—ফাইল চিত্র।
কথায় কথায় চটকলে তালা ঝোলানো গত কয়েক বছরে নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে। গত তিন মাসে শিল্পাঞ্চলে পাঁচটি চটকল বন্ধ হয়েছে। এক বছরের হিসেব ধরলে সংখ্যাটা আরও বাড়বে। বকেয়া প্রাপ্য আদায়ে চটকলে শ্রমিক আন্দোলন শুরু হলেই নানা বাহানায় চটকলে ঝাঁপ পড়ছে বলে অভিযোগ শ্রমিকদের।
শ্রমিকদের প্রাপ্য নিয়ে অসন্তোষ আছে নানা জায়গায়। দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন শুরু করলেই চটকলে নানা গোলমাল দানা বাঁধতে দেখা যাচ্ছে বলে জানালেন অনেকেই। শ্রমিকদের একাংশের অভিজ্ঞতা, আন্দোলনের পরিবেশ তৈরি হলেই কখনও কাঁচামালের জোগান কমানো হচ্ছে, কখনও যন্ত্রাংশ বদল হচ্ছে না। তার ফলে কাজ কমছে শ্রমিকদের। তার পরের ধাপই হল, কারখানায় ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া। বেকার হয়ে পড়েছেন বহু শ্রমিক। কমবেশি শ্রমিকদের অভিযোগ, দাবি দাওয়া নিয়ে কিছু বলতে গেলেই মিল বন্ধের হুঁশিয়ারি দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
সপ্তাহ দেড়েক আগে শ্যামনগরের ওয়েভারলি জুট মিল খোলার পরে পরেই ফের বন্ধ করে দেওয়ায় শ্রমিক অসন্তোষে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে চটকল চত্বর। দু’টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর চলে অফিসারদের আবাসনে। চটকলের কর্মীরা কোনও রকমে পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচান। চটকল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই শ্রমিকদের বকেয়া মিটিয়ে ফের চালু করা হবে চটকল। কিন্তু তা কবে হবে, সে বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে শ্রমিকদের মধ্যে।
চটকল কর্তৃপক্ষের পাল্টা অভিযোগ অবশ্য ব্যাঙ্কগুলির বিরুদ্ধে। তাঁদের বক্তব্য, ঋণ পেতে নাজেহাল হতে হচ্ছের। ফলে শ্রমিকদের বেতন থেকে অন্যান্য প্রাপ্য বকেয়া পড়ছে।
শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং অবসরকালীন গ্র্যাচুইটি নিয়েই অভিযোগ বেশি। সম্প্রতি আরও একটি চটকল শ্রমিক অসন্তোষে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল। টিটাগড়ের এম্পায়ার জুট মিলের এক শ্রমিক কাজ করার সময়ে দুর্ঘটনায় মাথায় চোট পান।
তাঁকে কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, তাঁর নামে কোনও টাকাই জমা পড়েনি! এই পরিস্থিত্তে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ব্যারাপুরের হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকেরা ওই শ্রমিককে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
তারপরেই বিক্ষোভ ছড়ায় চটকল চত্বরে। শ্রমিকেরা কেউ কেউ কারখানার আবাসনে হামলা চালান। তারপরেই কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধের নোটিস ঝুলিয়ে দেন। শ্রমিকদের অভিযোগ, ইএসআই-এর টাকা শ্রমিকদের থেকে কাটা হলেও কর্তৃপক্ষ জমা করেননি। ফলে শ্রমিকেরা ইএসআই হাসপাতালের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সেই সমস্যা এখনও মেটেনি।
বর্তমানে বন্ধ রয়েছে ভাটপাড়ার রিলায়্যান্স জুট মিল। খড়দহ জুট মিলটিও দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ। বন্ধ টিটাগড়ের কিনিসন জুট মিল। কাঁকিনাড়ার হুকুমচাঁদ মিল দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে সম্প্রতি খুলেছে। এই জুট মিল গত এক বছরে কয়েকবার বন্ধ হয়েছে। সব কটি চটকলেই শ্রমিকের সংখ্যা তিন-চার হাজারের মধ্যে। কারখানা বন্ধ থাকলে স্থায়ী-অস্থায়ী শ্রমিকদের মজুরিও বন্ধসহয়ে পড়ে।
শ্রমিকেরা বলছেন, কারখানা বন্ধ থাকলে তাঁদের পেটে টান পড়ে। সেই সময়ে তাঁরা যে কোনও মূল্যে চটকল চালুর দাবি জানান। কোনও রকমে শুধুমাত্র বকেয়া মিটিয়ে চটকল চালু করা হয়। তখন পিএফ, ইএসআই, গ্র্যাচুইটির দাবি তখন পিছনে চলে যায়। অভিযোগ, সেই দাবি ফের মাথাচাড়া দিলে কোনও না কোনও বাহানায় মিল বন্ধের নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
চটকলগুলির মালিক পক্ষের পাল্টা অভিযোগ, কাজের গতি কমিয়ে উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তার ফলে লোকসান হচ্ছে তাঁদের। জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক তথা শ্রমিক নেতা নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা চটকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। যাতে মিল বন্ধ করে শ্রমিকদের সমস্যায় না ফেলা হয়, তা শ্রম দফতরও দেখছে। কয়েকটি মিলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটানো গিয়েছে।’’
বিজেপির ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের নেতা রমেশ সিংহ বলেন, ‘‘চটকল মালিকেরা শ্রমিকদের বেতনের বাইরে কোনও প্রাপ্য মেটাতেই চাইছেন না। প্রাপ্য চাইলেই চটকলে তালা পড়ছে।’’ আইএনটিইউসি-র নেতা ইরফান খান বলেছেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরেই এটা চলছে। এই ভাবে মিল বন্ধ করে দেওয়াটা মালিকদের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy