শোকার্ত: বলরাম দাসের পরিবার। বিষ্ণুপুরে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
বছর পঁচিশ ধরে আর্সেনিক দূষণের ফলে অসুস্থ জগবন্ধু মণ্ডল। অসুস্থ তাঁর স্ত্রীও। প্রতি মাসে ওষুধ লাগে হাজার পাঁচেক টাকার। জগবন্ধু চাষবাসের কাজ করেন। তাঁর পক্ষে সংসারের খরচ চালিয়ে চিকিৎসার খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
বিনা খরচে সরকারি চিকিৎসাও মেলে না তাঁদের। সমস্যায় পড়েছেন ওই দম্পতি। জগবন্ধুর মতো সমস্যা আর্সেনিক-অসুস্থ অনেকেরই। মঙ্গলবার দুপুরে আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটি গাইঘাটা বিডিও অফিসে অসুস্থদের চিকিৎসা, বিশুদ্ধ পানীয় জলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়। প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়।
কমিটির রাজ্য সম্পাদক অশোক দাস জানান, প্রশাসনের কাছে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল ও আক্রান্তদের চিকিৎসার দাবি করা হয়েছে। চাঁদপাড়া ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে সপ্তাহে একদিন চিকিৎসার দাবি করা হয়েছে।
গাইঘাটার বিএমওএইচ ভিক্টর সাহা জানান, চাঁদপাড়া ব্লক হাসপাতালে দু’দিন আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীদের জন্য চিকিৎসার ব্যাবস্থা রয়েছে। বিনামূল্যে ওষুধও দেওয়া হয়।
গোটা উত্তর ২৪ পরগনায় বহু মানুষের আজ একই অবস্থা। পানীয় জলে অতিমাত্রায় আর্সেনিক জেলার ২২টি ব্লকের মানুষের কাছেই জীবনমরণ সমস্যা। পানীয় জল এখানকার অনেক মানুষের মৃত্যু ডেকে আনছে। অশোক জানান, দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মাত্রায় আর্সেনিক মিশ্রিত পানীয় জল খেয়ে এখানে মারা গিয়েছেন ২১২ জন। এখনও প্রায় এক হাজার মানুষ গুরুতর অসুস্থ। গাইঘাটা ব্লকে মারা গিয়েছেন ৩৪ জন। অনেকে মৃত্যুর দিন গুনছেন।
গ্রামবাসী জানান, অতীতে বাড়ির টিউবওয়েলের জল পান করে আর্সেনিক বিষ শরীরে ঢুকেছে। এখন অবশ্য গ্রামে গ্রামে পানীয় জলের গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। ওই জলেও উচ্চমাত্রায় আর্সেনিক রয়েছে। নিয়মিত পরীক্ষাও হয় না। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ওই জল তাঁরা পান করেন। আর্সেনিক থেকে বাঁচতে অনেকে পানীয় জল কিনে খাচ্ছেন। বাড়ির টিউবওয়েলের জলও মানুষ পান করেন। অশোকনগরের বিনিময়পাড়াতেও আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে অতীতে কয়েকজন মারা গিয়েছেন। অশোকবাবু অভিযোগ, আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধে কোনও সরকার যথার্থ পদক্ষেপ করেনি। রোগীদের চিহ্নিত করে তাঁদের উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়নি।
কমিটির তরফে বেশ কিছু গভীর নলকূপের জল সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে তাতে আর্সেনিকের উপস্থিতি স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি। পাইপ লাইনের জলেরও একই অবস্থা। কমিটির দাবি, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (হু) মতে প্রতি লিটার জলে ০.০১ মিলিগ্রামের বেশি আর্সেনিক থাকলে তা খাওয়া বা রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায় না। এখানে ওই সীমা অতিক্রম করেছে।
আর্সেনিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জেলাতে প্রচুর নদী, খাল, বিল, বাওর পুকুর রয়েছে। সেই জল ধরে রেখে পানীয়ের ব্যবস্থা করলে একদিকে যেমন আর্সেনিক সমস্যা মেটানো সম্ভব তেমনই বন্যা প্রতিরোধও সম্ভব। তা ছাড়া ওই জলে আর্সেনিকও নেই।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানানো হয়েছে, নৈহাটি থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গঙ্গার জল নিয়ে আসার কাজ চলছে। ওই জল পরিস্রুত করে পানীয় হিসাবে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাবে। জেলার হাবড়া ২, গাইঘাটা, দেগঙ্গা ব্লক-সহ ৭টি ব্লকের মানুষ এর ফলে উপকৃত হবেন। এডিবি-র টাকায় জেলাতে দু’টি প্রকল্প চলছে। ওই কাজ শেষ হলে রাজারহাট, হাড়োয়া, বাগদা, বনগাঁ পুরসভা এলাকার মানুষের আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের সমস্যা মিটবে।জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ জ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গাইঘাটা ব্লকে ৭১টি আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ বসানো হয়েছে।’’ জ্যোতি বলেন, ‘‘চলতি বছরের মধ্যে গাইঘাটা ব্লককে আর্সেনিকমুক্ত ব্লক হিসাবে ঘোষণা করা হবে। ওই ব্লকের অনেক স্কুলে প্ল্যান্ট বসানো হয়েছে। ৪০৩টি গভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy