Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

বন্ধ ফ্ল্যাটে ‘ভূতের’ আওয়াজ, রহস্যভেদে বিজ্ঞান মঞ্চ

আবাসনের চারতলায় ১৫৪৫ বর্গফুটের বিশাল সেই ফ্ল্যাট থেকেই নানাবিধ শব্দ পাচ্ছিলেন তাঁরা। তাতেই ‘ভূতের’ ভয়ে ঘুম উড়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল তাঁদের।

বর্ষাদেবীর ফ্ল্যাটে বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যেরা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

বর্ষাদেবীর ফ্ল্যাটে বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যেরা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৯ ০২:১৬
Share: Save:

বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে প্রায়শই শুনতে পাওয়া যাচ্ছে শব্দ। কখনও মনে হচ্ছে দুমদাম করে কেউ হেঁটে যাচ্ছে, কখনও ওই ফ্ল্যাট থেকে ভেসে আসছে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ! বন্ধ ফ্ল্যাটে এমন ‘ভূতুড়ে’ কাণ্ডকারখানায় রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল আবাসনের বাকি বাসিন্দাদের। সোমবার ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে সেই ভূত-রহস্যের সমাধান করলেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যেরা।

গত ১৩ জুন ছেলে অরণ্য রায়কে নিয়ে বিশরপাড়া-কোদালিয়া স্টেশনে ট্রেনের ধাক্কায় মারা গিয়েছিলেন কলেজশিক্ষিকা বর্ষা বিশ্বাস। তার পর থেকে এয়ারপোর্ট থানার বিশরপাড়ায় তাঁদের বিশাল ফ্ল্যাটটি তালাবন্ধ হয়ে পড়ে ছিল। প্রতিবেশীদের দাবি, আবাসনের চারতলায় ১৫৪৫ বর্গফুটের বিশাল সেই ফ্ল্যাট থেকেই নানাবিধ শব্দ পাচ্ছিলেন তাঁরা। তাতেই ‘ভূতের’ ভয়ে ঘুম উড়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল তাঁদের। ভয় এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, পাশাপাশি ফ্ল্যাটের বাচ্চারা কোনও কারণে দুমদাম শব্দ করলেও তা শুনে ভয় পাচ্ছিলেন অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা। বন্ধ ওই ফ্ল্যাটটির কিছুটা দূরে থাকেন বর্ষার মা-বাবা। ‘ভূত’ তাড়াতে এর আগে ওই ফ্ল্যাটে পুজোও দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু তার পরেও থামেনি শব্দ।

সমস্যার সমাধান করতে এ দিন বিজ্ঞান মঞ্চের উত্তর ২৪ পরগনার সম্পাদক সফল সেন-সহ সুশীল বিশ্বাস, ননীগোপাল চক্রবর্তী, শ্যামল চট্টোপাধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আবাসনের বাকি বাসিন্দাদের আবাসিকদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনায় বসেন তাঁরা। ব্যাখ্যা করেন, ‘ভূত’ নয়, ফাঁকা ফ্ল্যাটের কাচের জানলার কম্পনের শব্দই শুনতে পান প্রতিবেশীরা। পরীক্ষা করে তাঁরা দেখান, রাস্তা দিয়ে গাড়ি গেলে বা জোরে হাওয়া দিলেই মাঠের পাশের ওই ফ্ল্যাটটির জানলার কাচ শব্দ করে কাঁপে। ছাদে কেউ হাঁটলে সেই শব্দের প্রতিধ্বনিও হয় ফাঁকা ফ্ল্যাটে। তাতেই ভয় বাড়ে প্রতিবেশীদের।

ওই ফ্ল্যাটের ঠিক নীচের ফ্ল্যাটেই স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে থাকেন অমল দাস। তাঁরাই প্রথম উপরের ফ্ল্যাট থেকে নানাবিধ আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলেন। অমলবাবুর স্ত্রী জয়া বলেন, ‘‘সে সব ভয়ানক শব্দ। প্রথমে মেয়ে ভয় পেয়ে আমাকে বলে। আমিও নানা রকম শব্দ শুনতে পাই।’’ ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন বাকি আবাসিকেরাও। এ দিন অমলবাবুর ফ্ল্যাটে যান বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যেরা। বর্ষার বাবা মানবেন্দ্র বিশ্বাসের সঙ্গেও আলোচনায় বসেন। তিনি জানান, দিনে-রাতে কখনও কখনও জিনিসপত্র নিতে তিনি ওই ফ্ল্যাটে আসেন।

এর পরে বন্ধ ফ্ল্যাটটি খোলা হলে দেখা যায়, ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে পুজোর সামগ্রী, ইট-বালি। ওই সামগ্রী টানাটানি করছে ইঁদুরে। ঘরের বিশাল জানলাটি খোলা। তার পাশেই মাঠ। জোরে হাওয়া দিলেই ওই জানলার কাচে শব্দ হচ্ছে, যা ছড়িয়ে পড়ছে বদ্ধ ঘরে। পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা রাজা শিকদারের ঘরে জানালার নীচে রয়েছে প্লাইউডের ওয়াড্রোব। সফলবাবুরা বাকিদের দেখিয়েছেন, ওই ওয়াড্রোবে পা দিয়ে শব্দ করলে তার প্রতিধ্বনিই শুনতে পাচ্ছেন নীচের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা। ছাদের চিলেকোঠায় টিনের চালের উপরে প্রায়ই পাশের গাছ থেকে এসে পড়ে নারকেল-সুপারি। রাতে সেই আওয়াজও পৌঁছে যায় বহুদূর পর্যন্ত, যা শুনে এত দিন ভয় পেয়ে আসছেন আবাসিকেরা।

এ ভাবেই একের পর এক শব্দের উৎস ব্যাখ্যা করে বোঝানোয় আবাসিকদের ভূতের ভয় কমেছে অনেকটাই। মঙ্গলবার নীচের ফ্ল্যাটের অমলবাবু বলেন, ‘‘কাল রাতে আর শব্দ হয়নি। এখন সব ঠিক আছে। কোনও ভয় নেই।’’ সফলবাবু বলছেন, ‘‘শব্দ হয়তো হয়েছিল। কিন্তু তার কারণ জেনে যাওয়ায় সেই ভয়টা আর বাসিন্দাদের মধ্যে নেই। এই কাজটা করতেই আমরা গিয়েছিলাম।’’

তবে বর্ষার বাবা মানবেন্দ্রবাবু মঙ্গলবার দাবি করেন, বিশাল ওই ফ্ল্যাটটি কম দামে হাতানোর জন্যই ভূতের গল্প ইচ্ছাকৃত ভাবে ছড়ানো হচ্ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘মৃত্যুর কিছু দিন আগে থেকে মেয়ে ওই ফ্ল্যাট ছেড়ে আমাদের কাছে থাকত। আমিও শুনছিলাম ভূতের গল্প। সকলের কথায় পুজোও দিয়েছি। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম, ফ্ল্যাটটা কম দামে হাতিয়ে নেওয়ার জন্য এ সব গল্প ছড়ানো হচ্ছিল।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy