ভীষ্মদেব নস্কর
নোট বদলের লাইনে দাঁড়িয়ে মারা গিয়েছিলেন রায়দিঘির কঙ্কনদিঘি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ভীষ্মদেব নস্কর। কিন্তু এখন নোটবন্দির প্রায় সমস্ত টাকাই ফিরে এসেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে। তা হলে কেন তাঁদের বাড়ির একমাত্র রোজগেরেকে মরতে হল—এখন সেই প্রশ্ন তুলেছেন ভীষ্মদেববাবুর পরিবার।
নোট বন্দির পর কেটে গিয়েছে দু’বছর। কার্যত কোনও রোজগার নেই। একমাত্র রোজগেরের মৃত্যুর পর এখন নুন আনতে পান্তা ফুরোয় পরিবারটির। শিক্ষকের মৃত্যু পরে তাঁর ছেলে পঙ্কজ নস্করকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। আজও সেই প্রতিশ্রুতির পিছনেই ঘুরছেন পঙ্কজবাবু।
২০১৬ সালের ২ ডিসেম্বর একটি রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কে নোট বদলের লাইনে দাঁড়িয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন ভীষ্মদেববাবু।
রাজ্য সরকারের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে আশা জেগেছিল পঙ্কজের পরিবারেরও। কিন্তু এখনও চাকরি না মেলায় দিনমজুরের কাজ করে দিন কাটছে পঙ্কজের।
ভীষ্মদেববাবুর তিন ছেলে। তিনি পঙ্কজের সঙ্গে থাকতেন। টালির চাল মাটির দেওয়ালের কুঁড়ে ঘরে ছেলে-বৌমা ও তিন নাতি নাতনি নিয়ে সংসার ছিল ভীষ্মদেববাবুর। ভীষ্মদেববাবুর পেনশনের টাকাতেই সংসার চলত। তিনি মারা যাওয়ার পর প্রায় অনাহারে দিন কাটছে ওই পরিবারটির। পঙ্কজের বড় ও ছোট কলেজে পড়েন। হেঁটে কলেজ যান তাঁরা। ছেলে সামনের বছর মাধ্যমিক দেবে। পঙ্কজের স্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের যা রোজগার, তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। আধপেটা খেয়ে থাকতে হয়। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।’’
বছর আটচল্লিশের পঙ্কজ স্নাতক। রাজ্য সরকারের প্রতিশ্রুতি মেলার পরেই তড়িঘড়ি বাবার মৃত্যুর শংসাপত্র থেকে শুরু করে তাঁর নিজের সমস্ত নথিপত্র নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন পঙ্কজ। কিন্তু কোথায় কী?
মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়ি থেকে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দরবারেও হাজির হয়েছেন তিনি। কিন্তু কোনও লাভই হয়নি বলে পঙ্কজের অভিযোগ। জেলা প্রশাসনের কাছেও গিয়েছিলেন বেশ কয়েকবার।
এ বার তাঁর আশাও ফিকে হয়ে পড়ছে। হতাশ গলায় পঙ্কজ বলেন, ‘‘জানি না চাকরি হবে কিনা। তবে মুখ্যমন্ত্রীর উপর ভরসা আছে। তিনি যখন কথা দিয়েছেন নিশ্চয় কিছু একটা ব্যবস্থা হবেই।’’
এখন পঙ্কজের প্রশ্ন, ‘‘যে সিদ্ধান্তের জন্য বাবাকে মরতে হল, তাতে আখেরে লাভ হল কার?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy