বাসন্তীর সোনাখালিতে এ ভাবেই রমরমিয়ে চলছে ইটভাটা। নিজস্ব চিত্র।
সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় বছরের পর বছর ধরে লাইসেন্স ছাড়াই চলছে বেআইনি ইটভাটা। আর এর বেশির ভাগটাই গজিয়ে উঠছে সুন্দরবনের কোনও না কোনও নদীর পাড়ে। এই সব ইটভাটা যে রমরমিয়ে চলছে তা বিলক্ষণ জানেন প্রশাসনের আধিকারিকেরা। পুলিশ বা রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছেও বিষয়টি অজানা নয়। কিন্তু কোনও পক্ষ থেকেই এই বেআইনি ইটভাটা বন্ধ করার কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তবে সম্প্রতি বেআইনি ইটভাটা বন্ধ করার জন্য এখন পরিবেশ আদালত রায় দিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দিনের পর দিন বেড়েই চলছে ইট ভাটার সংখ্যা। পরিবেশ আদালতের রায়ের পরও কোনও হেলদোল নেই প্রশাসনের। জেলার ভূমি ও রাজস্ব দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সুন্দরবন এলাকা-সহ জেলায় ১৮৮ বেশি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ইট ভাটার লাইসেন্স আছে।
বাসন্তীর সোনাখালি এক ইটভাটার শ্রমিক বলেন, ‘‘সাধারণত নদীর পলি সংগ্রহ করে ভাটায় ইট তৈরি হয়। এ জন্য অনেক সময় নদীর ধারে গভীর গর্ত করা হয়। যেখানে জোয়ারের সময় নদী প্রাকৃতিক নিয়মে পলি বয়ে এনে গর্ত ভর্তি করে। ভাটার সময় সেই পলি সংগ্রহ করে ইট তৈরির কাজে লাগানো হয়।’’ অভিযোগ, এই ভাবে ইট ভাটার মালিকরা নদীর পলি সংগ্রহ করে ইট তৈরির কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছেন। অন্য দিকে, সরকারি নজরদারি না থাকার কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। পরিবেশ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ভাবে নদী হারিয়ে ফেলছে গতিপথ।
শুধু নদী তার গতিপথ হারাচ্ছে তাই নয়, এর সঙ্গে বাড়ছে দূষণ। এই সমস্ত ইটভাটায় জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয় প্লাস্টিক জাতীয় সামগ্রী, গাড়ির টায়ার-সহ অন্যান্য জিনিস। ইটভাটার চিমনি থেকে বের হওয়া ধোঁয়া থেকে ক্ষতি হচ্ছে এলাকার চাষবাসের। কালো ধোঁয়ায় ও ছাইয়ের গুঁড়োতে ভরে যাচ্ছে ফসলের খেত। ইটভাটার কারণে অনেক ক্ষেত্রে দুই তিন ফসলি জমি পরিণত হচ্ছে পতিত জমিতে। বাসন্তীর এক চাষ নিজুমুদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘‘এলাকায় ইটভাটার কারণে মার খাচ্ছে চাষবাস। চিমনির গরম ছাই উড়ে এসে জমিতে পড়ায় ক্ষতি হচ্ছে ফসলের। শুধু ধোঁয়ার কারণে আম গাছের মুকুলও মরে যাচ্ছে। আমের ফলনও ভাল হচ্ছে না। প্রশাসন সব জেনেও ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কিছু বলতে গেলেই হুমকি আসে, জমি বেচে দাও।’’
এই সমস্ত ইটভাটা থেকে কতটা দূষণ ছড়াচ্ছে সুন্দরবন এলাকায় তা জানার কোনও ব্যবস্থা না থাকায় দূষণের মাত্রাও ঠিক ভাবে বোঝা যায় না। চিমনির ছাই উড়ে এসে নদীর সঙ্গে মিশে ধ্বংস করে দিচ্ছে ম্যানগ্রোভ জঙ্গলকে।
এ বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক (এল আর) সোমনাথ দে বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মেনে জেলার প্রায় সব ইটভাটাকে বন্ধের নোটিস পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইটভাটার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। অবিলম্বে যদি ইটভাটাগুলি বন্ধ না করা হয় তা হলে পুরভোটের পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy