প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো জয়নগর-মজিলপুর পুরসভা। অথচ আজ পর্যন্ত তেমন উন্নয়ন চোখে পড়ে না নাগরিকদের।
শহরের ১৪টি ওয়ার্ডের বেশির ভাগ বাসিন্দাই জানেন, প্রার্থীদের কাছ থেকে আবার শুনতে হবে ভোট দিলে আর্সেনিক-মুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা হবে। নিকাশী নালার সংস্কার, যানজট মুক্তির আশ্বাসও মিলবে। কিন্তু কাজ কতটা হবে, তা কেউ জানে না।
বিশেষ করে যাঁরা ঘর-গেরস্থালি সামলান, নিত্য দিনের হ্যাপা পোহাতে হয় যাঁদের, সেই মহিলারাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন, পরিস্থিতি কতটা সঙ্গীন।
৮ নম্বর ওয়ার্ডের বধূ অঞ্জনা বৈদ্য যেমন। তাঁরা কেমন আছেন জানতে চাইতেই মুচকি হেসে তিনি বললেন, ‘‘লোকে বলে, পৃথিবীর তিন ভাগ জল আর এক ভাগ স্থল। অথচ আমরা দেখুন পরিশ্রুত পানীয় জলের জন্য হাহাকার করছি। পাড়ার নলকূপ অনেক দিন ধরে খারাপ হয়ে পড়ে আছে। আজও কেউ সারানোর ব্যবস্থা করছে না। নতুন নলকুপ বসানোরও উদ্যোগ নেই। বাধ্য হয়ে পাশের পাড়া থেকে পানীয় জল আনতে হচ্ছে।’’
বাঁ দিক থেকে, অঞ্জনা বৈদ্য, ডালিয়া বসু, প্রণতি ভট্টাচার্য, রিমা পাল ও সায়ন্তনী বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
পাশের বাড়িতেই থাকেন সায়ন্তনী বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকম পাশ করে তিনি বসে আছেন। তাঁর আক্ষেপ, নিত্য প্রয়োজনে কলকাতায় যাওয়ার জন্য সারা দিনে মাত্র কয়েকটি বাস ইদানীং চলাচল করছে। তা-ও আবার মাঝে-মধ্যে অনিশ্চিত। পুর-নাগরিকদের এক মাত্র ভরসা ট্রেন। কিন্তু ট্রেনে যা ভিড়, তাতে চড়া দুষ্কর। এমনকী মহিলা কামরাতেও ঠাঁই মেলে না বলে আক্ষেপ তাঁর।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রবীণা প্রণতি ভট্টাচার্যের কাছে বড় সমস্যা নিকাশি। তাঁর খেদ, ‘‘এলাকার নালাগুলোয় শেষ কবে ব্লিচিং পাউডার দেওয়া হয়েছে, মনে পড়ে না। ওই নালা এখন মশার আঁতুড়। এলাকার সকলে তিতিবিরক্ত। দিনের বেলাতেও মশারি টাঙাতে হয়।’’ তা ছাড়া, নর্দমার বিকট গন্ধেও এলাকার মানুষ অস্থির। পাশেই রিনা পালের বাড়ি। তিনি হাত তুলে দেখান, ‘‘ওই দেখুন, আমাদের বাড়ির পাশেই বাজারের জঞ্জাল ফেলার ভ্যাট হয়েছে। এমন জনবহুল এলাকায় এটা কি মেনে নেওয়া যায়? কিন্তু মেনে নিতে হচ্ছে।’’
পুরসভা উদ্যোগী হয়ে আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা করে দিয়েছে। কিন্তু তা দেখাশোনা করার লোক নেই। তাই যেখানে-সেখানে বাজারের জঞ্জাল ফেলা হচ্ছে বলে রিনাদেবীর অভিযোগ। নিরাপত্তা নিয়েও খুবই চিন্তিত তিনি। তাঁর অভিযোগ, সন্ধ্যার পরে বহিরাগত কিছু দুষ্কৃতী এলাকা দখল করে। মাঝে-মধ্যেই মদ্যপদের হাতে মহিলাদের হেনস্থা হতে হয়। তাই সূর্য ডুবলে মহিলারা বাইরে বেরোতে সাহস পান না।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের বধূ ডালিয়া বসু আবার বেশি সরব কিছু রাস্তার হাল নিয়ে। যার জন্য বিভিন্ন মোড়ে যানজট তো হচ্ছেই, মাঝে-মধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটছে। কোন প্রার্থী নিদির্ষ্ট করে এই সব সমস্যার সুরাহার কথা বলেন, ওঁরা নজর রাখছেন সেই দিকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy