হাসপাতালে বহাল তবিয়তে। শনিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
কেউ খবরটা দেখেছেন টেলিভিশনের পর্দায়। কেউ জেনেছেন খবরের কাগজ পড়ে। জেনেছেন, মায়ের ঠাঁই এখন বসিরহাট জেলা হাসপাতালের বেড।
বনগাঁর আরামডাঙা থেকে অবলা আচার্য নামে নবোতিপর ওই বৃদ্ধাকে গাড়িতে তুলে বসিরহাটের মার্টিনবার্ন রোডের এক ধারে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিল তাঁর এক ছেলের ভাড়া করা দুষ্কৃতীরা। পুলিশ-প্রশাসন ও স্থানীয় মানুষের উদ্যোগে বৃদ্ধা ঠাঁই পান হাসপাতালে।
অবলাদেবীর সাত সন্তান। ছেলেমেয়েদের কারও কারও দাবি, বুধবার সংবাদমাধ্যম মারফত সেই খবর জেনেছেন তাঁরা। শনিবার বসিরহাটে আসেন ছেলে জয়গোপাল। সে বিমাকর্মী। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মায়ের এই অবস্থার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে তাঁরা। মাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়েও যেতে চায়। যদিও মায়ের দেখা মেলেনি। প্রশাসনের কর্তারা জানিয়ে দেন, এই নিয়ে পুলিশ একটি মামলা রুজু করেছে। তদন্ত চলছে। সেই মতোই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
ছেলেরা তাঁকে আনতে এসেছে শুনেও অবলাদেবী অবশ্য ফিরতে চাননি হাসপাতাল থেকে। প্রচুর সম্পত্তির মালকিন ওই বৃদ্ধা এ দিন বলেন, ‘‘ধুমধাম করে ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। ভেবেছিলাম শেষ জীবনটা ওরা আমাকে ভাল ভাবে যত্ন করবে। কিন্তু আমাকে নিয়ে যে ভাবে টানা-হেঁচড়া করা হচ্ছে, তাতে আর ওদের সংসারে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে নেই।’’ বৃদ্ধা জানিয়েছেন, জীবনের শেষ ক’টা দিন কোনও হোমে কিংবা হাসপাতালেই কাটিয়ে দিতে চান।
হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদার জানিয়েছেন, চিকিৎসার ত্রুটি রাখছেন না তাঁরা। কিন্তু সন্তানদের ব্যবহারে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন অবলাদেবী।
মহকুমাশাসক নীতেশ ঢালি বলেন, ‘‘বৃদ্ধাকেই ঠিক করতে হবে, তিনি কোথায় থাকবেন। যদি তিনি সন্তানদের কাছে না থাকতে চান, তা হলে কোনও হোমের ব্যবস্থা করা হবে।’’
বৃদ্ধার ছোট ছেলে জয়গোপাল আচার্য এবং নাতি পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় বলে, ‘‘যে ঘটনাটা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। সব ভুলে আমরা ওঁকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’’ অবলাদেবীর বড় ছেলের স্ত্রী তাপসী আচার্য এবং নাতবৌ মুনমুন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘বাড়ির প্রায় সকলেই অসুস্থ। তাই ওঁকে রাখতে না পেরে বড় রকম ভুল হয়ে গিয়েছে। এ জন্য আমরা সকলেই ক্ষমা চাইছি।’’
এ সব শুনে বৃদ্ধা চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন, ‘‘পুলিশের ঠেলায় পড়ে এখন সকলে ভুল স্বীকার করছে। বলতে পারেন, সাত সন্তানের মধ্যে কে আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যাবে? ক’দিন যেতে না যেতে যদি আবার কোথাও ফেলে রেখে যায়? তার থেকে এই বেশ ভাল আছি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy