীয় মণ্ডল বাজারটি নিয়ে নতুন করে শপিং কমপ্লেক্স করার পরিকল্পনা করেছি। তা হলে যানজট এবং বাকি সব সমস্যাও কমবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy