ঘেরাও: অভিযুক্তদের আটকে রাখেন গ্রামবাসী। নিজস্ব চিত্র।
রাত-বিরেতে আদালত বসিয়ে এমনিতেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে কাকদ্বীপে। সোমবার রাতে আদালত থেকে জামিন করিয়েও টাকা না মেলায় অভিযুক্তদের মারধরের অভিযোগ উঠল আইনজীবী, ল’ক্লার্ক-সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। শীতের রাতে পুকুরের ঠান্ডা জলে কয়েকজনকে দাঁড় করিয়ে রেখে অত্যাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে।
ঘটনা জানাজানি হতেই মঙ্গলবার সকালে গ্রামবাসীদের রোষে পড়েন অভিযুক্ত এক আইনজীবী, তিন ল’ক্লার্ক এবং এক আইনের ছাত্র। গোলমালের সময়ে ফাঁকতালে পালান চতুর্থ বর্ষের ওই আইনের ছাত্র। পুলিশ চারজনকে উদ্ধার করে থানায় আনে। পরে গ্রেফতার করা হয় তাঁদের। মঙ্গলবার বিকেলে ব্যক্তিগত বন্ডে ছাড়া পেয়েছেন ধৃতেরা। জেলা পুলিশ সুপার তথাগত বসু বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হবে।’’
ঘটনার নিন্দায় সরব কাকদ্বীপ আদালত বার অ্যাসোসিয়েশন। বারের সভাপতি মানস দাস বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের পক্ষে অত্যন্ত লজ্জাজনক। বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাগর মেলায় চুরি, মদ খেয়ে ঝামেলা পাকানো, শান্তিভঙ্গের মতো কিছু অভিযোগের জন্য সোমবার ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ভাটার সময়ে সাগর থেকে বন্দিদের আদালতে আনতে দেরি হয়ে যায় বলে দাবি করে পুলিশ। সোমবার সন্ধের পরে অভিযুক্তদের আদালতে আনা হয়। কয়েকজন আইনজীবী তাঁদের জামিন করান।
সমস্যা শুরু হয় তার পরেই।
শীতের রাতে তাঁদের অক্ষয়নগরে ল’ক্লার্ক অনাথবন্ধু দাসের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জামিনের বন্ডের টাকা, আইনজীবীদের ফি এবং অন্যান্য টুকিটাকি খরচ বাবদ এক এক জনের কাছে ১০-৩০ হাজার টাকা চাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ওই অভিযুক্তেরা। কয়েকজন সুযোগ বুঝে কেটে পড়ে। কয়েকজন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাতেই আইনজীবীদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে ছাড়া পান।
কিন্তু আটকে পড়েন ১০ জন। না তো তাঁদের পকেটে অত টাকা ছিল না। না পরিবার-পরিজনের সাহায্য পাননি। টাকা না মেলায় তাঁদেরই আটকে রেখে রাতভর হেনস্থা, মারধর করা হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। সেখানে আইনজীবী দেবাশিস মিদ্যা ছাড়াও ল’ক্লার্ক অনাথবন্ধু দাস, কৌশিক ধাড়া, বব্রুবাহন গিরি এবং ওই আইনের ছাত্র ছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনার কথা রাতে জানলেও এগোতে সাহস পাননি। কিন্তু দিনের আলো ফোটার পরেও ওই ১০ জন ছাড়া পাচ্ছেন না দেখে তাঁরা সরব হন। গ্রামবাসীদেরও আইনজীবীরা ধমক-ধামক দেন বলে অভিযোগ। বলা হয়, এ সব নিয়ে মাথা না ঘামাতে। এরপরেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন গ্রামবাসী। অভিযুক্ত পাঁচজনকে মারধর করে ঘেরাও করে রাখা হয়।
মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, উত্তরপ্রদেশের তিন জন ছাড়াও নদিয়া, বর্ধমান, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনার ওই অভিযুক্তদের বসিয়ে রাখা হয়েছে। গ্রামবাসীর হাতে আটক আইনজীবীরাও।
মেলায় সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাঘুরির জন্য ধরা পড়েছিলেন মেটিয়াবুরুজের আব্দুল গাজি। তিনি বলেন, ‘‘টাকা-পয়সা নাই। শীতের রাতে জামাকাপড় পরে পুকুরে ১০টি করে ডুব দিতে বলা হয়েছিল। মারের ভয়ে তা-ও করেছি।’’ উত্তরপ্রদেশের জেন্টর কুমার বলেন ‘‘রিকশা চালাই। পাঁচ দিন ধরে বন্দি। উকিলবাবুরা আদালত থেকে ছাড়িয়ে আনল। আবার তারাই আটকে রেখে মারধর করল।’’
অভিযুক্ত আইনজীবী দেবাশিস মিদ্যা বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে। আমরা বরং ওঁদের শীতের রাতে আশ্রয় দিই। পারিশ্রমিক চাওয়ায় কয়েকজন পালিয়ে যায়। কয়েকজন টাকা দেয়। বাকিদের গ্রামবাসীরা এসে চোর ভেবে মারধর করে। সকালে ওই দশজন আমাদের বিরুদ্ধেই মারধরের অভিযোগ তোলে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy