বিদেগঙ্গায় আলু চাষে ক্ষতি। ছবি তুলেছেন নির্মল বসু
সুন্দরবনে বেড়াতে এসে ঝড়বৃষ্টির মধ্যে ভুটভুটি থেকে পড়ে মৃত্যু হল এক পর্যটকের। সোমবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে বাসন্তীর ঝড়খালি আইপ্যাডের কাছে লঞ্চ ঘাটে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম অমিতেশ পন্ডা (২১)। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ে।
এ দিন বসিরহাটে ঝড়-বৃষ্টিতে গাছ পড়ে আহত হয়েছেন এক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী-সহ তিন জন। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভোরে বৃষ্টি শুরু হয়। ঝড়ের দাপট বেশি থাকার কারণে কিছু জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে যায়। একই সঙ্গে শিলাবৃষ্টির ফলে মাঠে থাকা সর্ষে গাছ এবং আমের মুকুলের ক্ষতি হয়।
মাটিয়ার নড়লি গ্রামে একটি বড় গাছ মাটির বাড়ির উপর ভেঙে পড়ে। ওই বাড়িতে ছিলেন দুই মহিলা ও এক কিশোর। নিজামুদ্দিন গাজি নামে ওই কিশোর এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। গুরুতর আহত হন তাঁরা। তার মা ও ঠাকুমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা গাছের ডাল কেটে ও মাটি সরিয়ে তিনজনকে উদ্ধার করে।
স্থানীয় বাসিন্দা রাকিব মোল্লা, ফতেমা বিবি বলেন, ‘‘বৃষ্টি কমতেই মাটি আলগা হয়ে গাছটি বাড়ির উপরে ভেঙে পড়ে। দ্রুত গ্রামের মানুষ উদ্ধার কাজ শুরু না করলে বড় বিপদ হত।’’
সোমবার সন্দেশখালির দুর্গামণ্ডপ গ্রামে বেশ কয়েকটি গাছ ভেঙে তারের উপরে পড়ায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় বিকেল পর্যন্ত লোডশেডিং ছিল। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে উত্তর ২৪ পরগনা জুড়ে সর্ষে, মুসুর, আলু ও আমচাষের ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের দাপটের সঙ্গে শিলাবৃষ্টির জন্য জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা পাকা সর্ষে ঝরে পড়েছে জমিতেই। পাকা মুসুরের উপরে বৃষ্টির জল পড়ায় তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। একদিকে বাজারে দাম নেই, তার উপর বৃষ্টির জলে ধুয়ে মাটির নীচে থাকা আলু উপরে বেরিয়ে পড়েছে। শিলাবৃষ্টির জন্য আলুর উপরে দাগ তৈরি হয়েছে বলে জানালেন অনেক চাষি।
জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা অরূপ দাস বলেন, ‘‘জেলায় ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টি এবং সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। তার জন্য মুসুর, সর্ষের মতো যে সব ফসল কাটার সময় হয়ে গিয়েছিল, সে সবের ক্ষতি হয়েছে। জেলায় মোট সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। বেশ কিছু জমিতে আলু রয়ে গিয়েছিল। তারও ক্ষতি হয়েছে।’’
ক্ষতি হয়েছে আমের মুকুলেরও। সঞ্জয় মৌলিক নামে দেগঙ্গার চৌরাশির এক আমচাষি বলেন, ‘‘আগাম টাকা দিয়ে বিভিন্ন এলাকার কয়েকশো আম গাছ লিজে নিয়েছিলাম। প্রচুর মুকুল ঝরে গিয়েছে। মুকুল পচে যাওয়ার আশঙ্কাও আছে।’’ এ ব্যাপারে জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক হৃষিকেশ খাঁড়া বলেন, ‘‘বৃষ্টি, ঝোড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে আমের ফলনের ক্ষতি হয়েছে। মোট ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
জমিতে থাকা পাকা মুসুরিতে জল লাগলে রান্নার সময় সেই ডাল গলে না। তাই বাজারে দাম না মেলার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে চাষিদের মধ্যে। একই অবস্থা সর্ষে চাষেরও। আবু তাহের নামে এক চাষি বলেন, ‘‘পাকা ফসল কাটব বলে সবে মনস্থির করেছিলাম, কিন্তু সময় দিল না।’’
সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে আলু চাষে। এমনিতেই বাজারে এখন তেমন ভাবে আলুর দাম মিলছে না। চাষিদের কথায়, ‘‘শনিবার পর্যন্ত বাজারে ২০০ টাকা মন (৪০ কেজি) মানে ১ কিলোগ্রাম ৪ টাকায় বিকিয়েছে আলু।’’ আলু চাষি সুকুমার সর্দার বলেন, ‘‘বাজারে দাম বাড়লে তুলে নেব ভেবে আলু জমিতে রেখেছিলাম। বৃষ্টিতে মাটি ধুয়ে সব আলু জমির উপরে বেরিয়ে পড়েছে। তার উপরে শিলাবৃষ্টির জন্য এই আলুর উপর পচন দাগ তৈরি হবে। সব দিক থেকেই ক্ষতির মুখে পড়লাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy