Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Migrant workers

কাজ কই, ঘর ছাড়ছেন মানুষ 

আমপানের পরে এখনও কাজকর্মের সুষ্ঠু ব্যবস্থা হল না সুন্দরবনের গ্রামে। এই পরিস্থিতিতে ঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নির্মল বসু 
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২০ ০৯:৩৭
Share: Save:

বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়েছিলেন রতন বৈদ্য, গণেশ হাউলিরা। মুখ ভার। একরাশ অভিযোগ নিয়ে বললেন, ‘‘করোনার মধ্যে আটকে পড়েছিলাম ভিনরাজ্যে। খাওয়া জুটছিল না। ভেবেছিলাম, দেশের বাড়িতে এসে দু’মুঠো খাবার ঠিক মিলবে। কোথায় কী! আবার ফিরতে হচ্ছে তামিলনাড়ুতে।’’

হিঙ্গলগঞ্জের সামসেরনগরের কালীতলায় বাড়ি তাঁদের। জানালেন, আমপানে জমি-জিরেত সব নদীর জলে ডুবেছিল। বাঁধ ভাঙা জলে পুকুরের মাছও সব ভেসে যায়। সরকারি টাকায় ঘর সারানো হলেও চাষ, মাছ কিছুই ফেরেনি। তাই পিছুটান ভুলে কাজের খোঁজে ফের যেতে হচ্ছে ভিনরাজ্যে। ভবেশ বলেন, ‘‘এলাকায় কাজের পাকাপাকি ব্যবস্থা না হলে খাব কী? এ ভাবে কত দিন অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটাব?’’

কিন্তু একশো দিনের কাজ যে দিচ্ছে সরকার? রতন বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজ মানে তো আর সারা বছরে একশো দিনের বেশি কাজ নয়। আর তাতে ক’টা টাকাই বা পাব? অন্য রাজ্যে কাজ করলে সারা মাসে অন্তত বিশ হাজার টাকা রোজগার। এটুকু ব্যবস্থা কি আমাদের জন্য করতে পারে না কেউ? তা হলে মাসের পর মাস এ ভাবে বাড়ি ছেড়ে অন্যের দেশে পড়ে থাকতে হয় না!’’

আমপানের পরে এখনও কাজকর্মের সুষ্ঠু ব্যবস্থা হল না সুন্দরবনের গ্রামে। এই পরিস্থিতিতে ঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন উত্তমদের মতো অনেকেই।

সন্দেশখালির কাঠখালির বাসিন্দা মিঠুন মণ্ডল দেড় বিঘা জমিতে ধান ও মাছ চাষ করে কোনও রকমে সংসার চালাতেন। আমপানে তাঁর ওই এক ফালি জমি এক মাস ধরে নোনা জলে ডুবে ছিল। সে জমিতে ধান চাষ আপাতত সম্ভব নয়। পুকুরে নোনা জল থাকায় মাছ চাষের অবস্থাও তথৈবচ। তাই সংসার চালাতে গ্রামের আরও কয়েকজনের সঙ্গে কেরলে পাড়ি দিয়েছেন তিনি।

সন্দেশখালি কান্দাপাড়ার নিশিকান্ত সর্দার মেছোভেড়ি দেখাশোনার কাজ করতেন। আমপানে নদীর জলের তোড়ে সে ভেড়ি নোনা জলে ভরে যায়। মাছ ব্যবসায়ীর ক্ষতি হওয়ায় কাজ গিয়েছে নিশিকান্তর। তাঁর স্ত্রীর কথায়, ‘‘কাজ হারিয়ে স্বামীর দিশেহারা অবস্থা। সংসার আর চলে না। গ্রামের কয়েকজন যাচ্ছিলেন ভিনরাজ্যে। স্বামীও সেই সিদ্ধান্তই নিলেন।’’ মিনাখাঁর হরিণহুলো গ্রামের সুজিত দাস ছ’বিঘা জমি লিজে নিয়ে মাছ চাষ করতেন। আমপানে বাঁধ ভেঙে ভেড়ির সব মাছ ভেসে যায়। ব্যবসা গুটিয়ে সুজিত আপাতত সোনারপুরে এক দোকানে কাজ নিয়েছেন।

মাধবকাটি গ্রামের বলাই মণ্ডল মেদিনীপুরে ধান কাটার কাজে গিয়েছেন। তাঁর স্ত্রীর কথায়, ‘‘এখানে কোনও কাজ নেই। তাই স্বামীর বাড়িতে থাকার কোনও উপায় নেই।’’

কিন্তু এত মাসেও এলাকায় বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করে উঠতে পারল না প্রশাসন? মিনাখাঁর বিধায়ক উষারানি মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা যতটা পারি একশো দিনের কাজের মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে সুযোগ করে দিয়েছি। তা সত্ত্বেও অনেকেই বাড়তি অর্থের জন্য অন্য জেলা বা রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Migrant workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy