উত্তেজনা: ঘেরাও স্বাস্থ্যকর্মী— নিজস্ব চিত্র
এক দিকে জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুর ঘটনা। স্বাস্থ্য শিবির, ওষুধপত্র, মশা মারার ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না বলে ক্ষোভে ফুঁসছেন মানুষজন। তার মধ্যে এক স্বাস্থ্যকর্মীর ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যকে কেন্দ্র করে শনিবার উত্তেজনা ছড়াল হা়ডোয়ার চৌহাটা গ্রামের বিশ্বাসপাড়ায়। ক্ষুব্ধ জনতা স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে আটকে রেখে তালা বন্ধ করে দেন।
হাড়োয়ার বিএমওএইচ অর্ধেন্দু রায় বলেন, ‘‘সাধ্য মতো ওষুধপত্র দেওয়া হচ্ছে। জ্বরে আক্রান্তদের রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের যে ভাবে হেনস্থা করা হল, তা কাম্য নয়।’’ অর্ধেন্দুবাবু জানান, গ্রামবাসীদের চাহিদা, সব সময়ের জন্য গ্রামে একজন চিকিৎসককে রাখতে হবে। তা এই মুহূর্তে সম্ভব না হলেও রবিবার আমি গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা এবং শিবিরের ব্যবস্থা করব।’’ স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাড়োয়ার শালিপুর পঞ্চায়েতের চৌহাটা গ্রামের দক্ষিণপাড়া এবং বিশ্বাসপাড়ায় মাস দু’য়েক ধরে প্রায় প্রতি বাড়িতে বাড়িতে জ্বর। বর্তমানে প্রায় ৪০ জন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি। গ্রামবাসীদের দাবি, বেশ কয়েকজনের ডেঙ্গিও হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ওই এলাকার এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা-সহ দু’জন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অভিযোগ, পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেওয়ার পরেও স্বাস্থ্য শিবির করা হচ্ছে না। রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা হচ্ছে না।
শনিবার বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতে দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামের মানুষ। স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে গ্রামের মানুষের বচসা বাধে। তারই মধ্যে এক কর্মী আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ। এতেই আগুনে ঘি পড়ে।
ওই মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীকে ধাক্কা মারেন কেউ কেউ। পড়ে যান তিনি। এরপরেই সকলকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে ঢুকিয়ে বাইরের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান বিকাশ মণ্ডল কয়েকজনকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। কোনও মতে জনতাকে বুঝিয়ে শান্ত করেন। ডেঙ্গি গোপন করার চেষ্টা চলছে অভিযোগ তুলে গ্রামবাসীরা বলেন, ‘‘গ্রামে শিবির নেই। তার উপরে দু’জনের মৃত্যুতে মানুষ যখন আতঙ্কে, সে সময়ে স্বাস্থ্যকর্মী এসে বলছেন, মৃত্যু হয়েছে তাতে আমি কী করব।’’ এ নিয়ে অবশ্য পরে কোনও মন্তব্য করেননি ওই মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী।
প্রধান বলেন, ‘‘গ্রামের অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত। তাই মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।’’ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সঞ্জু বিশ্বাসের কথায়, ‘‘জ্বর নিয়ে অনেকেই কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি। তাঁদের কয়েক জনের ডেঙ্গি হয়েছে বলে শুনেছি। ওই পঞ্চায়েত এলাকায় জ্বর নিয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে এক স্বাস্থ্যকর্মীর বেফাঁস মন্তব্যের জন্যই উত্তেজনা ছড়িয়েছে।’’ ব্লক মেডিকেল অফিসারকে দ্রুত গ্রামে চিকিৎসা শিবির করে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy