—প্রতীকী চিত্র।
বহু বছর ধরে স্বরূপনগর ব্লকের মানুষের দাবি, দেশের রেল মানচিত্রে যুক্ত করা হোক এই এলাকাকে। রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলে তাঁদের যাতায়াত সমস্যার সুরাহা হবে। এ বার রেল কর্তৃপক্ষ মছলন্দপুর থেকে স্বরূপনগর পর্যন্ত লাইন তৈরি করতে পদক্ষেপ করেছে। পূর্বরেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘‘মছলন্দপুর থেকে স্বরূপনগর পর্যন্ত রেলপথ তৈরির জন্য সমীক্ষা এবং মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে।’’ রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এটি চূড়ান্ত সমীক্ষা এবং মাটি পরীক্ষার কাজ। রেলপথটি ১৪.৩০ কিলোমিটার। সমীক্ষার কাজ করছে রেল থেকে বরাত পাওয়া একটি সংস্থা। বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরও বলেন, ‘‘আমি দীর্ঘ দিন ধরেই মছলন্দপুর থেকে স্বরূপনগর পর্যন্ত রেলপথ তৈরির জন্য রেলমন্ত্রী থেকে সংশ্লিষ্ট সব মহলে জানিয়ে আসছি। শুনেছি এ বার চূড়ান্ত সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি, শীঘ্রই রেলপথ তৈরির কাজ শুরু হবে।’’
প্রতি লোকসভা ভোটের আগে স্বরূপনগর, বাদুড়িয়ার মানুষ রেলপথের প্রতিশ্রুতি পান নানা রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে। কিন্তু রেলপথের স্বপ্ন এত দিন অধরাই থেকে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মছলন্দপুর-স্বরূপনগর রেলপথ তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন। আশায় বুক বেঁধেছিলেন স্বরূপনগর-বাদুড়িয়া ব্লকের মানুষ। কিন্তু প্রাথমিক সমীক্ষা হওয়ার পরে সেই কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
জেলা পরিষদের সদস্য, তৃণমূলের অজিত সাহার দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন স্বরূপনগর-মছলন্দপুর রেলপথ তৈরির কথা ঘোষণার পরে এলাকায় জমি মাপজোক করার কাজ শেষ হয়েছিল। কোন এলাকা দিয়ে লাইন যাবে, তা-ও ঠিক করা হয়েছিল। রেলপাড়ের কিছু মানুষকে অন্যত্র পুর্নবাসন দেওয়া হয়েছিল। রেলপথ তৈরির কাজও শুরু হয়েছিল। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পরবর্তী সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী না থাকায় এই কাজ আর এগিয়ে নিয়ে যায়নি কেন্দ্রীয় সরকার।’’
এত দিন রেলপথের কথা ভুলতেই বসেছিলেন স্বরূপনগর ও বাদুড়িয়া ব্লকের মানুষ। এ বার আবার নতুন করে মছলন্দপুর-স্বরূপনগর রেলপথ তৈরি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। গত বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। সেখানে বলা হয়েছিল, রাজ্যে মোট ৬১টি রেলপ্রকল্প শুরু না হওয়া বা থমকে থাকার কারণ হল: জমি। এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় জমি জোগাড়ের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী। ওই ৬১টি প্রকল্পের মধ্যে মছলন্দপুর-স্বরূপনগর রেলপথও আছে।
প্রায় ১৫ কিলোমিটার রেলপথ তৈরির কথা। গত বছর রেলের কর্তা এবং শান্তনু ঠাকুর রেলপথ তৈরির এলাকা সরেজমিনে দেখতে গিয়েছিলেন। শান্তনু তখন তিনি জানিয়েছিলেন রেলপথ তৈরির জন্য যমুনা নদী বরাবর জমি আছে। রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ করে দিলে বা রেলকে জমি অধিগ্রহণের অনুমতি দিলে কেন্দ্র দ্রুত রেললাইন তৈরির কাজ শুরু করবে।
স্বরূপনগর, বাদুড়িয়া ব্লকের মানুষ চাইছেন, রেলপথ তৈরি হলে সহযোগিতা করতে। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পেলে তাঁরা স্বেচ্ছায় জমি ছাড়তেও রাজি আছেন বলে অনেক চাষি জানালেন। মানুষ চাইছেন, জমিজট কাটিয়ে দ্রুত রেলপথ তৈরির কাজ শুরু হোক। বাদুড়িয়ার বাসিন্দারা জানালেন, রোজ যাতায়াতে প্রচুর খরচ হয়ে যায়। বাদুড়িয়া থেকে অটো-ট্রেকার-বাস ধরে মছলন্দপুর স্টেশনে এসে ট্রেন ধরতে হয়। অনেক রাস্তার অবস্থা ভাল নয়। যানচালক ও যাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে। তাঁরা চান, কেন্দ্র ও রাজ্য দু’পক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ করুক রেলপথ তৈরি করতে।
স্বরূপনগরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘দু’বার টোটো বদলে মছলন্দপুর স্টেশনে আসতে হয়। ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। সময়ও বেশি লাগে। দুই সরকারেরই উচিত, সদিচ্ছা নিয়ে পদক্ষেপ করা।’’ অনেকে জানালেন, কলকাতা থেকে ফিরতে রাত হলে মছলন্দপুর থেকে বাস পাওয়া যায় না। এখানকার আনাজ বিখ্যাত। ভিন্ রাজ্য ও অন্য জেলায় সেই আনাজ যায়। ট্রেনপথ থাকলে পরিবহণ খরচ কমবে। যাতায়াত সহজ হবে। কোনও কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকলে ভোগান্তি বাড়ে। রেল চালু হলে সেই দুর্ভোগও কমবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy