দুষ্কৃতীরা নেমে গুলি চালাচ্ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তা ধরা পড়েছে। (ইনসেটে) ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া গুলি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
দোকানপাট খোলা। জনবহুল রাস্তা। হঠাৎই দুই যুবক বাইকে এসে একটি মদের দোকানের সামনে থেমে প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ল। ছুটোছুটি শুরু হয়ে যায়। ফাঁকা হয়ে যায় রাস্তাঘাট। তবে এই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। ধরা পড়েনি দুষ্কৃতীরাও।
শনিবার রাত ৯টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ শহরের মতিগঞ্জ এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, গুলি চালিয়ে তারা ফের বাইকেই এলাকা থেকে পালায়।
ওই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন শহরবাসী। বহুদিন পর শহরে এ ভাবে প্রকাশ্যে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটল। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। ওই এলাকায় রাস্তায় ও দোকানে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার বলেন, ‘‘ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। কী কারণে দুষ্কৃতীরা গুলি চালাল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
বাসিন্দাদের দাবি, মদের দোকানে বিভিন্ন রকমের লোক এসে ভিড় করেন। তার জন্যই এই ঘটনা। রবিবার এলাকার লোকজন মদের দোকান বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। থানায় স্মারকলিপি জমা দেন। বাসিন্দাদের দাবি, মহিলারা ওই পথ দিয়ে যাতায়াত করতে পারেন না। কটূক্তি শুনতে হচ্ছে। পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘ওই মদের দোকানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে প্রশাসনকে বলা হয়েছে। মদ্যপরাই গুলি চালিয়েছে।’’
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ মনে করছে, কাউকে ভয় দেখানোর জন্য গুলি চালানো হয়েছে। যদিও ওই ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার পুলিশের ভাষায় ‘ক্রাইম’। এলোপাথাড়ি গুলি চালালে মানুষের প্রাণও যেতে পারে।
বাসিন্দাদের দাবি, অতীতের তুলনায় আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু পুলিশি নজরদারি আরও বাড়ানো প্রয়োজন। লোকসভা ভোটের পর বনগাঁ আলাদা পুলিশ জেলা হয়েছে। তারপর থেকে বড় কোনও অপরাধের ঘটনা না ঘটলেও পুলিশের নিয়মিত ধরপাকড়ে শিথিলতা দেখা গিয়েছে বলে শহরবাসীর অভিযোগ। বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করা জরুরি বলে মনে করেন নাগরিকেরা। সীমান্তবর্তী মহকুমা হওয়ায় বাংলাদেশ ও নদিয়া থেকেও দুষ্কৃতীরা বনগাঁয় এসে আশ্রয় নেয় বলে অতীতে বহু ঘটনায় দেখা গিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মতিগঞ্জ এলাকায় দোকনাপাট, বসতবাড়ি, মন্দির এবং হাট রয়েছে। কাছেই বনগাঁর পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যের অফিস। সেখানে বনগাঁ- বাগদা সড়কের পাশে রয়েছে একটি সরকারি অনুমোদিত মদের দোকান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীরা মদের দোকান লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল। তারপর বাইকে চেপে যশোর রোড ধরে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বনগাঁ থানার আইসি মানস চৌধুরী ও এসডিপিও অশেষ বিক্রম দস্তিদার আসেন। ভয়ে দোকানিরা দ্রুত দোকানপাট বন্ধ করে বাড়ি ফিরে যান। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘ওই মদের দোকানে রোজ সন্ধ্যায় দূর থেকে যুবকেরা মদ কিনতে ভিড় করেন। সড়কে বাইক রেখে তাঁরা দোকানে ঢোকায় যাতায়াত করা যায় না। গুলি চালানোর ঘটনায় আমরা খুবই আতঙ্কে রয়েছি।’’
বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘পুলিশের আরও তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন।’’ মদের দোকানের মালিক অশোক ঘোষ বলেন, ‘‘সরকারি অনুমতি নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছি। পরিবেশ সুস্থ রাখা হয়।’’ লোকসভা ভোটের পর থেকে বনগাঁ শহরে রাজনৈতিক ডামাডোল অস্থিরতার জেরে পুরবাসী আতঙ্কিত ছিলেন। সম্প্রতি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তখনই গুলি চলায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বিজেপি নেতা মধুসূদন মণ্ডল বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের আনাগোনা বেড়েছে। লাগাম টানা না গেলে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য আরও বাড়বে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy