নোটিস: ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে হাসনাবাদের ব্যাঙ্কে। নিজস্ব চিত্র
প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু সোমবার অ্যাডমিট কার্ড তুলতে পারলেন না পরীক্ষার্থীরা। কারণ, রবিবার রাত থেকে বসিরহাটে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে ডাকঘরের পরিষেবাও। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে গিয়েও ফিরতে হচ্ছে অনেককে। সব মিলিয়ে নাজেহাল দুই ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ।
এ দিন হাসনাবাদের বাইলানি বাজারের এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, ব্যাঙ্কের বাইরে নোটিস বোর্ড ঝোলানো হয়েছে। তাতে লেখা, ‘নেট বন্ধ তাই ব্যাঙ্কিং পরিষেবাও বন্ধ।’
এ বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সরকারি নির্দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কাজের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে অনলাইনের মাধ্যমে কাজের কিছুটা সমস্যা হলেও সরকারি অফিসগুলিতে অন্য কাজ স্বাভাবিক ভাবেই হচ্ছে।’’
উত্তর ২৪ পরগনার খেজুরবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা লাল্টু মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি চোখের অপারেশন করাবেন বলে এই ব্যাঙ্কেই টাকা তুলতে এসেছিলেন। খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। এখন কী ভাবে চোখের অপারেশন করাবেন, তা নিয়ে চিন্তায়। লাল্টু বলেন, ‘‘সোমবার দুপুরে নার্সিংহোমে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল। সে জন্য ১০ হাজার টাকা দরকার। নেট বন্ধ, তাই এখান থেকে টাকা তুলতে পারলাম না। হাসনাবাদ বা বারাসতে গিয়ে মূল ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার আজ আর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া হল না।’’
শুধু লাল্টু একা নন, গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে এসে এমন অবস্থা গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের। অনেকেই টাকা তুলতে এসে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন।
বাইলানি বাজারের এই গ্রাহকসেবা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিবাজী দাস বলেন, ‘‘রবিবার সন্ধ্যা থেকে নেট পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে রবিবার প্রায় কুড়ি জন গ্রাহককে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হই। সোমবার দুপুর পর্যন্ত নেট পরিষেবা স্বাভাবিক না হওয়ায় প্রায় ৬০-৭০ জন গ্রাহক বিভিন্ন কাজে এসে ফিরে গিয়েছেন।’’
মূল ব্যাঙ্কে যে সমস্ত প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ যেতে পারেন না, তাঁদের সুবিধার্থে প্রত্যেকটি পঞ্চায়েত এলাকায় একটি করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহকসেবা কেন্দ্র রয়েছে। এ দিন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের যে সব প্রতিনিধি বিভিন্ন গ্রামের সাধারণ মানুষকে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দিয়ে থাকেন, তাঁরাও অনেকে কোনও কাজ করতে পারেননি। মূল ব্যাঙ্কের কাজ হলেও তা ধীরগতিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ মানুষের। সে জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
একই অবস্থা বসিরহাটের বিভিন্ন ডাকঘরে। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা ছিল না। ফলে পোস্ট অফিসে আসা অনেক মানুষকেই কাজ না মিটিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। সোমবার সারা দিন বিভিন্ন সাইবার ক্যাফেগুলিতেও ইন্টারনেটের সমস্যা হয়েছে। বসিরহাটের এক সাইবার ক্যাফের মালিক শুভজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘অনেক ছাত্রছাত্রী কলেজের পরীক্ষায় বসার জন্য অ্যাডমিট কার্ড তুলতে এসেছিলেন। কিন্তু ইন্টারনেট না থাকায় তাঁদেরকে ফিরিয়ে দিলাম।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন স্টাফ সিলেকশনের আবেদনপত্র পূরণের কাজ চলছে। তা-ও বন্ধ। এ ছাড়া, বিভিন্ন বিল জমা দেওয়ার কাজ করতে পারছি না। সব মিলিয়ে একদিনেই অনেক ক্ষতি হল ব্যবসার।’’
গত কয়েক দিন ধরে নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, মিছিল, রাস্তা অবরোধ হচ্ছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবং নাগরিক পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাশীপুর থানার পুলিশ সোমবার থেকে থানা এলাকায় মাইকে প্রচার শুরু করে। কোথাও কোনও ঘটনা ঘটলে মানুষ যেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন—এমনটাই বলা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।
সোমবার সকালে ভাঙড়ের পোলেরহাটে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান মানুষ জন। ঘণ্টাখানেক ভাঙড়-লাউহাটি রোড অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সন্ধ্যায় জীবনতলায় ইমাম-মোয়াজ্জিন-সহ এলাকার বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে শান্তি বৈঠক করেন বিধায়ক সওকত মোল্লা, জীবনতলা থানার ওসি সুভাষ ঘোষ-সহ অন্য আধিকারিকেরা।
সকাল ১১টা নাগাদ ডাউন লক্ষ্মীকান্তপুর ট্রেন বহড়ু স্টেশনে ঢোকে। সেখানে কিছু লোক ওভারহেড লাইনে কলাপাতা ফেলে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। ঢিল-পাটকেল ছোড়ে। তবে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে এসে পড়ায় সরেও পড়ে দ্রুত। কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। দক্ষিণ বারাসত ও হোগল স্টেশনের মাঝেও ওভারহেড তারে কলাপাতা ফেলে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল আধ ঘণ্টা। আটকে পড়েছিল একটি ট্রেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy