উদ্যোগ: কালুপুরে রক্তদান শিবিরে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
গরমের সময়ে প্রতিবারই রক্তের সঙ্কট দেখা যায় রাজ্য জুড়ে। যে সব বছর ভোট থাকে সেই মরসুমে, সমস্যা আরও তীব্র আকার নেয়। এ বছরও ব্যতিক্রম নয়। বিভিন্ন হাসপাতালে রক্তের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তবে ব্যতিক্রম বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল এবং বারাসত জেলা হাসপাতাল।
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক মহকুমার ১২ লক্ষ মানুষের চাহিদা মিটিয়েও নদিয়া জেলার কয়েকটি সরকারি হাসপাতালকে রক্তের জোগান দিচ্ছে। হাসপাতাল ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার পর্যন্ত ব্লাডব্যাঙ্কে ৩৪৫ ইউনিট রক্ত মজুত রয়েছে। রোজ গড়ে ৩০-৩২ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হচ্ছে রোগীদের জন্য। নদিয়া জেলার বিভিন্ন হাসপাতালকে গড়ে ৮-১০ ইউনিট রক্ত দিচ্ছেন বনগাঁ হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। মহকুমা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে মার্চ মাস থেকেই রোজ গড়ে ৩০০ ইউনিটের উপরে রক্ত মজুত থাকছে।
২০১৮ সালে এখানে ২৪ ঘণ্টা ব্লাডব্যাঙ্ক পরিষেবা চালু হয়। গত বছর করোনা পরিস্থিতির সময়ে রক্তের ঘাটতি তৈরি হয়েছিল। সেই সমস্যারও মোকাবিলা করতে পেরেছিলেন ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক তথা চিকিৎসক গোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘নিয়মিত ভাবে প্রচার চালানো হয় এ বিষয়ে। রাজনৈতিক দল, ক্লাব, ধর্মীয় সংগঠন, জনপ্রতিনিধি, পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয় এবং পরিকল্পিত ভাবে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। তার ফলেই এখন আমরা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে অন্য হাসপাতালের রক্তসঙ্কট মেটাতে রক্ত দিতে পারছি।’’
এখন রাজনৈতিক দলগুলি শিবির করছে না। জনপ্রতিনিধিরাও ব্যস্ত ভোটের প্রচারে। এখন ক্লাব বা সামাজিক সংগঠনের উপরেই ভরসা করা হচ্ছে। রবিবারই গোপালের আবেদনে সাড়া দিয়ে বনগাঁর কালুপুরে একটি সংস্থা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে। সেখানে ১৫০ জন রক্ত দিয়েছেন। মহিলারাও ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে এত বড় শিবির হয়নি বলে জানা যাচ্ছে। সংস্থার সম্পাদক বাসুদেব পাল বলেন, ‘‘ভোটের সময়ে যাতে মানুষের রক্তের অভাব না হয়, সে কারণেই আমরা এগিয়ে এসেছি।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মার্চ মাসে ১৬টি শিবির হয়েছে। এপ্রিল মাসে ইতিমধ্যেই ১০টি শিবিরের বুকিং হয়ে গিয়েছে। দোল উৎসবের সংগঠক, মুসলিম জলসার সংগঠকেরাও হাসপাতালের আবেদনে সাড়া দিয়ে শিবির করতে এগিয়ে এসেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে রমজান মাসেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ মহকুমায় রক্তদান করেন। পুলিশ, পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেও নিয়মিত রক্তদান শিবির করা হয়। এমনকী, হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও প্রয়োজন পড়লে রক্তদান করেন এখানে। গোপাল বলেন, ‘‘নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ যে কোনও রোগীর অস্ত্রোপচারে আগে প্রয়োজন ছাড়াই রক্ত নিয়ে রাখেন। এটা বন্ধ করা উচিত। তা হলে আরও বেশি মানুষকে রক্ত দেওয়া সম্ভব হবে।’’
বারাসত জেলা হাসপাতালেও এখন রক্তের জোগান স্বাভাবিক। হাসপাতাল সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘এখন গড়ে রোজ ১০০ ইউনিটের উপরে রক্ত মজুত থাকছে। রোজ রক্তের প্রয়োজন হচ্ছে ২৫-৩০ ইউনিটের মতো।’’
কী ভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা যাচ্ছে? সুব্রত বলেন, ‘‘এখন রক্তের রক্তের উপাদান পৃথকীকরণের (কম্পোনেন্ট সেপারেশন) ব্যবস্থা হয়েছে। ফলে একটা রক্ত ভেঙে চার ভাগ করা যাচ্ছে। তা ছাড়া, শিবিরগুলিও নিয়মিত করা সম্ভব হচ্ছে।’’ ব্যারাকপুর মহকুমাতেও রক্তের জোগান স্বাভাবিক আছে। বিএন বসু মহকুমা হাসপাতালের সুপার সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রক্তের মজুত স্বাভাবিক। শিবির হচ্ছে।’’ বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রক্ত যা আছে ব্লাড ব্যাঙ্কে, তাতে মোটামুটি চলে যাচ্ছে। এখন রক্তদান শিবির একটু কম হচ্ছে। তাই আমাদের কাছে যে সব রক্তদাতার তালিকা আছে, তাঁদের হাসপাতালে ডেকে নেওয়া হচ্ছে প্রয়োজন মতো।’’
—সহ প্রতিবেদন: নবেন্দু ঘোষ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy