বিস্ফোরণের অভিঘাতে উড়ে গিয়েছে বাড়ির ছাদ। দত্তপুকুরের মোচপোল গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।
বাড়ির দেওয়ালে লম্বা লম্বা ফাটল। চিড় ধরেছে ছাদেও। মাঝেমধ্যে চাঙড় খসে পড়ছে ঘরে। বাইরের দেওয়ালেও ফাটল স্পষ্ট। বিস্ফোরণের অভিঘাতে ঘরে থাকা খাট মাঝ বরাবর ভেঙে গিয়েছে। দরজা, জানালা, বারান্দা ভেঙে অবস্থা এমন যে বৃষ্টি হলেই জল ঢুকে যাচ্ছে। নতুন তৈরি ঘরেও ছেলেমেয়ে-সহ পরিবার নিয়ে কোনও মতে সিঁড়ির নীচে রাত কাটছে।
এমন ক্ষতির আশঙ্কাতেই লোকালয়ের ভিতরে বাজির কারবারের প্রতিবাদ করেছিলেন দত্তপুকুরের মোচপোলের বাসিন্দাদের একাংশ। যার খেসারত হিসেবে পুলিশি হেনস্থা ও ‘দাদা’দের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল বলেও অভিযোগ। ফলে ক্ষতির আশঙ্কা জেনেও চুপ করে গিয়েছিলেন। বিস্ফোরণের পরে সেই আশঙ্কাই সত্যি হল মোচপোলের গোটা দশেক পরিবারের। তার মধ্যে বৃষ্টি বাড়িয়ে দিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলির ভোগান্তি। এই সঙ্কট উতরোনোর পথ খুঁজছে পরিবারগুলি।
দত্তপুকুর থানার মোচপোলে বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল থেকে অল্প দূরত্বে বাড়ি তাজমিরা বিবির। দিন দশেক আগে ইটের দেওয়াল তুলে ছাদ বানিয়ে ঘরে থাকতে শুরু করেছিলেন। এখন নতুন সেই বাড়ির দেওয়ালেই বড় বড় ফাটল ধরেছে। ফাটলগুলো এমনই যে ঘরে থাকার অবস্থা নেই। তাজমিরা বলেন, ‘‘যখন বিস্ফোরণ হয়, তখন ছাদে ছিলাম। হঠাৎ কান ফাটানো আওয়াজ। দেখলাম, সামনের বাড়ির ছাদ প্রায় উড়ে এসে আমাদের বাড়ির উপরে পড়ল। দৌড়ে নেমে এসেছিলাম। ঘরে ঢুকে দেখি, বাড়ির সামনে কিছুই আস্ত নেই। ভেঙেচুরে সব খসে খসে পড়ছে।’’ তাজমিরার স্বামী সাহাবুদ্দিন আলি রাজমিস্ত্রির সঙ্গে জোগাড়ের কাজ করেন। ধার দেনা করে ঘর বানিয়ে দিন দশেক আগেই সেখানে ওঠেন। সাহাবুদ্দিনের কথায়, ‘‘নতুন বাড়ির কিছুই আর অক্ষত নেই। জানালার কাচ, দরজার একাংশ সব ভেঙে গিয়েছে।’’
সদ্য তৈরি বাড়ির জন্য ধারদেনা প্রচুর হয়ে আছে। তার মধ্যে ফের ঘর মেরামত করবেন কী করে, সেই চিন্তাই রাতের ঘুম কেড়েছে সাহাবুদ্দিনদের। অথচ বাড়ির এমন বিপজ্জনক অবস্থায় পরিবার নিয়ে বসবাস করলে আরেক ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের দাবি, ‘‘সবাই দায় ঠেলাঠেলিতে ব্যস্ত। আমাদের কথা কেউ ভাবছেনই না।’’
বিস্ফোরণে রাতারাতি পরিবার নিয়ে ঘরছাড়া তাজ মহম্মদ ও মুজিবর গাজি। সামান্য কিছু জিনিসপত্র নিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন সামনের দোতলা বাড়িতে। তাজ মহম্মদ, মুজিবর জানাচ্ছেন, লোকালয়ে বেআইনি বাজি তৈরি হলে বিস্ফোরণ হতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই সকলে প্রতিবাদ করেছিলেন। সেই সময়ে পুলিশকেও জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের হুমকি দিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া হয় বলে দাবি দু’জনেরই।
তাজের কথায়, ‘‘ঘটনার সময়ে মাঠে ছিলাম। শব্দ পেয়ে এসে দেখি, বাড়ি সব লন্ডভন্ড। রান্নাঘর-সহ বাড়ির সর্বত্র ফাটল ধরে গিয়েছে। রান্নাঘরের টালির চাল উড়ে গিয়েছে। সেই থেকেই বাড়ি ছাড়া।’’ সামনের বাড়ির প্রতিবেশী কয়েক দিনের জন্য থাকতে দিয়েছেন বলে জানান তাজ। বৃদ্ধ মাকে আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। স্ত্রীকে বলেছেন কয়েক দিনের জন্য বাবা-মায়ের কাছ থেকে ঘুরে আসতে।
কিন্তু এ ভাবে কত দিন? উত্তর খুঁজছেন বছর চল্লিশের যুবক। আপাতত, নতুন করে বাড়ি মেরামত করার আর্থিক অবস্থা নেই বলে জানাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি। তাদের কথায়, ‘‘নেতা-মন্ত্রীরা আসছেন। সবাই দেখে চলে যাচ্ছেন। কেউ সাহায্যের কথা বলছেন না। কোনও কিছুতে না থেকেও আজ আমাদের নিদ্রাহীন রাত কাটাতে হচ্ছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy