প্রতীকী চিত্র
চম্পাহাটির সুশীল কর কলেজ থেকে এ বার কলাবিভাগের তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল সিমেস্টারের পরীক্ষা দিচ্ছেন গোসাবা ব্লকের কচুখালি গ্রামের সন্দীপ মণ্ডল। সামনেই পরীক্ষা। অনলাইন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সম্প্রতি ৮০০ টাকা মাসিক কিস্তিতে ফোন কিনেছেন সন্দীপ। কিন্তু সমস্যায় পড়েছেন ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে। অভাবী পরিবারের ছেলে সন্দীপ চম্পাহাটিতে মেসে থেকেই পড়াশোনা করতেন। করোনার জেরে কলেজ ও মেস বন্ধ থাকায় কচুখালিতে গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এ বার বাড়ি থেকে অনলাইনের মাধ্যমে কলেজের পরীক্ষা দিতে হবে। কিন্তু আমাদের এই প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ খুবই খারাপ। নিজস্ব অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ছিল না। বাধ্য হয়ে মাসিক কিস্তিতে ফোন কিনতে হয়েছে। কিন্তু আদৌ ইন্টারনেট পরিষেবা পাব কিনা জানি না।’’
গোসাবার ঝাউখালি গ্রামের তিথি দাস বাঘাযতীনের সম্মিলনী মহাবিদ্যালয়ে পড়েন। কলেজ, মেস বন্ধ থাকায় আপাতত ঝাউখালিতে গ্রামের বাড়িতেই রয়েছেন। সেখান থেকেই অনলাইনের মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে হবে। মেয়ের পরীক্ষার জন্য তাঁর বাবা সুব্রত দাস ধারদেনা করে নতুন মোবাইল কিনে দিয়েছেন। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ঠিকমতো প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করা এবং পরীক্ষা শেষে আধঘণ্টার মধ্যে উত্তরপত্র জমা দেওয়ার কাজ হবে কিনা, তা নিয়েই চিন্তিত তিথি। তাঁর কথায়, ‘‘এখান থেকে পরীক্ষা দেওয়া অসম্ভব। অন্য কোথাও থেকে পরীক্ষা দেওয়া যায় কিনা সেটাই ভাবছি।’’ ইউজিসির নিয়ম মেনে ১ অক্টোবর থেকে রাজ্যের সমস্ত কলেজের তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল সিমেস্টারের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। অনলাইনেই হবে পরীক্ষা। চলবে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত। ইতিমধ্যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পরীক্ষার সূচি ঘোষণা করে দিয়েছে। কিন্তু মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে সন্দীপ, তিথিদের মতো সমস্যায় পড়েছেন প্রত্যন্ত এলাকার বহু ছাত্রছাত্রীই। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুপুর ১২টা থেকে ২টো পর্যন্ত দু’ঘণ্টার পরীক্ষা হবে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইট বা কলেজের ওয়েবসাইট থেকে প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করে পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষার শেষে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে উত্তরপত্র অনলাইনের মাধ্যমেই জমা করতে হবে।সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের কুমিরমারি, কচুখালি, ঝাউখালি, সাতজেলিয়া-সহ বাসন্তী ও ক্যানিং পূর্ব বিধানসভার গ্রামীণ এলাকার পরীক্ষার্থীরা খুবই চিন্তিত। কারণ, প্রত্যন্ত বহু এলাকাতেই ঠিকমতো ইন্টারনেট সংযোগ নেই। রয়েছে বিদ্যুতের সমস্যা। অনেক পরীক্ষার্থীর নিজস্ব অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলই নেই। প্রত্যন্ত ওই সব এলাকায় নেই সাইবার কাফে বা তথ্য মিত্র কেন্দ্রও। আবার অনেক পড়ুয়া অনলাইন ব্যবস্থায় অভ্যস্তও নন।
পরীক্ষার্থীদের সমস্যার কথা ভেবে বেশ কিছু কলেজ অবশ্য নিজেদের উদ্যোগে বিকল্প ব্যবস্থা করেছে। সুন্দরবনের পাঠানখালির হাজি দেসারথ কলেজ কর্তৃপক্ষ সরাসরি পরীক্ষার্থীদের থেকে উত্তরপত্র জমা নেওয়ার জন্য বিভিন্ন দ্বীপে কলেজের কর্মীদের তৈরি রেখেছেন। জীবনতলার বেগম রোকেয়া মহাবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রত্যন্ত এলাকার পরীক্ষার্থীদের জন্য কলেজে দু’টি ক্লাসরুম স্যানিটাইজ় করে তৈরি রেখেছেন। কোনও পরীক্ষার্থী চাইলে কলেজে এসে ওই পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিতে পারবেন এবং সরাসরি কলেজেই উত্তরপত্র জমা দিতে পারবেন। বেগম রোকেয়া মহাবিদ্যালয় অধ্যক্ষ হিমাদ্রী চক্রবর্তী ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের কলেজের বহু পরীক্ষার্থী প্রত্যন্ত গ্রামের গরিব পরিবারের। তাঁদের কাছে উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। ওই সব পরীক্ষার্থীর সমস্যার কথা ভেবে কলেজে বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করেছি।’’
হাজি দেসারথ কলেজের অধ্যক্ষ তরুণ মণ্ডল বলেন, ‘‘বহু এলাকায় ইন্টারনেটের সমস্যা রয়েছে। ওই এলাকার ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যাতে উত্তরপত্র জমা করতে পারে সে জন্য কলেজের বেশ কিছু কর্মীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিভিন্ন দ্বীপে।’’
ক্যানিংয়ের বঙ্কিম সর্দার কলেজের অধ্যক্ষ তিলক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি কোনও পরীক্ষার্থী উত্তরপত্র আপলোড করতে না পারেন, তা হলে যেন সঙ্গে সঙ্গে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমি তাঁদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করব।”
ভাঙড় মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বীরবিক্রম রায় অবশ্য বলেন, ‘‘আমার এলাকায় ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তাঁদের তেমন কোনও সমস্যা নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy