জট: হাসপাতালে ঢোকার মুখের দশা। নিজস্ব চিত্র
৬ অগস্টের ভোর এখনও ভুলতে পারেন না সরিষার সাকিলা। সদ্যোজাত সন্তানকে পাশে নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন। চার দিক থেকে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার শুনে ঘুম ভাঙে। দেখেন, ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে প্রসূতি বিভাগ। ওয়ার্ডের আলো নিভে গিয়েছে ততক্ষণে। কান্না আর আর্তনাদ ভেসে আসছে চতুর্দিক থেকে। কেউ চেঁচাচ্ছে ‘আগুন আগুন’ বলে।
প্রাণ বাঁচাতে শিশুকে কোলে নিয়ে হাতড়ে হাতড়ে নীচে নামার সিঁড়ির মুখে পৌঁছন সাকিলা। কিন্তু সেখানে তখন চলছে হুড়োহুড়ি। শিশুকে কোলে নিয়ে দুর্বল শরীরে এঁটে উঠতে পারছিলেন না সাকিলা। কোনও মতে নামেন বেশ খানিকক্ষণ পরে। কিন্তু ওই হাসপাতালে আর ফিরে গিয়ে ভর্তি হননি।
ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে সে দিন শর্টসার্কিট থেকেই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল। সাকিলা বলেন, ‘‘বাচ্চাকে নিয়ে কী ভাবে যে সে দিনবেঁচে গিয়েছি, সে শুধু আমিই জানি।’’ ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে দু’টি ভবন রয়েছে। একটি তিনতলা পুরনো ভবন ও কিছুটা দুরে নতুন পাঁচতলা ভবন। পুরনো ভবনে রয়েছে পুরুষ ও মহিলাদের মেডিসিন বিভাগ, শিশু বিভাগ, সিসিইউ, ও এসএনসিইউ। নতুন ভবনে রয়েছে গর্ভবতী ও প্রসূতি বিভাগ, অস্থি বিভাগ এবং আরও কিছু দফতর। পুরোনো হাসপাতাল ভবনের ভিতরে অগ্নি নির্বাপণের জন্য জলের পাইপ লাইনের কাজ এখনও শেষ হয়নি। ভিতরে বিদ্যুৎ লাইনের তারগুলি যে ভাবে রয়েছে, যে কোনও দিন শর্টসার্কিট হয়ে আগুন ধরে যেতে পারে বলে রোগীর পরিবারের লোকজনের আশঙ্কা। কোনও ভাবে আগুন লেগে গেলে আপৎকালীন পরিষেবাও তেমন কিছু চোখে পড়ে না। প্রশিক্ষিত কর্মী নেই। এ ছাড়াও, ওই ভবনের নীচের তলায় একটি ঘরে ডাঁই করে ফেলা রয়েছে আবর্জনা। কোনও ভাবে আগুন লাগলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।
নতুন ভবনের ভিতরে আবার জলের লাইন বা অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে প্রশিক্ষিত কর্মী যথেষ্ট নেই বলে অভিযোগ। ফলে আগুন লাগলে সেই দমকলের উপরেই ভরসা রাখতে হবে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দুই ভবনে কোনওটিতে আগুন লাগলে সব থেকে বড় সমস্যা দমকলের গাড়ি হাসপাতাল চত্বরে ঢোকা। পুরনো ভবনের যাওয়ার দু’টি গেট। ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে নেমে ওই দুই গেট। কিন্তু দিনের পর দিন ওই যাতায়াতের রাস্তার দু’ধারে গজিয়ে উঠেছে বহু দোকান। হাসপাতালের সামনে রাখা থাকে অটো, টোটো মোটর ভ্যান। ফলে রাস্তা আরও সরু হয়ে গিয়েছে।
একই অবস্থা নতুন ভবনে ঢোকার মুখেও। ৬ অগস্ট ওই ভবনে অগ্নিকাণ্ডের পরে ঢোকার রাস্তার দু’ধারে দোকানগুলি প্রশাসন সরিয়ে দিলেও বর্তমানে রোগী আনার জন্য নানা গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে রাস্তা অনেকটাই অপরিসর এখানে। নতুন ভবনের ঢোকার গেটটি ছোট। গাড়ি ঘোরানোর জায়গা কম।
এ বিষয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক দেবাশিস রায় বলেন, ‘‘পুরনো ভবনের ভিতরে জলের লাইনের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। সমস্ত নথি জমা দেওয়াও হয়ে গিয়েছে। দমকলকেন্দ্রের শংসাপত্র শীঘ্রই পেয়ে যাব। আর যাতায়াতের রাস্তা দখলের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy