এই হাসপাতালকে ঘিরে একাধিক অভিযোগ রোগীদের। নিজস্ব চিত্র
হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখাতে গেলে অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ইমার্জেন্সিতেও দ্রুত পরিষেবা মেলে না বলে অভিযোগ। তার উপরে রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হলেই ‘রেফার’ করে দেওয়া হয় কলকাতায়।
এমনই পরিস্থিতি বসিরহাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। এলাকার মানুষ জানালেন, সুপার স্পেশালিটির নামে শুধু ঝাঁ চকচকে ভবনই তৈরি হয়েছে। পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ বিস্তর।
বসিরহাট জেলা হাসপাতালের পাশেই তৈরি হয়েছে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ, হাসপাতাল ঝকঝকে হলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। অধিকাংশ সময়ে ইমার্জেন্সি বিভাগে চিকিৎসক থাকেন না। রোগীদের বহুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে হলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। রাত-বিরেতে কোনও সমস্যা হলে ঠিক মতো পরিষেবা পাওয়া যায় না। আকছার রেফার করা হয়। বসিরহাট থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে রোগীকে কলকাতায় নিয়ে যেতে যেতে অবস্থার আরও অবনতি হয়। অনেকের পথেই মৃত্যু হয়।
হাসপাতালে নানা দামী যন্ত্র ব্যবহার না করে ফেলে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, চিকিৎসকদের একাংশ হাসপাতালে চিকিৎসার পরিবর্তে বিভিন্ন নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত। সেখানেই ব্যস্ত থাকেন।
সন্দেশখালি থেকে আসা এক রোগীর আত্মীয় হরিপদ মণ্ডল বলেন, “খুলনা হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত করায় কাকুকে নিয়ে বসিরহাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে এসেছিলাম। ইমার্জেন্সিতে প্রায় দু’ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরে ডাক্তার এসে রোগীর গায়ে হাত না দিয়েই কলকাতায় স্থানান্তরিত করে দিলেন। কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি আমাদের নেই। কোনও রকমে ধারদেনা করে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে কলকাতায় নিয়ে যাই।” সুকুমার রায় নামে বসিরহাটের এক বাসিন্দা বলেন, “রাতে চিকিৎসকদের দেখা মেলে না। হাসপাতাল-সংলগ্ন বিভিন্ন নার্সিংহোমে তাঁদের দেখতে পাওয়া যায়।”
হাসপাতাল সূত্রের খবর, বর্তমানে নতুন ও পুরনো ভবন মিলিয়ে ৬০০ শয্যা রয়েছে। প্রায়ই তার বেশি রোগী ভর্তি থাকছেন। তা ছাড়াও রয়েছে বহির্বিভাগ, ইমার্জেন্সি। হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় ৮০ জন। এত রোগীর চাপ সামালানোর জন্য চিকিৎসকের সংখ্যা যে পর্যাপ্ত নয়, তা মানছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
পরিষেবার উন্নতির দাবি জানিয়েছে বিরোধীরা। বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস ঘোষ বলেন, “অধিকাংশ সময়ে চিকিৎসকেরা বাইরে থেকে ওষুধ নিয়ে আসার জন্য চিরকুট লিখে দেন রোগীদের। অনেক চিকিৎসক সরকারি নিয়ম মেনে ৮ ঘণ্টা পরিষেবা দেন না। জরুরি বিভাগে রোগীর গায়ে হাত না দিয়েই ওষুধ লেখেন। সঠিক পরিষেবা দিতে গেলে এ সব বন্ধ করতে হবে। পড়ে থাকা দামী মেশিনগুলি অবিলম্বে চালু করতে হবে। আশঙ্কাজনক রোগীদের স্থানান্তরিত করা চলবে না।”
বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হাসপাতালের ভিতর ও বাইরে অনেক উন্নতি করা হয়েছে। পরিস্রুত পানীয় জল এবং রোগীদের আত্মীয়দের রাতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিনরাত সিটি স্ক্যান হচ্ছে। ডায়ালিসিস মেশিন বসেছে। কর্মীও বাড়ানো হয়েছে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি হাসপাতাল চত্বরে বসার জায়গার উপরে ছাউনি লাগানো হয়েছে। পাওয়ার প্লান্ট বসানো হয়েছে।”
বসিরহাট হাসপাতালের সহকারী সুপার তনুশ্রী চক্রবর্তী বলেন, “সব উন্নয়ন তো এক মুহূর্তে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। আমাদের এখানে ২৪ ঘণ্টার অক্সিজেন প্লান্ট হয়েছে। ব্লাড সেপারেশন ইউনিট হয়েছে। থ্যালাসেমিয়া এইচপিএলসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। দিন-রাতে দু’বার রাউন্ড দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। প্যাথোলজিক্যাল পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন বসেছে। ধীরে ধীরে আরও উন্নতি হবে।”
কিন্তু হঠাৎ বড় কোনও ঘটনা ঘটে গেলে হাসপাতাল সামাল দিতে পারবে তো পরিস্থিতি?
সহকারী সুপারের আশ্বাস, ‘‘আমাদের হাতে যা পরিকাঠামো আছে, তাতে বড় কিছু ঘটে গেলেও আশা করছি সামাল দেওয়া যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy