থানার রিসিভড কপি মানে অনুমোদন নয়।
দীর্ঘ দিন ধরেই বনগাঁ শহরে চোঙার তাণ্ডব চলছে। রাস্তায় বেরিয়ে তারস্বরে বাজতে থাকা চোঙার আওয়াজে নাজেহাল হওয়াটা মানুষের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চস্বরে মাইক বাজে নানা কারণে। মানুষ ফোনে কথা বলতে পারেন না। ফোনের রিংটোন শোনা যায় না। গাড়ির হর্ন শুনতে না পেয়ে বিপদ ঘটে। প্রবীণ মানুষজন অসুস্থ বোধ করেন। পড়ুয়াদের লেখাপড়ায় মনঃসংযোগ নষ্ট হয়।
দিন কয়েক আগে ওই সংক্রান্ত খবর আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বাসিন্দাদের বক্তব্য, তারপর থেকে শহরে চোঙার তাণ্ডব কমেছে অনেকটাই।
শব্দ তাণ্ডব রুখতে নড়চড়ে বসেছে বনগাঁ মহকুমা প্রশাসন ও বনগাঁ থানার পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় শিবতলা এলাকায় গভীর রাতে তারস্বরে মাইক বাজছিল। পুলিশ সেখানে তল্লাশি চালিয়ে কয়েকটি সাউন্ড বক্স বাজেয়াপ্ত করেছে। বুধবার দুপুরে শব্দ দূষণ রুখতে মহকুমাশাসকের দফতরে বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেখানে মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পুলিশ, পুরসভা, ব্লক প্রশাসন, পরিবহণ, স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে শহর এলাকা থেকে চোঙার তাণ্ডব বন্ধ করতে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১। সরস্বতী পুজোয় কোনও ভাবেই শব্দবিধি লঙ্ঘন বরদাস্ত করা হবে না। ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বৈঠক করে তা সরস্বতী পুজোর উদ্যোক্তাদের জানিয়ে দেওয়া হবে। ২। ডিজে বক্স কোনও ভাবেই বাজাতে দেওয়া হবে না। ৩। চোঙার তাণ্ডব বন্ধ করতে প্রশাসনের তরফে নির্দিষ্ট ফোন নম্বর সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার করা হবে। পুলিশ-প্রশাসনকে মানুষ খবর দিতে পারবেন।
মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘শব্দ তাণ্ডব বন্ধ করতে পর্যায়ক্রমে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা। শব্দ দূষণের কারণে বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ আমরা নষ্ট হতে দিতে পারি না। কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
দিন কয়েক আগে বনগাঁ থানার আইসি সতীনাথ চট্টরাজ শহরের মাইক ব্যবসায়ীদের নিয়ে থানায় বৈঠক করেছেন। বৈঠকে আইসি তাঁদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এখন থেকে তাঁরা যেন মাইক-চোঙা ভাড়া দেওয়ার আগে উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে মাইক-চোঙা বাজানোর প্রশাসনিক অনুমতিপত্র দেখে নেন। কারণ, অনেক সময়েই অনুমতি ছাড়াই উদ্যোক্তারা অনুষ্ঠান করছেন। সেখানে ব্যবসায়ীরা মাইক ভাড়া দিচ্ছেন। সতীনাথ জানান, এখন থেকে প্রশাসনের অনুমতি নেই, এমন অনুষ্ঠানে মাইক ভাড়া দিলে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ করা হবে। বাজেয়াপ্ত করা হবে চোঙা। ব্যবসায়ীদের স্পষ্ট করে এটাও পুলিশের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রশাসনের অনুমতিপত্রে যে ক’টি চোঙা বাঁধার নির্দেশ থাকবে, ব্যবসায়ীদের সে ক’টি চোঙাই ভাড়া দিতে হবে। ৬৫ ডেসিবেলের বেশি জোরে চোঙা বাজানো যাবে না। শব্দ পরিমাপক যন্ত্র ব্যবসায়ীদের রাখতে হবে। পুলিশ জানিয়েছে, অনেক সময়েই দেখা যাচ্ছে, কোনও অনুষ্ঠানের জন্য উদ্যোক্তারা, থানায় মাইক বাজানোর অনুমতির জন্য আবেদন করছেন। থানা থেকে ওই আবেদনপত্রের ‘রিসিভড কপি’ নিয়ে গিয়ে চোঙা বাজানো হচ্ছে। আইসি বলেন, ‘‘উদ্যোক্তাদের একাংশের ধারণা, মাইক বাজানোর আবেদন করে রিসিভড কপি নিলেই কাজ শেষ। কিন্তু ওঁদের বুঝতে হবে, থানার রিসিভড কপি মানে অনুমোদন নয়। অনুমতি দেওয়া হয় মহকুমাশাসকের দফতর থেকে। থানায় করা আবেদনটি পুলিশের তরফে মহকুমাশাসকের দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy