বছর বছর গঙ্গাসাগর মেলার বাজেট বাড়ছে। দু’বছর আগেও মেলার বাজেট ছিল আনুমানিক ১৫০ কোটি টাকা। চলতি বছরে সেই বাজেট প্রায় ২৫০ কোটি ছুঁই ছুঁই বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। তবুও সাড়া বছর গঙ্গাসাগরে থাকা নাগা সন্ন্যাসীদের মোটা টাকার বিদ্যুৎয়ের বিল মেটাতে হয়। মেলার সময়েও ছাড় দেওয়া হয় না বিদ্যুৎ মাশুলে। এই নিয়েই এ বার ক্ষোভ প্রকাশ করলেন গঙ্গাসাগর মেলার নাগা সাধুরা।
প্রশাসন সূত্রের খবর, এ বার গঙ্গাসাগর মেলায় শুধু আলোক সজ্জায় খরচ হয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকা। কিন্তু অভিযোগ, নাগা সন্ন্যাসীদের বিদ্যুতের বিল সরকার মকুব করছে না। কাউকে তিন হাজার তো কাউকে পাঁচ হাজার টাকা বিদ্যুতের বিল দিতে হচ্ছে। নাগা সন্ন্যাসী চেতন গিরি বলেন, “গঙ্গাসাগরের পবিত্র ভূমি, নাগা বাবাদের জমি। এখানে বছরের পর বছর ধরে নাগা বাবারা রয়েছেন। একটা-কী দু’টো আলো জ্বলে আমাদের আখড়ায়। আমাদেরই সেই বিল দিতে হয়। আমরা সাধুসন্ত, কোথা থেকে টাকা পাব? এত কোটি কোটি টাকা খরচ করে মেলা হচ্ছে প্রতি বছর। আমাদের বিদ্যুতের বিল সরকারের মুকুব করা উচিত।” দীর্ঘ দিন ধরে শৌচাগারের সমস্যায় ভুগছিলেন তাঁরা। আবেদন-নিবেদনের পরে বছর দু’য়েক আগে নাগা সন্ন্যাসীদের জন্য শৌচাগার তৈরি করা হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের তরফে। মেলা প্রাঙ্গণে সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন নির্মাণ হলেও নাগা সন্ন্যাসীদের আখড়া নির্মাণের তেমন উদ্যোগ চোখে পড়ে না বলে অভিযোগ। আর এক নাগা সাধু থানাপতি মহন্ত নিত্যানন্দ গিরি বলেন, “নিজেদের উদ্যোগেই নাগা সন্ন্যাসীদের আখড়া তৈরি করতে হয়। এই আখড়া তৈরির জন্য আমরা কোনও সরকারি সাহায্য পাই না। উল্টে মেলার সময়ে নানা ভাবে আমাদের হেনস্থা করা হয়। আখড়ার সামনে ও পিছনে যাতায়াতের রাস্তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভক্তদের আসতে অসুবিধা হয়।” নদিয়া থেকে এসেছেন নাগা সন্ন্যাসী অজয়নন্দ গিরি। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকারের কোনও উৎসাহ নেই সাধুদের নিয়ে। রাজ্য সরকার যদি আড়াইশো কোটি টাকা এই মেলার জন্য খরচ করতে পারে, তা হলে সাধুদের এই কুঠির জন্য সামান্য বিদ্যুতের বিল দিতে পারে না?”
নাগা সাধুদের সমস্যার কথা জানা নেই বলেই দাবি করেছেন রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতরের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তবে বিষয়টি খোঁজ দেখে সমাধানের আশ্বাস দেন। মন্ত্রী বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। যাতে সমস্যার সমাধান হয়, সেই চেষ্টা করা হবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)