মানিকতলার সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক।—ফাইল চিত্র
বছর পঞ্চান্নের প্রৌঢ়া হাসিনা বিবির পায়ে অস্ত্রোপচার করতে হবে। শনিবার তাঁর ছেলে আমতার হাসপাতাল থেকে বি-পজিটিভ রক্তের রিকুইজিশন স্লিপ নিয়ে এক ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে আর এক ব্লাড ব্যাঙ্ক ঘুরে দুপুরে পৌঁছন সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে। ঘণ্টা দেড়েক লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরেও কখন রক্ত পাওয়া যাবে, জানতে পারেননি তিনি।
একই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে বারাসত থেকে আসা অসীমা সরকারের। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে নাতনি হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসক জানিয়েছেন, প্লেটলেট দিতে হবে। সকাল থেকেই সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কিন্তু ব্লাড ব্যাঙ্কের সব কাউন্টারে কর্মী নেই। তাই কাজ এগোচ্ছে ধীর গতিতে।
এ দিন দুপুরে মানিকতলার সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখা গেল লম্বা লাইন। অধিকাংশ কাউন্টারেই কর্মী নেই। মাত্র একটি কাউন্টারেই কাজ চলছে। জমা নেওয়া হচ্ছে রিকুইজিশন স্লিপ। কাজের চাপে ওই কর্মী হিমশিম খাচ্ছেন। রক্তের আশায় যাঁরা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁদের অনেকের মুখেই দুশ্চিন্তার ছাপ। সময়মতো রক্ত নিয়ে না পৌঁছলে রোগীর বিপদ বাড়তে পারে। অথচ, কেন ব্লাড ব্যাঙ্কের পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছেও কোনও সদুত্তর নেই।
সূত্রের খবর, শুক্রবারও দিনভর সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে সমস্যা চলেছে। প্লেটলেট না থাকায় কয়েকশো রোগীর পরিজনেরা ফিরে গিয়েছেন। রাতে সবং-সহ কয়েকটি জায়গার রক্তদান শিবির থেকে প্রায় তিনশো ইউনিট রক্ত সংগ্রহ হয়। সেই রক্তের উপাদান বিভাজনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও মানুষের হয়রানি কমেনি। অভিযোগ, রাত সাড়ে আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের কাউন্টার ফাঁকা পড়ে ছিল। ফলে কোথায় রক্ত পাওয়া যাবে, রিকুইজিশন স্লিপই বা কাকে জমা দিতে হবে, কিছুই বুঝতে না পেরে ব্লাড ব্যাঙ্কের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে ঘুরে বেরিয়েছেন লোকজন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে একটি কাউন্টারে এক জন কর্মী আসেন। কয়েকশো মানুষ তখন রক্তের অপেক্ষায় লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
সেন্ট্রাল ব্লা়ড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোর মরসুম শুরু হতেই কর্মীদের মধ্যে কাজের সময় ভাগাভাগি নিয়ে মতবিরোধ শুরু হয়েছিল। কে কত ক্ষণ থাকবেন, তা নিয়ে বচসাও হয়। শুক্রবার ‘পুজোর ছুটি’ শেষ হতেই কাজের দায়িত্ব ভাগ নিয়ে ফের সমস্যা হয়। তার জেরেই রাতে ব্লাড ব্যাঙ্কের কাউন্টারেও কোনও কর্মী ছিলেন না। এমনকি, চাহিদা অনুযায়ী প্লেটলেট বিভাজনের কাজও সম্পূর্ণ হয়নি।
যদিও রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী দাবি করেছেন, শুক্রবার একসঙ্গে অনেক রক্ত সংগ্রহ হয়েছিল। তাই সেগুলির উপাদান বিভাজনে কর্মীরা ব্যস্ত ছিলেন। রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী রক্ত জোগান দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কাউন্টারে কর্মী না থাকার বিষয়টি সাময়িক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
তবু প্রশ্ন উঠেছে, টেকনিশিয়ানরা রক্তের উপাদান বিভাজন করেন। তাঁরা তো কাউন্টারে বসেন না। তাই একসঙ্গে অনেক রক্ত সংগ্রহ হলেও কাউন্টারে কর্মী থাকবেন না কেন? যদিও এই প্রশ্নের উত্তর স্বাস্থ্য দফতর থেকে পাওয়া যায়নি। সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের অধিকর্তা স্বপন সোরেনের সঙ্গে বারবার ফোনে এবং এসএমএসে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy