বেআইনি ইটভাটা বন্ধের প্রক্রিয়া। —নিজস্ব চিত্র।
জাতীয় পরিবেশ আদালত (পূর্বাঞ্চল) সম্প্রতি বসিরহাট মহকুমার ২০৮টি বেআইনি ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ জারি করেছিল। রবিবার থেকে সেই কাজে নামল পুলিশ এবং রাজস্ব দফতর। এ দিন ১০টি বেআইনি ইটভাটায় বন্ধের সরকারি বিজ্ঞপ্তি সেঁটে দেওয়া হয়। তবে, এ নিয়ে কোথাও কোথাও শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেলেও কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেনি। তবে, ওই সব ইটভাটার মধ্যে কয়েকটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আদালতের রায় মানতে তাঁরা বাধ্য। কিন্তু যেহেতু ভাটার সঙ্গে বহু মানুষের রুটিরুজি জড়িত, তাই পুরো বিষয়টি তাঁদের রাজ্য স্তরের সংগঠনকে জানানো হয়েছে।
বসিরহাটের মহকুমাশাসক শেখর সেন বলেন, ‘‘আগেই বেআইনি ইটভাটার মালিকদের ভাটা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। এ বারে ভাটা বন্ধের কাজ শুরু হল। প্রথম দিন ১০টি ভাটায় বন্ধের নোটিস দেওয়া হয়। আগামী দিনেও এই কাজ চলবে।’’
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় পরিবেশ আদালতে (পূর্বাঞ্চল) পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত একটি মামলায় বলা হয় রাজ্যে বেশ কিছু ইটভাটা সরকারি নিয়ম না মেনেই তৈরি হয়েছে। সেখানে নদীর বাঁধ কেটে পরিবেশের ক্ষতি করা হয়েছে। বিশেষ করে ২০০০ সালের পর তৈরি ভাটাগুলিই বড় রকম পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়। ওই মামলাতেই বসিরহাটের ২০৮টি ইটভাটাকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়।
যে ২০৮টি ইটভাটাকে বন্ধের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে মিনাখাঁয় ৫৭টি, বাদুড়িয়ায় ৫২টি, হাড়োয়ায় ২১টি, সন্দেশখালি-১ ব্লকের ২২টি, সন্দেশখালি-২ ব্লকের ৭টি, হাসনাবাদের ২৭টি, হিঙ্গলগঞ্জের ১৫টি, স্বরূপনগরের ৯টি, বসিরহাট-১ ব্লকের ৩৫টি এবং বসিরহাট-২ ব্লকের ২০টি। এর মধ্যে এ দিন মূলত বসিরহাটের দু’টি ব্লকেরই ১০ ইটভাটায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। আদালতের নির্দেশ জানার পরে অনেক জায়গাতেই আগে থেকে কাজ কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
সকালে রাজস্ব দফতরের আধিকারিক সাধনচন্দ্র রায় এবং বাপ্পা মণ্ডলের সঙ্গে পুলিশের একটি দল প্রথমে যায় বসিরহাটের ইছামতী নদীর ধারে পানিতর গ্রামে। সেখানে সাতটি ভাটার চিমনিতে সরকারি নির্দেশের প্রতিলিপি সাঁটিয়ে দেওয়া হয়। এরপর দলটি বসিরহাটের সংগ্রামপুরে আরও কয়েকটি ভাটাতেও বন্ধের বিজ্ঞপ্তি লাগায়। রাজস্ব আধিকারিক সাধনবাবু বলেন, ‘‘২০০০ সালের পর তৈরি ইটভাটাগুলির কোনও বৈধ নথি নেই। তাই আদালতের নির্দেশে ভাটাগুলি বন্ধের নোটিস লাগানো হল। ভাটাগুলি যাতে আর খোলা না হয়, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা হবে।’’
সংগ্রামপুরের একটি ইটভাটা-মালিক সংগঠনের সম্পাদক রুহুল আমিন বলেন, ‘‘আদালতের রায় আমরা মানতে বাধ্য। তবে, এর ফলে ভাটার ব্যবসায় যুক্ত হাজার হাজার মালিক এবং শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পুরো বিষয়টি বেঙ্গল ব্রিক ফিল্ড অসোসিয়েশনকে জানানো হয়েছে। নতুন ভাটা-মালিকদের অনেকেই সব নথি তৈরি করে উঠতে পারেনি। এ নিয়ে রাজ্য কমিটি চিন্তাভাবনা করছে। মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হবে।’’ একই রকম ভাবে সমস্যার কথা শুনিয়েছেন ভাটা-মালিক প্রণব মণ্ডল, অরিন্দম গোলদাররা। শ্রমিকদের ক্ষোভ, এর ফলে, তাঁদের জীবিকা সঙ্কটে পড়ল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy