দীর্ঘ দিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা সোদপুরের অমরাবতী মাঠে বিভিন্ন প্রকল্পের পরিকল্পনা আগে থেকেই জানতেন পুর কর্তৃপক্ষ। এমনকি, ওই সমস্ত প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তও হয়েছিল পানিহাটি পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে। গত জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে সেই বৈঠকের রেজ়োলিউশনেও তার উল্লেখ রয়েছে। যদিও বৈঠকে একাধিক পুরপ্রতিনিধি হাজির ছিলেন না বলেও সূত্রের খবর।
সোদপুরে প্রায় ৮৫ বিঘা ওই মাঠের মালিক ‘সোসাইটি ফর দ্য প্রোটেকশন অব চিল্ড্রেন ইন ইন্ডিয়া’ (এসপিসিআই)। ওই সংস্থা পরিচালিত ছেলেদের হোম ১৯৯০ সালে বন্ধ হয়ে যায়। তার পর থেকে মাঠের ভিতরে পার্কিং লট, পুরসভার অস্থায়ী ভাগাড় ও দোকান তৈরি হয়েছিল। কিন্তু মাঠটি আর কোনও কাজে ব্যবহার করেনি অলাভজনক ও সমাজসেবী ওই সংস্থা। সম্প্রতি ওই মাঠের একটি বড় অংশ আবাসন প্রকল্পের জন্য বিক্রির পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জল্পনা তৈরি হয়। পাশাপাশি, বাকি জমিতে সুইমিং পুল, কমিউনিটি সেন্টার, ক্রীড়াঙ্গন তৈরির মতো বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্প তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় এসপিসিআই। দিনকয়েক আগে গোটা বিষয়টি জানতে পেরে ওই মাঠ অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সূত্রের খবর, জানুয়ারিতেই পুরসভাকে চিঠি দিয়ে এসপিসিআই ওই জমিতে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্প তৈরির কথা জানিয়েছিল। বোর্ডের বৈঠকে স্থির হয়, পুরসভাকে সঙ্গে নিয়েই সুইমিং পুল, কমিউনিটি সেন্টার, ক্রীড়াঙ্গন তৈরি করবে ওই সংস্থা। তার জন্য পুরপ্রধানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হবে। তাদের রিপোর্ট বোর্ডের বৈঠকে পেশ করা হবে।
বৈঠকের রেজ়োলিউশনে এ-ও রয়েছে যে, পানিহাটির বিধায়কের পুত্র তথা চেয়ারম্যান পারিষদ (জল) তীর্থঙ্কর ঘোষ এই বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনার জন্য ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বৈঠক ডাকার প্রস্তাব দেন। পুরপ্রধান মলয় রায় বলেন, ‘‘ওই সংস্থা চিঠি দিয়ে কিছু প্রস্তাব দিয়েছিল। সেই মতো জনকল্যাণমূলক প্রকল্প যদি করা হয়, তার জন্য একটি কমিটি গঠনের পরিকল্পনা হয়েছিল। তাই তীর্থঙ্কর বৈঠকের কথা বলেছিলেন।’’
কিন্তু দীর্ঘ দিন অব্যবহৃত ওই জমিতে প্রকল্পের বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনের অনুমতি না নিয়েই বোর্ড বৈঠকে সিদ্ধান্ত হল কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। বৃহস্পতিবার রেজ়োলিউশনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই প্রশ্ন উঠেছে, আবাসন ছাড়া বাকি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প তৈরিতে ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও কি করেছিলেন শাসকদলের একাংশ?
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)