লাইনের ধারে এ ভাবেই বসে থাকেন হকারেরা। নিজস্ব চিত্র।
শেষ মুহূর্তে নজর পড়ে, ছুটে আসছে মৃত্যুদূত। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। স্ত্রীকে এক ধাক্কায় পাশে সরিয়ে দিতে পারলেও রক্ষা করতে পারেননি নিজেকে। ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেলেন গোসাবার কচুখালির বাসিন্দা তারক মণ্ডল ওরফে রাখাল (৫৫)।
বুধবার সকালে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ক্যানিং লাইনের বেতবেড়িয়ার এই ঘটনায় জনরোষ গিয়ে পড়ে রেলের উপরেই। লাইন আটকে শুরু হয় বিক্ষোভ।
কিন্তু কেন?
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, একে তো কোনও প্ল্যাটফর্ম নেই এই স্টেশনে। ট্রেন এলে ঘোষণা করা হয় না। তারপরে লাইনের ধার জুড়ে বসে থাকে হকারেরা। হকারদের জন্যই নাকি এ দিন বেঘোরে প্রাণ দিতে হল তারকবাবুকে।
সকাল তখন প্রায় সাড়ে ৬টা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জাকির আখন্দ, আনার ঢালিরা জানালেন, স্ত্রীকে নিয়ে রেললাইন পার হচ্ছিলেন তারকবাবু। সে সময়ে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিল আপ ক্যানিং লোকাল। ওই দম্পতি যখন ট্রেনের পিছন দিক দিয়ে লাইন পার হচ্ছিলেন, সে সময়ে ২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিয়ে ডাউন ক্যানিং লোকাল ঢুকে পড়ে (ওই ট্রেনটি বেতবেড়িয়ায় দাঁড়ায় না।) কোনও রকমে স্ত্রীকে রেল লাইন থেকে ঠেলে সরিয়ে দেন তারকবাবু। কিন্তু তিনি নিজে লাইনের ধার ঘেঁষে বসে থাকা হকারদের জন্য আর সরে আসতে পারেননি। ট্রেন তাঁকে ধাক্কা মেরে বেরিয়ে যায়। লাইনের ধারের দোকানগুলির জন্যই রাখালবাবুকে মরতে হল বলে অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শীদের।
এই ঘটনার জেরে সকাল ৯টা থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। ঘণ্টা দু’য়েক পরে রেল পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের লেভেল ক্রসিংয়ের প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ ওঠে।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় রেল অবরোধের ফলে চারটি ট্রেন দেরিতে চলেছে। ওই স্টেশনে লেভেল ক্রসিং-সহ অন্যান্য বিষয়গুলি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ এ দিন বিক্ষোভের জেরে রেল পুলিশ লাইনের ধারে জবরদখল করে থাকা বেআইনি অস্থায়ী দোকানপাটও সরিয়ে দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা রশিদ সর্দার জানালেন, ক্যানিং শাখার মধ্যে বেতবেড়িয়া অন্যতম ব্যস্ত স্টেশন। পাশেই রয়েছে বাজার, রাস্তা। প্রতিনিয়ত স্কুল পড়ুয়া থেকে শুরু করে প্রচুর লোকজন এই স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেন। অথচ এখানে কোনও লেভেল ক্রসিং নেই। লাইনের ধারে গজিয়ে উঠেছে অস্থায়ী দোকানপাট। অনেক সময়ে লাইন পেরোতে গিয়ে দোকানের জন্যই সমস্যা হয়। হুমড়ি খেয়ে পড়তেও হয় অনেককে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, সকাল ৬টা, সাড়ে ৬টা, ৭টার ডাউন ক্যানিং লোকাল বেতবেড়িয়া স্টেশনে দাঁড়ায় না। আবার রাত ৮টা ১০ ও ১০টা ১৫ মিনিটের আপ ক্যানিং লোকালও বেতবেড়িয়ায় দাঁড়ায় না। ট্রেন যাওয়া-আসার কথা মাইকে ঘোষণা না করায় ওই সময়গুলিতে বিপদের আশঙ্কা আরও বাড়ে।
রেল পুলিশ জানতে পেরেছে, ওড়িশা থেকে ফেরার পথে বিদ্যাধরপুরে এক আত্মীয়ের বাড়ি যাবেন বলে বেতবেড়িয়ায় নেমেছিলেন তারকবাবুরা। কিছু কেনাকাটা করে লাইন পেরোতে গিয়েই এই বিপত্তি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy